Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
বোর্ডকর্তারা নির্দেশ না মানলে সিরিজ বানচালের হুমকি

অনুরাগদের প্রশ্ন, সফরের খরচ কি ইংল্যান্ডই মেটাবে

আপনার বা়ড়িতে অতিথি। অথচ আপনি তাঁকেই বলছেন, ভাই খাওয়াদাওয়া, থাকার ব্যবস্থা কিন্তু তোমাকে নিজেই করতে হবে। আমার টাকা দেওয়ার ক্ষমতা নেই!

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৪৫
Share: Save:

আপনার বা়ড়িতে অতিথি। অথচ আপনি তাঁকেই বলছেন, ভাই খাওয়াদাওয়া, থাকার ব্যবস্থা কিন্তু তোমাকে নিজেই করতে হবে। আমার টাকা দেওয়ার ক্ষমতা নেই!

এর চেয়ে অভাবনীয় আর খারাপ আর কী হতে পারে?

ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড এখন নাকি এ রকমই অবস্থায়। যেখানে তাদের লজ্জার সীমা ছাড়িয়ে অ্যালিস্টার কুকদের বলতে হতে পারে, তোমাদের ভারত সফরের খরচ বাপু তোমরা নিজেরাই মিটিয়ে দিও। আমরা পারছি না।

ভারতীয় বোর্ডের অভিনব গড়িমসিতে এখন এই প্রশ্নই উঠতে শুরু করেছে, কুকদের ভারতে সিরিজ খেলতে আসার খরচ কি তাদের নিজেদেরই দিতে হবে? যা এক কথায় অবিশ্বাস্যও বটে।

যা পরিস্থিতি, তাতে বলা যেতেই পারে যে, রাজকোটে ভারত-ইংল্যান্ড টেস্টের প্রথম বল পড়ার আগে থেকেই সিরিজটা শুরু হয়ে গেল এবং তা এই ভাবে। যাতে অ্যালিস্টার কুক বা বিরাট কোহালির মধ্যে নয়। লড়াই সেই বিসিসিআই ও লোঢা কমিটির। তাদের মধ্যে চাপ ও পাল্টা চাপের লড়াইয়ে ইংল্যান্ড সিরিজও ক্রমশ অনিশ্চয়তার মেঘে ঢাকা পড়ছে। বোর্ডের শীর্ষকর্তারা আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী দু’সপ্তাহের মধ্যে যে হলফনামা পেশ করার কথা, তা এখনও করেননি। বৃহস্পতিবারের মধ্যে অনুরাগ ঠাকুর এবং অজয় শিরকের হাজির হওয়ার কথা ছিল কমিশনের সামনে। সেটাও হয়নি। ফলে ইংল্যান্ড সিরিজ চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে বলে হুঙ্কার দিয়েছেন লোঢা কমটির এক সদস্য।

বোর্ড অবশ্য অন্য রাস্তায় হাঁটছে। তারা পাল্টা প্রশ্নের পর প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছে কমিশনের দিকে। বিসিসিআই-এর অনুসন্ধানী ই-মেলে ছয়লাপ লোঢা কমিটির ইনবক্স। এ বার নতুন ব্যাখ্যা চেয়ে বোর্ড যে প্রসঙ্গ তুলে ধরল লোঢা কমিটির সামনে, সেটা যথেষ্ট চমকপ্রদ। ই-মেলে জানতে চাওয়া হয়েছে, যেহেতু বোর্ডের আর্থিক লেনদেনের উপর লোঢাদের কড়া নজরদারি ও বিধিনিষেধ রয়েছে, তাই ইংল্যান্ড সিরিজ আয়োজনের ব্যয় বোর্ড করতে পারবে, না ইসিবি-কে সেই খরচ মিটিয়ে দিতে বলা হবে। বোর্ডের বক্তব্য, এই সমস্যার সমাধান না হলে দুই বোর্ডের মধ্যে মউ -ও সই করা যাচ্ছে না। কারণ, এটাও তার একটা অংশ।

‘আমাদের আর্থিক লেনদেন সব কিছু আটকে রয়েছে।
ফলে সিরিজ চালানোর টাকা আমাদের হাতে নেই।
দুই বোর্ডের মধ্যে কোনও ‘মউ’ সইও হয়নি। এই অবস্থায়
তা হলে কি অতিথি দেশকেই সফরের খরচ মিটিয়ে নিতে বলব?’
বোর্ডের বাউন্সার

‘দু’দেশের মধ্যে ‘মউ’ স্বাক্ষর হয়েছে কী হয়নি, তা আমাদের
দেখার ব্যাপার নয়। আমরা বিসিসিআইয়ের আর্থিক
লেনদেনের উপর যে সব ব্যাখ্যা চেয়েছিলাম,
সেগুলো না পেলে আমাদের অবস্থান বদলাবে না।’

কমিশনের ছক্কা

প্রতি সিরিজের আগে দুই বোর্ডের মধ্যে মউ স্বাক্ষরিত হওয়াটা ক্রিকেট বিশ্বে চালু প্রথা। যাতে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে সিরিজের জন্য বিভিন্ন খাতে ব্যয়ের বিস্তারিত উল্লেখ করা থাকে। কিন্তু ইংল্যান্ড ভারতে ঢুকে পড়লেও মউ এখনও স্বাক্ষরিত হয়নি। যা নিয়ে দুই বোর্ডের মধ্যে বোঝাপড়ার অভাব হতে পারে বলে শীর্ষকর্তাদের ধারণা।

বোর্ডের এই নতুন বাউন্সারে লোঢা কমিশন বরাবরের মতো হুক করে ছক্কা হাঁকিয়েছে। তার মোদ্দা বক্তব্য হল, মউ স্বাক্ষরের অনুমতি দেওয়া বা না দেওয়া তাদের এক্তিয়ারভুক্ত বিষয় নয়। কিন্তু আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে উপযুক্ত নথিপত্র লোঢা কমিটির কাছে যতক্ষণ না জমা করছে বোর্ড, ততক্ষণ তাদের অবস্থান তারা বদলাবে না।

‘‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী বোর্ডের প্রেসিডেন্ট ও সচিবের দু’সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা পেশ করে আদালতে হাজির হওয়ার কথা ছিল। ওঁরা এখনও কিছুই করেননি’’, এ দিন লোঢা কমিটির এক সূত্র এ কথা বলেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘দুই শীর্ষকর্তাকে মুচলেকা দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাও তাঁরা দেননি। এগুলো না দিয়ে অনুরাগ ঠাকুর ও অজয় শিরকে ইংল্যান্ড সিরিজটাকেই অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিচ্ছেন।’’

লোঢা সুপারিশ মেনে বোর্ডের গঠনতন্ত্রে সংশোধন করার কাজ তাঁরা কতটা এগিয়েছেন, হলফনামায় তারই রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ আদালত দিয়েছিল দুই শীর্ষকর্তাকে। এ ছাড়াও নতুন এক নির্দেশে লোঢা কমিশন এ দিন নামী আর্থিক সংস্থা ডেলয়েটের দেওয়া ওড়িশা, অসম, জম্মু-কাশ্মীর ও হায়দরাবাদ ক্রিকেট সংস্থার আর্থিক রিপোর্ট পেশ করতে বলল ৮ নভেম্বরের মধ্যে। এই চার রাজ্যের হিসাবনিকাশে ডেলয়েট ব্যাপক গরমিল খুঁজে পেয়েছে বলে খবর সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতেই এই রিপোর্ট তলব করল লোঢা কমিশন, ধারণা ওয়াকিবহাল মহলের।

সম্প্রতি মিডিয়ার একাংশে খবর বেরোয় যে বোর্ড নিযুক্ত এই অডিট সংস্থার তদন্তে কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। যেমন হায়দরাবাদ ক্রিকেট সংস্থার সদস্যদের নাকি একটি টেন্ডারের জন্য সোনার কয়েন ও সোনার গয়না উপহার দেওয়া হয়েছিল। ওড়িশায় ক্রিকেট সংস্থায় নাকি এখনও হাতে লেখা হিসেব চালানো হয়। অসমকে বোর্ড এক সময় স্টেডিয়াম করার জন্য ৬০ কোটি টাকা দিয়েছিল, তার কোনও হিসাব অসম ক্রিকেট সংস্থা বোর্ডকে দেয়নি বলেও অভিযোগ ওঠে। জম্মু-কাশ্মীরের সংস্থা নিয়েও এমনই অভিযোগ উঠেছে। সত্যিই তেমন কিছু পাওয়া গিয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে চায় লোঢা কমিটি।

ইংল্যান্ড দলের আতিথেয়তার খরচের প্রসঙ্গ তুলে লোঢাদের চাপে ফেলতে গিয়ে এখন পাল্টা চাপে বোর্ডই। লোঢাদের জবাবের পর এখন তারা মউ স্বাক্ষর নিয়ে ধন্দে। এক বোর্ড কর্তা তো বলেই দিলেন, ‘‘বোর্ড যদি এখন ইসিবি-কে তাদের নিজেদের খরচ মেটানোর কথা বলে, তা আবার পরাধীন হওয়ার মতোই লজ্জাজনক হবে। দুর্ঘটনাটা হয়তো শেষ পর্যন্ত ঘটবে না। আয়োজক রাজ্য সংস্থাগুলোই সেই টাকার ব্যবস্থা করে নেবে। কিন্তু এই চালটা দিয়ে লোঢাকে কিস্তিমাত করার পরিকল্পনাটা ভেস্তে গেল মনে হচ্ছে। এখন তো হলফনামা নিয়ে আদালতে গিয়ে দাঁড়াতেই হবে প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারিকে।’’

আবার একাংশের ধারণা, লোঢা কমিটির ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে ইংল্যান্ড সিরিজটা বন্ধ করে দেওয়ার ছক কষছে বোর্ড। যাতে সে রকম হলে মানুষের আবেগ বোর্ডের পক্ষে চলে আসে এবং চাপে পড়ে যায় কমিশন।

এই চাপ, পাল্টা চাপের খেলায় শেষ পর্যন্ত কোথাকার জল কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, সে তো পরের কথা। কিন্তু এখন তার চেয়েও বড় প্রশ্ন কুকদের সিরিজ শেষ না করেই দেশে ফিরে যেতে হবে না তো?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

anurag thakur BCCI
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE