Advertisement
E-Paper

জীবন পাওয়া রাসেলই ‘বস’ তারকাশূন্য নাইট সংসারে

আগের ম্যাচেই রাজস্থান রয়্যালসের জস বাটলারকে মাঁকড়ীয় ভঙ্গিতে আউট করা নিয়ে বিতর্কের ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে পড়েছেন অশ্বিন। আর বুধবার আন্দ্রে রাসেলকে মাত্র তিন রানে আউট করার পরেও দেখতে হল, রাসেল নট আউট।

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৯ ০৪:০৭
আগ্রাসী: ১৭ বলে ঝোড়ো ৪৮ রান আন্দ্রে রাসেলের। নিজস্ব চিত্র

আগ্রাসী: ১৭ বলে ঝোড়ো ৪৮ রান আন্দ্রে রাসেলের। নিজস্ব চিত্র

বলে না, ক্রিকেট সব হিসেবনিকেশ মিটিয়ে দিতে জানে। যেমন দেয়, তেমন ছিনিয়েও নেয়!

বুধবার রাতের ইডেনেও কি তেমনই কিছু ঘটতে দেখা গেল? আগের ম্যাচেই রাজস্থান রয়্যালসের জস বাটলারকে মাঁকড়ীয় ভঙ্গিতে আউট করা নিয়ে বিতর্কের ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে পড়েছেন অশ্বিন। আর বুধবার আন্দ্রে রাসেলকে মাত্র তিন রানে আউট করার পরেও দেখতে হল, রাসেল নট আউট। যা হতে পারত ম্যাচ জেতানোর সুখের মুহূর্ত, সেটাই হয়ে থাকল ম্যাচ হাতছাড়া হওয়ার বিষাদময় সন্ধিক্ষণ।

মহম্মদ শামি দুর্দান্ত ইয়র্কারে আউট করলেন রাসেলকে। নিস্তব্ধ হয়ে পড়া ইডেনকে দেখে সেই সময় মনে হয়েছিল, ম্যাচটাই শেষ করে দিলেন কলকাতার ময়দানে খেলে বড় হওয়া শামি। কে জানত, মহানাটকীয় কিছু এর পরেই অপেক্ষা করছে কেকেআর ভক্তদের জন্য। টিভি আম্পায়ারের সঙ্গে আলোচনা করে মাঠের আম্পায়ার জানিয়ে দেন, বৃত্তের মধ্যে তিন জন ফিল্ডার রেখেছিলেন অশ্বিনরা। থাকার কথা আসলে চার জনের। তাই ‘নো’ বল।

আরও পড়ুন: রাণা, রাসেল, না ‘নো বল’, নাইটদের পঞ্জাব বধের আসল নায়ক কে?

রাসেলকে যখন শামি আউট করে দিয়েছিলেন, তখন ক্যারিবিয়ান তারকা রীতিমতো হাসফাঁস করছেন। ৫ বলে করেছেন মাত্র ৩ রান। দেখে ইডেনের ঘাসের উইকেটে শামি বুদ্ধি করে রাসেলকে ব্যাকফুটে রাখছিলেন। তার পরেই দুর্ধর্ষ ইয়র্কার। যা তিনি এই কেকেআরে থাকাকালীনই শিখেছিলেন নাইটদের প্রাক্তন বোলিং গুরু ওয়াসিম আক্রমের কাছ থেকে।

স্কোরকার্ড
কলকাতা নাইট রাইডার্স ২১৮-৪ (২০)
কিংস ইলেভেন পঞ্জাব ১৯০-৪(২০)

কলকাতা নাইট রাইডার্স
লিন ক মিলার বো শামি ১০•১০
নারাইন ক রাহুল বো ভিলজোয়েন ২৪•৯
উথাপ্পা ন. আ. ৬৭•৫০
রানা ক আগরওয়াল বো বরুণ ৬৩•৩৪
রাসেল ক আগরওয়াল বো টাই ৪৮•১৭
কার্তিক ন. আ. ১•১
অতিরিক্ত ৫
মোট ২১৮-৪ (২০)
পতন: ১-৩৪ (লিন, ২.৪), ২-৩৬ (নারাইন, ৩.৩), ৩-১৪৬ (রানা, ১৪.৩), ৪-২১৩ (রাসেল, ১৯.৪)।
বোলিং: মহম্মদ শামি ৪-০-৪৪-১, বরুণ চক্রবর্তী ৩-০-৩৫-১, হার্ডাস ভিলজোয়েন ৪-০-৩৬-১, অ্যান্ড্রু টাই ৪-০-৩৭-১, আর অশ্বিন ৪-০-৪৭-০, মনদীপ সিংহ ১-০-১৮-০।

কিংস ইলেভেন পঞ্জাব
রাহুল ক কুলদীপ বো ফার্গুসন ১•৫
গেল ক কৃষ্ণ বো রাসেল ২০•১৩
মায়াঙ্ক বো চাওলা ৫৮•৩৪
সরফরাজ ক কার্তিক বো রাসেল ১৩•১৩
মিলার ন. আ. ৫৯•৪০
মনদীপ ন. আ. ৩৩•১৫
অতিরিক্ত ৬
মোট ১৯০-৪ (২০)
পতন: ১-১১ (রাহুল, ১.৪), ২-৩৭ (গেল, ৪.২), ৩-৬০ (সরফরাজ, ৭.৩), ৪-১৩৪ (মায়াঙ্ক, ১৫.২)।
বোলিং: প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ ৪-০-৪২-০, লকি ফার্গুসন ৪-০-৪২-১, আন্দ্রে রাসেল ৩-০-২১-২, কুলদীপ যাদব ৪-০-৩২-০, সুনীল নারাইন ২-০-২৬-০, পীযূষ চাওলা ৩-০-২৬-১।

কেকেআরের রান তখন ১৭তম ওভারে ১৬১-৩। আর তারা শেষ করল ২০ ওভারে ২১৮-৪ স্কোর নিয়ে। জীবন পাওয়া রাসেল যখন আউট হলেন, নামের পাশে ১৭ বলে ৪৮। ইনিংসে তিনটি চার, পাঁচটি বিশাল ছক্কা। ‘নো বল’ অধ্যায়ের পরে করে গেলেন ১২ বলে ৪৫। রাতের ইডেনে শিশির পড়বে বলে সকলে এখানে রান তাড়া করতে চায়। তার উপর উল্টো দিকে ক্রিস গেলের মতো ছক্কার রাজা রয়েছেন। কোনও স্কোরই যাঁর সামনে নিরাপদ নয়। তাই প্রথম ব্যাট করা নাইটদের দু’শোর উপরে তুলতেই হত। সেটা সম্ভব হল ‘নো বলে’ জীবন পাওয়া রাসেলের জন্যই। ২৮ রানে জেতার স্থপতি তিনিই। বল হাতেও তুলে নিলেন গেলের উইকেট। ১৩ বলে ২০ রানের বেশি করতে পারলেন না ‘ইউনিভার্স বস’। অন্তত বুধবারের ম্যাচে ‘বস’ তিনি নন, তাঁর দেশের আন্দ্রে রাসেল।

নাইট প্যাভিলিয়নের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে গেলের ফিরে যাওয়া দেখে নিশ্চয়ই তৃপ্তি পাচ্ছিলেন শাহরুখ খানও। আইপিএলের শুরুতে তিনি দল গড়েছিলেন গেলের মতো তারকাদের নিয়েই। টিমের খেলা দেখতে তখন প্রত্যেকটা ম্যাচে যেতেন বাজিগর। প্রত্যেক ম্যাচের শেষে পার্টি করতেন। দামি উপহার তুলে দিতেন তাঁর ক্রিকেটারদের হাতে। কিন্তু ক্রিস গেল-রা তাঁর হাতে আইপিএল ট্রফি উপহার হিসেবে তুলে দিতে পারেননি।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

শাহরুখের কেকেআর এখন আর তারকা ঝলমলে দল বানায় না। বরং তারা খোঁজ করে নাইট সংসারে পড়ে থাকার মতো চরিত্র। এই দলেই যেমন কুলদীপ যাদবকে বাদ দিলে কোনও আন্তর্জাতিক দলের প্রধান ক্রিকেটারেরা নেই। রাসেল ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট দলে সুযোগ পান না। শুধুই সীমিত ওভারের ক্রিকেটে খেলেন। সুনীল নারাইন দেশের হয়ে খেলা প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন। আর এক ওপেনার ক্রিস লিন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খুব একটা ডাক পাননি। তেমনই ভারতীয় ক্রিকেটারেরা সবই জাতীয় দল থেকে বাতিল হয়ে যাওয়া। রবিন উথাপ্পা, পীযূষ চাওলারা। যাঁদের কাছে ক্রিকেটীয় অস্তিত্ব বলতে পড়ে আছে এখন শুধু কেকেআর। তাই বেগুনি জার্সিতে নিজেদের উজাড় করে দেন। রাতের ইডেনে ম্যাচ জেতার তৃপ্তি নিয়ে যখন ইডেন প্রদক্ষিণে বেরিয়েছেন শাহরুখ, মনে হচ্ছিল— বলিউডের এক মহাতারকার দলের তারকাহীন হয়ে নিজেদের সংসার গুছিয়ে তোলাটাই নাইটদের সাফল্যের কারণ।

পর্দায় শাহরুখ-প্রীতি জিন্টা রোম্যান্সকে টেনে অনেকে আইপিএলের এই দ্বৈরথকে ‘বীরজারা’ ম্যাচ বলেন। বুধবার বীর ছিলেন, জারা আসেননি। ইডেন কিন্তু তবু নাইটদের ভালবাসায় ভরিয়ে দিতে কার্পণ্য করেনি। আর সেই উচ্ছ্বাস প্রকাশে কী অদ্ভুত ভাবেই না মিলে যায় অতীত এবং বর্তমান। চিরাচরিত সেই মেক্সিকান ওয়েভ উঠল। আবার আধুনিক প্রজন্মের দাবি মেনে সকলে মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে আলো উৎসবেও মাতলেন। দেখা গেল কেকেআরের ফিল্ডারেরাও ঘুরেঘুরে দেখছেন মায়াবী ইডেনকে!

শাহরুখের আবার কুসংস্কার হচ্ছে, কেকেআরের ম্যাচে প্রথম থেকে না থাকা। প্রথম বল থেকে হাজির হয়ে তিনি না কি দেখেছেন, সব ম্যাচ হারছে। তাই যখনই মাঠে আসেন, দেরিতে আসেন। এ দিনও তিন ওভার পরে মাঠে এলেন। তত ক্ষণে ঝড় তুলে দিয়েছেন সুনীল নারাইন। দ্বিতীয় ওভারেই বরুণ চক্রবর্তীর থেকে তিনি নেন ২৫ রান। তিনটি ছক্কা, একটি চার। এই বরুণ এ বার নিলামে সেরা চমক। ৮.৪ কোটি টাকায় তাঁকে কিনেছে পঞ্জাব। যা তাঁর বেস প্রাইসের ৪২ গুণ। নারাইন (৯ বলে ২৪) বেশিক্ষণ টিকলেন না। কিন্তু তাঁর কাজ তো এটাই। শুরুতে পিঞ্চহিটারের মতো তিনি ঝটিকা কালবৈশাখী তুলে দিয়ে যাবেন। বাকিটা দেখার জন্য স্বদেশীয় আন্দ্রে ‘হিটম্যান’ রাসেল তো আছেনই!

IPL 2019 KKR Kolkata Knight Riders KXIP Kings XI Punjab Andre Russell
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy