লিগের লড়াইয়ে কোনও ফাইনাল থাকে না। তাই ফাইনাল ম্যাচ খেলার উত্তেজনাটাও পাওয়া যায় না। অথচ সেই অসাধারণ ব্যাপারটাই ঘটতে চলেছে এ বার।
হিরো আই-লিগের গ্র্যান্ড ফিনালে!
রবিবারের মোহনবাগান বনাম বেঙ্গালুরু এফসি ম্যাচ কোনও মেগা ফাইনালের থেকে কম নয়। ভেবে দেখুন, ঠিক কত বার কোনও লিগে এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হয় যেখানে লিগের সেরা দু’টো টিম শেষ ম্যাচে চ্যাম্পিয়নশিপের যুদ্ধে মুখোমুখি! আর লড়াইটা এমন সমানে-সমানে, যে জিতবে সে-ই ট্রফি ছিনিয়ে নেবে অন্যের মুঠো থেকে। ক্লাইম্যাক্সের এর চেয়ে জমজমাট চিত্রনাট্য আর হয় না।
ইংল্যান্ড হলে, মরসুমটা লিগের সর্বকালের অন্যতম সেরা সংস্করণ হিসেবে ইতিহাসে ঢুকে পড়ত। ভারতেও কিন্তু সেটাই হওয়া উচিত। আই লিগের অসাধারণ একটা মরসুম শেষ হতে চলেছে। আমি নিজে ম্যাচটার জন্য মুখিয়ে আছি। জেতার জন্য দু’টো টিমকেই মাঠে নিজেদের সমস্ত শক্তি উজাড় করে দিতে হবে। দু’পক্ষকেই শুভেচ্ছা জানাই। আশা করি যারা সে দিন সেরা ফুটবল খেলবে, তারাই জিতবে।
তবে এ বারের আই লিগ অন্য মাত্রার। শুধুমাত্র চ্যাম্পিয়নশিপ যুদ্ধের জন্য নয়। রেলিগেশনের লড়াইটার দিকে তাকালে বুঝবেন ঠিক কী বলতে চাইছি। সেখানেও টক্করটা কিন্তু নেহাত কম চিত্তাকর্ষক নয়। খাঁড়া ঝুলছে চারটে টিমের উপর। মাঠে নেমে নিজেদের কাজ ঠিকঠাক করায় এক চুল ভুল করে বসলেই খাঁড়ার কোপ পড়বে ঘাড়ে। শেষ রাউন্ডের আগে ওখানেও তাই লড়াইটা একদম ওপেন। সব মিলিয়ে আমি দারুণ উত্তেজিত হয়ে আছি।
আই লিগ এ বারই প্রথম এতটা মন দিয়ে দেখছি। আর এই লিগ নিয়ে আমার প্রথম ধারণা যেটা তৈরি হয়েছে, সেটা মনে যথেষ্ট দাগ কাটার মতো। যেটা দেখে সবচেয়ে ভাল লাগছে, আই লিগে দেশের প্রায় সব প্রান্তের টিম খেলছে। অর্থাৎ, ভারতে ফুটবলটা অনেক বেশি ছড়িয়েছে। ফুটবলের উন্নয়ন ঘটানোর সুযোগও তাই এখন বেশি। যা খুবই আশার কথা। আগে দেখেছি, ফুটবল ক্লাবগুলো মূলত ছড়িয়ে ছিল দু’টো রাজ্যে। কিন্তু এখন ছবিটা অনেক পাল্টেছে। দেখে বোঝা যায়, খেলাটা নিয়ে উৎসাহ অনেক বেশি ছড়িয়ে গিয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
আমার সবচেয়ে বেশি মনে ধরেছে ক্লাবগুলোর মানসিকতায় পরিবর্তনটা। সংগঠন আর পরিকাঠামোর দিক থেকে উন্নতি তো হয়েইছে। টিমগুলো এখন ফুটবলারদের কল্যাণের দিকটা নিয়েও ভাবছে।
কোচেরা স্পোর্টস মেডিসিন আর ক্রীড়া বিজ্ঞানকে গুরুত্ব দিতে শুরু করেছে। দশ বছর আগে যখন ভারতে ছিলাম, তখনও কিন্তু এ সব দেখিনি। মানতেই হবে, ভারতীয় ফুটবল অনেক বদলে গিয়েছে।
স্পোর্টস মেডিসিন টিমের সেরা প্লেয়ারদের বড় ম্যাচগুলোর জন্য সেরা ফিটনেসে তৈরি থাকতে সাহায্য করে। আমরা তো জাতীয় দলে ফুটবলারদের ফিটনেস মাপতে জিপিএস সিস্টেমও ব্যবহার করছি। আর সেই প্রযুক্তির সাহায্যে যে সব পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, এক কথায় অবিশ্বাস্য! অনেক সময়েই আমরা খুব সহজে কোনও প্লেয়ারকে কুঁড়ে বা সহজেই ক্লান্ত বলে তকমা লাগিয়ে দিই। কিন্তু বোঝার চেষ্টা করি না, তাদের শরীরের ভিতরে সমস্যাটা ঠিক কী হচ্ছে। জিপিএস-এর সাহায্যে কিন্তু এই অজানা তথ্যগুলোই উঠে আসছে। যার ফলে প্লেয়ারকে অনেক বেশি তার ফিটনেস সংক্রান্ত প্রয়োজন বুঝে নিয়ে সাহায্য করা যাচ্ছে।
আর একটা ভাল লক্ষণ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মতো জায়গা থেকে উঠে আসা দুই ক্লাবের আই লিগে দাপটে খেলা। এই অঞ্চল থেকে আগেও ভাল ফুটবলার উঠেছে। কিন্তু ক্লাব থাকলে আরও অনেক প্রতিভা ওখান থেকে নিজেদের মেলে ধরার সুযোগ পাবে। একই ভাবে বাংলা জুড়ে ফুটবল প্রতিভার বিশাল ভাঁড়ার রয়েছে। এই রাজ্য জাতীয় টিমকে বহু ফুটবলার দিয়েছে। আমার বিনীত আর্জি, বাংলার ফুটবলারদের দিকে আরও একটু দৃষ্টি দেওয়া হোক। প্রশিক্ষণ আর ফিটনেস গড়ে তোলার আরও সুযোগ তৈরি করা হোক ওদের জন্য।
ভারতীয় ফুটবল একটা নতুন প্রজন্মকে তৈরি হতে দেখছে। যারা প্রতিভাবান, ক্ষুধার্ত আর তরতাজা। জাতীয় দলে নতুন মুখের ভিড়ের দিকে তাকালেই সেটা বুঝবেন।
ভারতীয় ফুটবলে একটা নতুন যুগ কিন্তু শুরু হওয়ার অপেক্ষায়!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy