Advertisement
E-Paper

বুমরাদের বডিলাইন আক্রমণে ধরাশায়ী কেকেআর

মুম্বই ম্যাচের আঁধার থেকে বেরোতে পারলেন না বাজিগর।

সুমিত ঘোষ 

শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:৪৭
মোক্ষম: পাওয়ারহিটার আন্দ্রে রাসেলকে ( ডান দিকে) আউট করে নাইটদের আশা শেষ করে দেন বুমরা। আইপিএল

মোক্ষম: পাওয়ারহিটার আন্দ্রে রাসেলকে ( ডান দিকে) আউট করে নাইটদের আশা শেষ করে দেন বুমরা। আইপিএল

বলিউড বাদশা বলা হয় তাঁকে। কিন্তু আইপিএলের এই একটা ম্যাচে যতটা না তিনি ‘ডন’ তার চেয়েও বেশি ‘দেবদাস’। বুধবারের দ্বৈরথের আগে পঁচিশ বারে উনিশ বার হেরেছিলেন। আবু ধাবিতে রোহিত শর্মারা ৪৯ রানে জিতে স্কোরলাইনটাকে ২০-৬ করে দিলেন।

প্রথম ম্যাচে হারার পরে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স অধিনায়ক সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেন। ৫৪ বলে ৮০ করে ম্যান অব দ্য ম্যাচই শুধু হলেন না, আগ্রাসী নেতৃত্বও দিলেন। লেখা উচিত, আইপিএলে বডিলাইন বোলিংয়ের নেতৃত্ব দিলেন। যশপ্রীত বুমরার বল যখন অইন মর্গ্যানের বুকে আছড়ে পড়ল, এমনিতে শান্ত স্বভাবের রোহিতকে দেখা গেল হাততালি দিয়ে বোলারকে আরও তাতিয়ে দিচ্ছেন। আন্দ্রে রাসেলের উইকেটের পরে তেড়ে এলেন হাত তুলে। মুম্বইয়ের সামনে পড়লে কেকেআর যেমন কুঁকড়ে যায়, তেমনই কেকেআরের মুখোমুখি হলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স আরও তেতে ওঠে।

২০০৮ থেকে যেন একই চিত্রনাট্য চলছে। সে বার সৌরভ বনাম সচিন স্বপ্নের দ্বৈরথ। ভিআইপি বক্সে গোটা বলিউড হাজির। মেরিন ড্রাইভে ট্র্যাফিক জ্যাম। ওয়াংখেড়েতে সে দিন ক্রিকেটের লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো। আর নিজের শহরে বসে শাহরুখ খানকে কি না দেখতে হল তাঁর দল ৬৭ অলআউট! পুরো কু়ড়ি ওভার পর্যন্ত দাঁড়াতে পারল না। বোলিংয়ে ভাঙলেন শন পোলক, ব্যাট হাতে দুমড়ে দিলেন সনৎ জয়সূর্য।

সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতেও দারুণ জনপ্রিয় শাহরুখ খান। তাঁর জন্য এই ম্যাচের আগেই বুর্জ খলিফা নাইট রাইডার্সের রংয়ে আলোকিত করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মুম্বই ম্যাচের আঁধার থেকে বেরোতে পারলেন না বাজিগর। কখনও অম্বাতি রায়ডু। কখনও হার্দিক পাণ্ড্য। কখনও সূর্যকুমার যাদব, এভিন লুইস। কেউ না কেউ এসে বাজিগরের পার্টি ভেস্তে দিয়ে গিয়েছেন। এক বার জিতলেন তো ম্যাচের পরে এমনই ঝামেলা শুরু হল যে, ওয়াংখেড়েতে প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়ে গেল পাঁচ বছরের জন্য। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স মানেই কেকেআর মালিকের গলায় কাঁটা হয়ে বিঁধবে।

আরও পড়ুন: রোহিত-ঝড়ে উড়ে গেল নাইটরা

আইপিএলের এমনই হাই টেনশন ম্যাচ এটা যে, দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামেও ফুটন্ত সব দৃশ্য দেখা গেল। যশপ্রীত বুমরার মতো শান্ত মেজাজের বোলারও আন্দ্রে রাসেলকে বোল্ড করে অঙ্গভঙ্গি করলেন। যেন বলতে চাইলেন, কী রে মেরে দেখা আমায়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কত বড় বড় ব্যাটসম্যানকে ধরাশায়ী করে দিচ্ছেন বুমরা। এ রকম উত্তেজিত হতে কখনও দেখা যায় না। নাকি গত বারের জবাব? রাসেল ৪০ বলে ৮০ করে নাইটদের জিতিয়েছিলেন। বুমরা চার ওভারে দিয়েছিলেন ৪৪। এ বারে ৩২ রানে দুই উইকেট নিয়ে জবাব দিয়ে গেলেন? আর কোন দু’টি উইকেট? রাসেল আর অইন মর্গ্যান। যাঁরা সেই সময়ে শেষ ভরসা ছিলেন।

মাস্টারস্ট্রোক দিলেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। শুরুতে মাত্র এক ওভার করালেন বুমরাকে। বাঁচিয়ে রাখলেন রাসেলের জন্য। ১৬তম ওভারে ওই দু’টো উইকেটের পরে সম্ভবত গরিষ্ঠ সংখ্যক কেকেআর ভক্তের বাড়ির টিভি সুইচ অফ হয়ে যায়। কিন্তু ধোনির ব্যাটিং অর্ডারের মতোই তর্কের ঝড় উঠতে বাধ্য, রাসেলই বা এত পরে নামবেন কেন?

গত বার প্রকাশ্যে এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন স্বয়ং রাসেল। সে সব এ বার মিটিয়ে ফেলা হবে প্রতিশ্রুতি শোনা যাচ্ছিল কেকেআর শিবির থেকে। এ দিন নামানো হল ছয় নম্বরে। মুম্বইয়ের ১৯৫-৫ স্কোরের জবাবে দ্বাদশ ওভারে নাইটরা তখন ৭৭-৪। বড় স্ট্রোকের প্রতিষেধক কেউ বার করতে পারছেন না। ১১৯ তুলতে হবে আট ওভারে। আস্কিং রেট ১৪ পেরিয়ে গিয়েছে। রাসেল যেন এক-এক শটে বারো করে মারবেন! দীনেশ কার্তিক নিজে তিন নম্বরে এলেন। তার পরে এলেন নীতিশ রানা, অইন মর্গ্যান। রাসেলকে ঠেলে দেওয়া হল ছয়ে।

আরও সব উদ্বেগের ছবি সঙ্গী হয়ে থাকল নাইটদের। রোহিত যখন মারছেন তাঁকে থামানোর ‘প্ল্যান বি’ ছিল না। ক্রিজের একেবারে ভিতরে গিয়ে হার্দিক পাণ্ড্য হেলায় পুল মেরে গেলেন প্যাট কামিন্সকে। সাড়ে পনেরো কোটিতে বিক্রি হওয়া বোলার তিন ওভারে দিলেন ৪৯। চায়নাম্যান কুলদীপ যাদবকে খুব আত্মবিশ্বাসী দেখাল না। এ ভাবে ম্যাচ হারতে শুরু করলে নাইটদের অস্ত্রাগারে যথেষ্ট গোলাবারুদ আছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠতে কত ক্ষণ!

মুম্বই ইন্ডিয়ান্স কিন্তু রাসেলের জন্য হোমওয়ার্ক করে এসেছিল। ১১ বলে ১১ রানের বেশি তাঁকে এগোতে না দেওয়া সেই হোমওয়ার্কের ফসল। ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিজে আসতেই যশপ্রীত বুমরাকে ফিরিয়ে আনলেন রোহিত। পায়ের সামনে কোনও বল দেওয়াই হয়নি তাঁকে। ওই ডেলিভারিগুলোই শক্তিমানের মতো গ্যালারিতে পাঠান রাসেল। বুমরা তাঁর পাঁজর লক্ষ্য করে বল করে গেলেন। নারাইনকেও একই দাওয়াই দেওয়া হল। দেখে মনে হচ্ছিল, যেন সেই ডগলাস জার্ডিন আর হ্যারল্ড লারউডেরা ফিরে এসেছেন। বডিলাইনেই বধ নাইটরা। আর মেরিন ড্রাইভ থেকে বুর্জ খলিফা—দেশ পাল্টেও বাজিগরের মুম্বই ইন্ডিয়ান্স বাজি আর জেতা হল না!

IPL 2020 Mumbai Indians KKR Cricket
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy