Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
পুরুষরা পদকহীন থেকে গেলেন

নরসিংহদের লজ্জা শেষ বেলায় মুছতে পারলেন না যোগেশ্বর

পাঁচ বার হাঁটুতে অস্ত্রোপচার হয়েছে। কাঁধে চোটের সমস্যা ভোগানোও আছে। বয়স পেরিয়েছে তেত্রিশ। অলিম্পিক্সে বদল হয়েছে ইভেন্ট। ৬০ থেকে তা হয়েছে এখন ৬৫ কেজি। যা যে কোনও কুস্তিগিরের কাছে সমস্যার।

প্রথম রাউন্ডেই হারলেন যোগেশ্বর। রবিবার রিওতে। ছবি: রয়টার্স

প্রথম রাউন্ডেই হারলেন যোগেশ্বর। রবিবার রিওতে। ছবি: রয়টার্স

রতন চক্রবর্তী
রিও দে জেনেইরো শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৪৪
Share: Save:

পাঁচ বার হাঁটুতে অস্ত্রোপচার হয়েছে। কাঁধে চোটের সমস্যা ভোগানোও আছে। বয়স পেরিয়েছে তেত্রিশ। অলিম্পিক্সে বদল হয়েছে ইভেন্ট। ৬০ থেকে তা হয়েছে এখন ৬৫ কেজি। যা যে কোনও কুস্তিগিরের কাছে সমস্যার। এ সব প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও যোগেশ্বর দত্তের হাতে অন্তত ব্রোঞ্জ পদক উঠলেও উঠতে পারে এই আশায় ভোর ভোর রিও-র কুস্তির ম্যাটের আশে পাশে উপচে পড়েছিল ভারতীয় মিডিয়া। যদি দুই থেকে ভারতের পদক সংখ্যা তিন হয়।

লন্ডন অলিম্পিক্সে সুশীল কুমারের রুপোর পাশে, যোগেশ্বরের ব্রোঞ্জ ছিল। চার বছর পর সেটা আর ধরে রাখতে পারলেন না। রিওতে ভারতের পদকের হাহাকার মেটাতে পারলেন না। শূন্য হাতেই ফিরতে হচ্ছে যোগেশ্বর দত্তকে। মঙ্গোলিয়ার দু’বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন মান্দাখারানের কাছে লজ্জাজনক হেরে। একটা পয়েন্টও পেলেন না। হারলেন ০-৩।

কোয়ালিফাইং রাউন্ডে হেরে গেলেও পরে ব্রোঞ্জ জেতার একটা সুযোগ পেতে পারতেন যোগেশ্বর। কুস্তির নিয়মানুযায়ী, যদি তাঁর প্রথম গেমের প্রতিপক্ষ ফাইনালে উঠতে পারতেন। কিন্তু সেটাও হল না। কোয়ার্টার ফাইনালেই মঙ্গোলিয়ার কুস্তিগির রাশিয়ার কাছে ০-৩ হেরে যাওয়ায়। লন্ডনে যে সুযোগটা কাজে লাগিয়ে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন দিল্লির ছেলে। এ বার সেটা না পাওয়ায় তাঁর ভাগ্যে শিকে ছিঁড়ল না। হতাশ যোগেশ্বর এর পর যেটা স্বাভাবিক সেটাই করলেন। এটা তাঁর চার নম্বর অলিম্পিক্স। ঘোষণা করে দিলেন, ‘‘আর আমি অলিম্পিক্সে নামব না।’’

শ্যুটিং, তিরন্দাজির মতো কুস্তিতেও পদক আশা করেছিলেন আইওএ এবং সাইয়ের কর্তারা। যোগেশ্বরের গত বারের অলিম্পিক্সে পারফরম্যান্সের পাশাপাশি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ জিতে যে আশা আরও বাড়িয়েছিলেন নরসিংহ যাদব। কিন্তু কুস্তি থেকে দ্বিতীয় পদক তো এলই না, উল্টে নরসিংহের কেলেঙ্কারি ভারতকে লজ্জায় ফেলে দিল। চার বছরের সাসপেনশনে। তবে স্বস্তি এটাই যে, শনিবার সকালেই রিও ছেড়ে গিয়েছেন বিতর্কিত এই কুস্তিগির। না হলে তাঁকে যে ভাবে বিদেশের মিডিয়া খুঁজছে তাতে বিশ্বমঞ্চে ভারতের লজ্জা আরও বাড়তে পারত।

এ বছর শ্যুটিং এর পর সবচেয়ে বেশি টাকা কেন্দ্রীয় সরকার খরচ করেছিল কুস্তির জন্য। প্রায় বত্রিশ কোটি টাকা। মোট আট জন পালোয়ান এসেছিলেন রিওতে। তাদের মধ্যে সন্দীপ তোমর পঞ্চাশে শেষ করে ফিরে গেলেন। তুলনায় চোট পেয়ে যাওয়া বিনেশ (১০), ববিতা কুমারীর (১৩) পারফরম্যান্স অনেক ভাল। তাও তো পদক থেকে বহুদূরে থেকে গেলেন ওঁরা। ভাগ্যিস কুস্তিতে ভরাডুবি থেকে বাঁচিয়ে দিয়ে গেলেন ব্রোঞ্জজয়ী হরিয়ানার মেয়ে সাক্ষী মালিক। এ দিন তাঁর জন্য আরও ভাল খবর হল, রিও-র সমাপ্তি অনুষ্ঠানে ভারতের পতাকা বাহক করা হল তাঁকে। পিভি সিন্ধু দেশে ফিরে যাওয়ায়।

যোগেশ্বরের জঘন্য পারফরম্যান্সের ফলে ভারতের রিও অলিম্পিক্স শেষ হল জোড়া পদক নিয়েই। সিন্ধু আর সাক্ষী—দুই মেয়ে অ্যাথলিটের কল্যাণে। সঙ্গে দীপা কর্মকারের চার নম্বরে শেষ করার দুর্দান্ত পারফরম্যান্স রোশনাই দিয়ে গেল ভারতকে। নারীশক্তির এ হেন বহিঃপ্রকাশে অলিম্পিক্সে মান বাঁচল একশো কুড়ি কোটির দেশের। চার বছর আগে লন্ডনে ছ’টা পদক পাওয়ার পর অলিম্পিক্সের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দল এনেও রিওয় পদকের এমন হাহাকার দেখা যাবে কে ভেবেছিল!

যোগেশ্বররা সেই হতাশা মেটাতে তো পারলেনই না, উল্টে রিও ভারতের পুরুষ কুস্তিগিরদের জন্য দীর্ঘশ্বাস হয়েই শেষ হল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Indian men Rio Olympics
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE