আরসিবি-র প্র্যাকটিসে কোহালি-ডিভিলিয়ার্স। ছবি সুদীপ্ত ভৌমিক
হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালার কথা মনে আছে?
তাঁর বাঁশির মায়াবী সুরের টানে শহরের ইঁদুরকুল মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাঁর পিছনে ছুটে ডুব দিয়েছিল ওয়েজার নদীতে।
আজ, রবিবার শহরের ক্রিকেটপ্রেমীদের ঠিক সে ভাবেই ইডেন উদ্যানে টেনে আনবেন একজন। বিরাট কোহালি। এ যুগের বাঁশিওয়ালা। যাঁর আকর্ষণে আট থেকে আশি, সবাই মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে ডুব দেন ক্রিকেটে। রবিবারও উৎসবের আনন্দে ভাসবে ইডেন। আইপিএল উৎসব? না, সেটা বললে বোধহয় একটু ভুলই হবে। বলা উচিত বিরাট উৎসব। যে উৎসবে সামিল হওয়ার প্রবেশপত্র পেয়ে কলার তুলে ঘুরে বেড়ানো মানুষের সংখ্যা শহরে প্রচুর ঠিকই, তবে না পাওয়ার হাহাকার তার চেয়ে ঢের বেশি।
‘একটা টিকিট হবে?’— ইডেন ও তার আশেপাশে শনিবার সারা দিন ভেসে থাকল এই আর্তি। এর কারণ একজনই। এ যুগের বাঁশিওয়ালা।
এ তো গেল ইডেনের বাইরের ছবি। শনিবার সন্ধ্যায় গঙ্গাপারের মাঠে যে দৃশ্য দেখা গেল, তাও কম বিস্ময়ের নয়। বাঁ দিকে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের নেট। পুরো দল যেখানে অনুশীলন করল পুরো দমে। দলের দুই সেরা রান মেশিন বিরাট কোহালি ও ক্রিস গেল মন ভরে নিজেদের ঝালিয়ে নিলেন।
আর ডান দিকের ছবিটা সেই তুলনায় খুবই ম্যাড়মেড়ে। আগের রাতে সুরেশ রায়নার ব্যাটে দুরমুশ হওয়া কেকেআরের কয়েকজন নেটে গা ঘামাচ্ছেন। সেখানে প্রথম দলের তারকা বলতে সুনীল নারাইন, মণীশ পাণ্ডে ও পীযূষ চাওলা। বাকিরা হোটেলে, বিশ্রামে। ইউসুফ পাঠান, চাওলারা আবার শহরতলির এক অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন।
ইডেনের ক্লাব হাউসের লোয়ার টিয়ারের ক্রিকেট উৎসাহী থেকে শুরু করে সিএবি কর্তা, কর্তব্যরত পুলিশ ও মিডিয়া প্রতিনিধিদের নজর কিন্তু ডান দিকে নয়, বাঁ দিকে। কে বলবে, রবিবার ঘরের মাঠে নামতে চলেছে কেকেআর? এ দিন তারা যেন ‘নিজভূমে পরবাসী’। এ সব তো একজনের জন্যই। বিরাট কোহালি।
আরও পড়ুন...
ইউনিভার্স বসকে থামাবে কে, চলল গবেষণা
নেট রানরেটের চুলচেরা বিচারে গুজরাত লায়ন্সের চেয়ে এক ধাপ ওপরে সাত নম্বরে আরসিবি। দুইয়ে কেকেআর। সাত ও দুইয়ের এই লড়াইয়ে কোথায় দু’নম্বর দলই সবার নজর কাড়বে, তা নয়। সাত নম্বরই যেন রবিবারের নাইট শোয়ের সেরা আকর্ষণ। ইডেনের উপচে পড়া গ্যালারি যদি রবিবার দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়, তা হলেও অবাক হবেন না। টিম কেকেআরের জন্য তো গলা ফাটাবেই এক অংশ। অন্য অংশের সমর্থন অবশ্যই পাবে টিম কোহালি। শনিবার সন্ধ্যার ইডেন আবহে সেই ইঙ্গিতই স্পষ্ট।
দু’দিন আগে ‘দশ কি দহর’ দমিয়ে এই ইডেনেই যে ভাবে নাইট বাহিনীকে শাসন করেছিল সুরেশ রায়নার ব্যাট, রবিবার কিংগ কোহালি সেই রণমূর্তি ধরলে? আর প্রাক্তন ফ্র্যাঞ্চাইজিকে সামনে পেয়ে ক্রিস গেল ফের খেপে গেলে তো ঘোর বিপদ নাইটদের। আগের ম্যাচেই ব্যাটিং নির্ভর দলের বিরুদ্ধে কেমন অসহায় লেগেছে গৌতম গম্ভীরের বোলারদের। দুই স্পিনার সুনীল নারাইন ও সাকিব আল হাসানকে শুরু থেকেই আক্রমণে এনে কোনও লাভ হয়নি। রায়না ও রবীন্দ্র জাডেজা জুটিকে ঠিক সময়ে থামাতে পারেননি দলের পেসাররাও।
রবিবারও বিপক্ষে সেই ব্যাটসম্যানদেরই রমরমা। চার দিন আগেই যাঁরা দুশোর তোলার পর ভরপুর বিশ্রাম নিয়ে নামছেন ফের এক ব্যাটিং বিস্ফোরণের নীল নকশা নিয়ে।
আটকাতে পারবেন বিরাটকে? সাংবাদিক বৈঠকে নাইটদের বোলিং কোচ লক্ষ্মীপতি বালাজির কাছে বোধহয় এটাই ছিল সবচেয়ে কঠিন প্রশ্ন। কষ্ট করেই উত্তরটা দিলেন, ‘‘কঠিন কাজ। ম্যাচে নামা মানে যুদ্ধক্ষেত্রে নামার মতোই। কখন যে কী হবে, কিছু বলা যায় না। যা ভাবা হয়, তা নাও হতে পারে। তাই পরিস্থিতি বুঝে পরিকল্পনা করতে হয়। তবে আমাদের বোলিং যেহেতু খারাপ হচ্ছে না, তাই অসম্ভব নয়।’’
লায়ন্সের কাছে হারের রাতে জাক কালিস তাঁর বোলারদের নিয়ে বলেছিলেন, ‘‘আমাদের বোলাররা সেরা ফর্মে ছিল না। বিপক্ষ যখন রান তাড়া করে, তখন ওদেরও আগ্রাসী হওয়াটা জরুরি।’’ বালাজি অবশ্য আশাবাদী, ‘‘চল্লিশটা উইকেট তো তুলেছে ওরা। তাই ওদের ওপর ভরসা করাই যায়।’’ সব শেষে একটা দুঃসংবাদ। রুদ্ধশ্বাস রবিবারের বিকেলে ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কার আছে, জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। তা রোখার ক্ষমতা হ্যামনিলের বাঁশিওয়ালারও যে নেই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy