ঈশান পোড়েল।
ছোটবেলায় আইপিএল হলে টিভির সামনে থেকে উঠতাম না। প্রতিযোগিতা চলাকালীন বাড়ির সবার টিভি দেখা বন্ধ। টিভির মালিক আমি। মন দিয়ে দেখতাম ক্রিজে দাপটের সঙ্গে একের পর এক ম্যাচ বার করছে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। উইকেট ছিটকে দিচ্ছে লাসিথ মালিঙ্গা। ভেবে ভাল লাগছে, সেই পর্যায়ে এখন আমিও খেলতে চলেছি।
দুবাই যাত্রা: ১৬ অগস্ট বাড়ি থেকে বেরিয়ে দিল্লি যাওয়ার সময় কিছুটা ভয় করছিল। কলকাতা থেকে তো আর চার্টার্ড বিমান পাব না। মা ও বাবা বহু বার বলে দিল, ‘‘যাই করো সাবধানে থেকো। নিজের সেরাটা দিয়ে ফেরো।’’ তাই বাড়ি থেকে একেবারে গ্লাভস ও মুখাবরণ পড়ে বিমানবন্দর এলাম। সেখান থেকে দিল্লি। দেশের রাজধানীতে একটি হোটেলে রাখা হয় আমাদের। দু’টি করোনা পরীক্ষার ফল নিয়ে ২০ অগস্ট উড়ে এলাম দুবাই। সে এক স্বপ্নের যাত্রা। ছোটবেলা থেকে অনিল স্যরের খেলা দেখে এসেছি। তাঁর সঙ্গে একই বিমানে সফর করতে পেরে নিজেকে যেন হারিয়ে ফেলি। চিমটি কেটে নিজেকে জিজ্ঞাসা করি, যা হচ্ছে সব সত্যি তো?
হোটেল পৌঁছনো: বিমানবন্দর থেকে বেরোনোর পরেই বুঝতে পারলাম, এই দেশ কতটা পরিষ্কার। করোনা পরীক্ষা হওয়ার পরে টিম বাসে উঠি। শহরের সব উঁচু বিল্ডিংয়ের দিকে তাকিয়ে যেন ঘোর কাটছিল না। সব চেয়ে বেশি নজর কাড়ে বিখ্যাত ব্র্যান্ডের সব গাড়ি। সারা জীবন যে ধরনের গাড়ি কিনব বলে স্বপ্ন দেখেছি, তা নিয়ে আমাদের বয়সী ছেলেরা রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। আউডি, মার্সিডিজ, পর্শে, বিএমডব্লিউ যেন অলিতে গলিতে। আরও সব বিদেশি গাড়ি, যা কখনও কলকাতার রাস্তায় দেখিনি। সমুদ্রের পাশ দিয়ে গড়ে ওঠা রাস্তায় মসৃণ গতিতে চলছে সেই সমস্ত গাড়ি। হোটেলের জানালা থেকে শিশুর মতো তাকিয়ে থাকা ছাড়া কোনও উপায় নেই।
নিভৃতবাস: ছ’দিন টানা একটা রুমের মধ্যে আগে থেকেছি বলে মনে পড়ে না। তবুও এই পরিস্থিতিতে সতর্ক থাকতেই হবে। টিম ম্যানেজমেন্ট থেকেই প্রত্যেকের জন্য বিশেষ তালিকা তৈরি করে দেওয়া হল। রুমের মধ্যে সেই তালিকা অনুযায়ী চলল ট্রেনিং। বেশ কিছু ওয়েব সিরিজ দেখে ফেলেছি এই ছ’দিনে। মন ভাল রাখার জন্য জ়ুম কলের মাধ্যমে বেশ কিছু প্রতিযোগিতায় অংশ নিই। অনলাইনে গেমও খেলি। সত্যি কথা বলতে, নিভৃতবাসে থাকতে সে রকম সমস্যা হয়নি। ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই দেখতে পেতাম সমুদ্র। ব্যস, সেদিকে তাকিয়েই সারা দিনের অক্সিজেন পেয়ে যেতাম।
কিংস জার্সিতে অনুশীলন: ঘর থেকে বেরিয়ে অনুশীলনে নামা পর্যন্ত মুখাবরণ পরতেই হবে। একেবারে প্র্যাক্টিস ড্রেস পরেই যেতে হচ্ছে আমাদের। ড্রেসিংরুমে কম সময় কাটানোর জন্যই এই নিয়ম। অনুশীলনে প্রত্যেককে নির্দিষ্ট কিছু বল দেওয়া হচ্ছে, যা অন্যেদের সঙ্গে আদান-প্রদান করা চলবে না। মাঠে ফেরায় স্বস্তি পেলাম। প্রথম দিন অনুশীলন শুরু হওয়ার আগে কোচ অনিল স্যর, অধিনায়ক রাহুল জানিয়ে দিল আমাদের লক্ষ্য। সেই নির্দেশ মেনেই শুরু হল আমার আইপিএল যাত্রা।
দুবাইয়ের তাপমাত্রা: প্রথম অনুশীলনের পরে রাহুল ভাই আতঙ্ক প্রকাশ করেছিল দুবাইয়ের গরম নিয়ে। অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, কলকাতার গরমে যাদের খেলার অভ্যেস আছে, তাদের এই গরমে কোনও সমস্যাই হবে না।
(সাক্ষাৎকারভিত্তিক অনুলিখন)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy