ধোনির মন্ত্রেই ইনিংস গড়েছেন ময়াঙ্ক। ছবি টুইটার থেকে নেওয়া।
কিংস ইলেভেন পঞ্জাব শিবিরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ম্যাচ জিতিয়ে না ফেরার গ্লানিতে আচ্ছন্ন ময়াঙ্ক। ঘনিষ্ঠ মহলে সেই হতাশা এবং যন্ত্রণার কথা প্রকাশও করেছেন। যাবতীয় প্রতিকূলতা টপকে জয়ের স্টেশনের কাছে দলকে নিয়ে আসার পরও এ ভাবে বেলাইন হয়ে পড়া হজম হচ্ছে না তাঁর। ময়াঙ্ককে নিয়ে আরও একটা বিস্ময় তৈরি হয়েছে। কেন সুপার ওভারে তাঁকে নামতে দেখা গেল না। আউট হয়ে ফেরার পরও কয়েক মিনিট সময় ছিল। ক্লান্তি অপনোদনের জন্য। জোন্স যেমন বলেছেন, উইকেটের গতির সঙ্গে পরিচিত হওয়া ছাড়াও সদ্য কাগিসো রাবাদাকে খেলার অভিজ্ঞতাও কাজে আসত ময়াঙ্কের। আরেক প্রাক্তন, অজিত আগরকরেরও মনে হয়েছে, সুপার ওভারে লোকেশ রাহুল-নিকোলাস পুরান জুটি নয়, পঞ্জাবের প্রয়োজন ছিল ময়াঙ্কের। এর উত্তর অবশ্য নেই ময়াঙ্কের কোচের কাছেও। তবে তাঁর কাছে জানা গেল ছাত্রের এত পরিণত ইনিংস খেলার রহস্য। ১৫৮ রানের জয়ের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে এক সময় ১০ ওভারে ৫৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল প্রীতি জিন্টার দল। মনে হচ্ছিল, স্টোয়নিসের ধুমধাড়াক্কাই তফাত গড়ে দিয়েছে। ময়াঙ্ক তা ভাবেননি। তখন তিনি চলছিলেন লোকাল ট্রেনের গতিতে। ২০ বলে মাত্র ১৩। সেই তিনি শেষ পর্যন্ত থামলেন ৬০ বলে ৮৯ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলে। ৭টি চার ও ৪টি ছয় দিয়ে সাজানো ইনিংসের স্ট্রাইক রেট প্রায় দেড়শো!
ময়াঙ্কের কোচ মুরলীধর বললেন, “আইপিএলের আগে আমরা প্রচুর খেটেছি। ওকে গতে বাঁধা অনুশীলন করাইনি। জোর দিয়েছি চাপের মুখে রান করার দিকে। ওকে ম্যাচ পরিস্থিতিতে ফেলে প্র্যাকটিস করিয়েছিলাম। যেমন, রান তাড়া করার সময় শেষ ৬ ওভারে ৫৮ রান চাই, এমন অবস্থায় নেটে ব্যাটিং করানো।। প্রথম ৬ ওভারের পাওয়ার প্লে-র সময় কী ভাবে এগোতে হবে, সেটা নিয়েও অনেক সময় খরচ করেছি। নতুন বলে ১২ বলে ৪৫ করে ফিরব, এমন মানসিকতা যেন না থাকে, সেটা বার বার বুঝিয়েছি। বলেছি, ম্যাচটাকে শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে। শুরুতে ঝুঁকির রাস্তায় না গিয়ে আস্তে আস্তে রানের গতি বাড়াতে। ধরা যাক শেষ ৩০ বলে ৪৬ রান বাকি। এমন তো নয় যে, ১ ওভারেই ওই রানটা উঠে আসবে। তাই লক্ষ্যের কাছাকাছি পৌঁছতে হবে।”
আরও পড়ুন: আজ অবধি আইপিএলে এই বোলারের রহস্যভেদ করতে পারেননি বিরাট
মানে সেই মহেন্দ্র সিংহ ধোনির পেটেন্ট নেওয়া রান তাড়ার নীতি। যার সারমর্ম, গভীরে যাও। ম্যাচকে শেষ পর্যন্ত টানতে থাকো। তার পর বোলারকে চাপে ফেলে দাও নকআউট পাঞ্চে। ময়াঙ্কের কোচ তা মেনেও নিলেন। বললেন, “ইয়েস, টেক দ্য ম্যাচ ডিপ। লড়াইয়ে থাকতে হবে শেষ পর্যন্ত। আর ধোনি যা বলেছে, সেটাই ঠিক। তখন চাপ বোলারের উপরেও থাকে। দু’পক্ষই যখন টেনশনে, তখনই ব্যাটসম্যানকে সুবিধা নিতে হবে। দিল্লির মোহিত শর্মা, স্টোয়নিসরাও কিন্তু মারাত্মক চাপে ছিল শেষের দিকে। স্টোয়নিসের কপাল ভাল যে ময়াঙ্ক আউট হওয়ার পর শেষ বলে জর্ডনের শট স্কোয়ার লেগে রাবাদার হাতে চলে গিয়েছিল। শটটা ১ মিটার এদিক-ওদিক হলেই জিতে যেত পঞ্জাব।”
অন্য প্রান্তে ক্রমাগত উইকেট পড়তে থাকা অবস্থায় দলকে একাই টানার এহেন ইনিংস ময়াঙ্কের কেরিয়ারে নতুন। এমন নয় যে, আইপিএলের দুনিয়ায় তিনি আগন্তুক। বরং এর আগে ৭৭ ম্যাচ খেলে ফেলেছিলেন কোটিপতি লিগে। সর্বোচ্চ রান ছিল ৬৮। মাত্র ৫ বার পেরিয়েছিলেন ৫০ রানের গণ্ডি। আর এ বার গোড়াতেই দায়িত্বশীল ৮৯। ছাত্রের রূপান্তরের নেপথ্যে কী? মুরলীধরের মতে, “আসল হল নিজের প্রতি বিশ্বাস। যে, আমি পারব। আগে ও কম বলে বেশি রানের টার্গেট দেখলে উল্টোপাল্টা শট খেলে ফেলত। এখন ৬ ওভারে ৬০ রান করতে হলে ও জানে যে, প্রত্যেক ওভারে ১টা বাউন্ডারি আর ৫টা সিঙ্গলসেও কাজ চলবে। লক্ষ্যকে ছোট ছোট টার্গেটে ভেঙে ফেলা, পরের বলে মনসংযোগ রাখা আর মারাত্মক চাপেও ফোকাস না হারানোর চেষ্টা চালিয়েছে ও। ব্যাপারটা থিওরিতে সহজ। বাস্তবে কিন্তু নয়!”
বাস্তবের ২২ গজে যে সেটা কত কঠিন, সেটাই প্রতিফলিত শেষ ওভারের ফুলটসে ময়াঙ্কের আউটেই!