এটিকে ০ নর্থ ইস্ট ইউনাইটেড ১
পুজোর আগে আলো জ্বলল না এটিকে শিবিরে।
ঢাকের বাদ্যি, আলো আর পুজো মণ্ডপের ঠুকঠাক আওয়াজে উৎসবের মেজাজ এসে গিয়েছে শহরে। সেই আবহে বৃহস্পতিবার ম্যাচের পরে এটিকে কোচ স্টিভ কপেল এবং তাঁর দলের ফুটবলারদের দেখে মনে হচ্ছিল বিসর্জনের শোভাযাত্রায় সামিল। ‘‘জঘন্য রেফারিং। ওটা কোনওমতেই লাল কার্ড হয় না। ম্যাচের মেজাজটাই বুঝতে পারেননি রেফারি। ১০ বনাম ১১ সব সময়ই অসম লড়াই।’’ খেলার শেষে রেফারি তেজেস নাগবেঙ্করের বিরুদ্ধে এ ভাবেই ক্ষোভ উগরে দেন এটিকে কোচ।
কেরলের পরে নর্থ ইস্ট ইউনাইটেড— জোড়া হারে পঞ্চম ইন্ডিয়ান সুপার লিগের শুরুতেই অমাবস্যা নেমে গেল স্টিভের ড্রেসিংরুমে। কার্যত গতবারের দুর্দশার ছবিই ফিরছে লাল-সাদা শিবিরে। কোচ এবং সব বিদেশি বদলেও একই হাল। কিন্তু আপনার দল তো গোলই পাচ্ছে না? প্রশ্ন শুনে কপেলের মুখ থেকে বেরোয়, ‘‘এই লিগ ১০০ মিটারের স্প্রিন্ট নয়। ৪০০ মিটারের দৌড়। আরও সময় আছে। তবে শুরুতে জিততে পারলে ভাল হত।’’
কিন্তু শুরুতেই ধাক্কা খাওয়ার পরে সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো এই এটিকের পক্ষে কী সম্ভব? বিশেষ করে স্টিভের যা ফুটবল দর্শন! গতবার লিগ টেবলে যে দলটি সবার শেষে ছিল, তাদের কাছেই নতজানু হলেন কালু উচেরা। ম্যাচের শেষ মিনিটে রাওলিন বর্জেসের গোলে পাহাড়ি দলটি শুধু জিতলই না, দেখিয়ে দিল এলকো সাতোরির মতো সাহসী কোচ থাকলে কঠিন ম্যাচও সহজে জেতা যায়। সবচেয়ে বড় কথা ফেড্রিকো গেলেগোর কর্নারে যখন বর্জেস হেড করছেন তখন তাঁর ধারেকাছে কোনও এটিকে ফুটবলারই ছিলেন না।
কেরলের কাছে হারের পরে স্ট্রাইকার বলবন্ত সিংহকে উইংয়ে খেলানো নিয়ে তীব্র সমালেচনার মুখে পড়েছিলেন কপেল। এ দিন দেখা গেল গত বার গোয়ার জার্সিতে তেরো গোল করা লানসারোতির সঙ্গে বলবন্তকে জুড়ে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক হতে চাইছে এটিকে। বলবন্ত স্ট্রাইকারে চলে আসায় এভার্টন স্যান্টোসকে উইংয়ে চলে যেতে হয়েছিল। তাতে শুরুতে আক্রমণের ধার বাড়ল বটে, তবে গোল হয়নি। দুটো সুযোগ নষ্ট করলেন লানসারোতি।
ম্যাচের বত্রিশ মিনিটেই লালকার্ড দেখে বাইরে চলে গেলেন এটিকের লেফট ব্যাক সেনা রালতে। বিপক্ষের নিখিল কদমকে ফাউল করেছিলেন তিনি। প্রায় আটান্ন মিনিট দশজনে খেলতে হল কলকাতাকে। ম্যাচের সেটাই টার্নিং পয়েন্ট। রালতে কার্ড দেখে বেরনোর পরে কপেলের হাতে আর কোনও অস্ত্র ছিল না। ফলে ৪-৪-১ ফর্মেশনে গোল রোখার চেষ্টায় নেমে পড়ল কলকাতার দল। সেই সুযোগটাই নিলেন সাতোরি।
স্পেনে প্রায় পঁচিশ দিন অনুশীলন করে এসেছে এটিকে। প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে পাঁচটা। কিন্তু এখনও তাদের রক্ষণ জমাট বাঁধেনি। বিশেষ করে দুই বিদেশি স্টপার জনসন ও ভিয়েরার মধ্যে মাঝেমাঝেই ফাঁক তৈরি হচ্ছে। সরলরেখায় দাঁড়িয়েও পড়ছেন দু’জনে। যে সুযোগটা উদ্বোধনী ম্যাচে নিয়েছিল কেরল, এ দিন সেই সুযোগটাই নিল পাহাড়ি দলটি। বিশেষ করে প্যারিস সাঁ জারমাঁর প্রাক্তনী ওগবেচে। রোনাল্ডিনহোর সঙ্গে খেলে আসা ওগবেচে দু’টো সহজ সুযোগ নষ্ট করলেন ওই সময়। সেটা না করলে আরও বেশি গোলে জিতত নর্থ-ইস্ট।
পেপ গুয়ার্দিওয়ালার ভক্ত এলকো কিন্তু এ দিন শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক মনোভাব নিয়ে দল নামিয়েছিলেন। পাহাড়ি দলটির মধ্যে একটা আগ্রাসী মনোভাব ছিলই। দুই উইং দিয়ে আক্রমণ এবং পাসিং— দু’জায়গাতেই তারা অনেক এগিয়ে ছিল কলকাতার চেয়ে। সেই সাহসের ফল এলকোর দল পেল শেষ মিনিটে।
এটিকে: অরিন্দম ভট্টাচার্য, আইবর লংখোংজি, জন জনসন, গার্সন ভিয়েরা, সেনা রালতে, জয়েশ রানে (রিকি লালমানওয়ামা), ম্যানুয়েল লানজেরেতি (কালু উচে), প্রণয় হালদার, নউসেয়ার মাইমউনি, বলবন্ত সিংহ (হিতেশ শর্মা), এভার্টন স্যান্টোস।
নর্থ ইস্ট ইউনাইটেড: রেহনেশ টিপি, রেগান সিংহ, মিসলাভ কোমোরোস্কি, মোতো গারজিক,রবার্ট লালথুয়ামানা (প্রভাত লাকড়া), রিদাম থালাং, নিখিল কদম (লালথাঙ্গা) রাওলিন বর্জেস, জোস রোমানা লুইডো (অগস্টিন ওখরা), ফ্রেড্রিকো গেলেগো, বার্থেলেমেউ ওগবেচে।