কলকাতায় যেমন পুজো নিয়ে মাতামাতি, ইনদওরেও তেমন দশেরা উৎসবের প্রস্তুতি চলছে জোর কদমে। শুধু বাঙালি কেন, এই সময়ে সারা দেশই উৎসবে মেতে থাকে। ‘হিন্দুস্তান কা দিল’ মধ্যপ্রদেশের এই শহরেও তাই উৎসবের আমেজ। সেই উৎসবের রঙে আরও রঙ মেলাতে আজ থেকেই হোলকার স্টেডিয়ামে নেমে পড়ছেন বিরাট কোহালিরা। নিউজিল্যান্ডকে ৩-০ টেস্ট সিরিজ হারিয়ে উৎসবের মরসুমে আর এক উৎসবে মেতে ওঠার জন্য।
তেত্রিশ বছর আগে এই শহরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ঢুকে পড়লেও সনাতন ক্রিকেটের প্রবেশ ঘটল এত দিনে। ওয়ান ডে-তে সচিন তেন্ডুলকরের দশ হাজারের গণ্ডী পেরনো দেখেছে এই শহর। কিন্তু সে পুরনো নেহরু স্টেডিয়ামে। নতুন হোলকার স্টেডিয়াম হওয়ার পর থেকে ভারত কখনও এখানে হারেনি। এ বার টেস্ট ক্রিকেটেও সেই ধারাবাহিকতা থাকে কি না, সেটাই দেখার। ঘরের মাঠে টানা ১৩ টেস্টে অপরাজিত থাকার পর এখানে নামছে বিরাট কোহালির দল। তাই এখানেও হোলকার স্টেডিয়ামের সুনাম বজায় থাকবে, এমনই আশা এই শহরের।
ইডেন জয়ের পর বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ের সিংহাসনে বসার পর ভারতীয় দলের অবশ্য এই টেস্ট ড্র করলেও ক্ষতি নেই। পাকিস্তান ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৩-০ হারিয়েও ভারতকে টেনে নামাতে পারবে না। আর ভারত? হার শব্দটাই যেন বিরাটদের শিবির থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে। প্র্যাকটিসে শরীরের ভাষায় বা প্রেস কনফারেন্সে ইন্ডিয়া ক্যাপ্টেনের কথায়, কোথাও হার শব্দটার ন্যূনতম উপস্থিতি নেই। আর ভারতের সিরিজ জয় দেখার আগ্রহ এখানে যথেষ্ট। প্র্যাকটিসেই যে ভাবে হাজার দশেক দর্শকের ঢল। টিকিটের লাইন যে রকম দীর্ঘ, তাতে ম্যাচে গ্যালারির চেহারা কী দাঁড়াবে, তা ভাবলেই যেন মন ভাল হয়ে যাচ্ছে। গ্রিনপার্ক, ইডেনকে পাঁচ দশ গোল দেবে না তো হোলকার? সে রকম হলে কিন্তু অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
টেস্ট ক্রিকেটের এই আবহ দেখে বিরাট কোহালি তো বলেই দিলেন, ‘‘টেস্ট ক্রিকেট আয়োজন করাটা যে ইনদওরের কাছে বেশ গর্বের, তা এখানকার আবহ দেখেই মনে হচ্ছে। আমি সবাইকে অভিনন্দন জানাতে চাই।’’ ফ্যানদের ভিড় সামলাতে শেষ পর্যন্ত শুক্রবার ভারতীয় দলের প্র্যাকটিসের সময় স্টেডিয়ামে তালা লাগিয়ে দিতে হয়। যাতে কেউ ঢুকতে না পারে।
এ দিন সকাল থেকেই হোলকার স্টেডিয়ামের আশেপাশে গুজবটা রটেছিল। সুপ্রিম কোর্ট বোর্ড কর্তাদের সরিয়ে দেওয়ার রায় দেওয়ার পরই নাকি এই টেস্ট বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বিকেলে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত রায় মুলতুবি থাকার খবরে যেন সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন।
কোহালিদের সংসারে অবশ্য এ সব নিয়ে কোনও চাপ নেই। তাঁরা ম্যাচ নিয়েই ফোকাসড। কোহালি তাই উইকেট নিয়ে প্রশ্নে যথারীতি সিরিয়াস। বললেন, ‘‘হার্ড উইকেট। ব্যাটসম্যান, বোলার দু’পক্ষই সাহায্য পাবে। তাই ম্যাচটাও ভাল হবে।’’ ম্যাচ শুরুর চব্বিশ ঘণ্টা আগেই কোহালি জানিয়ে দিলেন, এই ম্যাচে টেস্ট ক্রিকেটে ফিরছেন কলকাতা নাইট রাইডার্স অধিনায়ক গৌতম গম্ভীর। দু’বছর পর ফের টেস্টে গম্ভীর। ইডেন তাঁর ফেরা দেখতে পায়নি। হোলকার পাবে। কিন্তু তাঁর ফেরাটা কেমন হবে, তার দিকে তাকিয়ে গোটা দেশ। উইকেট অনেকটা কানপুরের মতো। তাই দলে ফিরতে পারেন উমেশ যাদব। ভুবনেশ্বর কুমার তো এমনিতেই চোট পেয়ে দলের বাইরে।
ভারতীয় শিবিরে যখন চূড়ান্ত এগারো তৈরি। তখন নিউজিল্যান্ড শিবিরে এখনও অনিশ্চয়তা। ইডেনে ম্যাচের আগে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়া কেন উইলিয়ামসন হোলকার স্টেডিয়ামে মাঠে নামবেন কি না, তার ঠিক নেই। ২৮ ডিগ্রির গরমেও কিউয়ি ক্যাপ্টেনকে দেখা গেল গায়ে প্র্যাকটিসে ‘হুডি’ চড়িয়ে নেমেছেন। ফলে জল্পনা শুরু হল, এখনও পুরোপুরি সুস্থ নন তিনি। নেটে ব্যাটিং আর ফিল্ডিং প্র্যাকটিসে অবশ্য ঘন্টাখানেক কাটালেন। যদিও প্র্যাকটিসের পর জানা গেল প্রথম এগারোয় তাঁর থাকার সম্ভাবনা যথেষ্ট। উইলিয়ামসনকে দলে ফিরিয়েও যে ভারতকে হারাতে পারবে নিউজিল্যান্ড, তার নিশ্চয়তা নেই ঠিকই। কিন্তু ভারতকে তাঁরা শেষ পর্যন্ত কড়া চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারে কি না, সেটাই দেখার।