Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

আমাদের হারাতে ব্রাজিলকে আরও ভাল হতে হবে, কটাক্ষ হামেসের

সান্তিয়াগো মাঠে নামার আগে যখন ক্যাপ্টেন্স আর্মব্যান্ড বাঁধবেন সেলেকাও অধিনায়ক, বছরখানেক আগের ফোর্তালেজা কি তাঁর ভাবনায় থাকবে? জুলাইয়ের সেই অভিশপ্ত রাতে শেষ হয়ে গিয়েছিল নেইমার দ্য সিলভা জুনিয়রের বিশ্বকাপ। মেরুদণ্ডে চোট পেয়েছিলেন একজন, ভেঙে গিয়েছিল একটা দেশের কাপ-স্বপ্নের শিরদাঁড়া। বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালের রক্তক্ষয়ী সেই যুদ্ধের পর ফের লড়াইয়ে নামছে ব্রাজিল আর কলম্বিয়া।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৫ ০৩:৪৪
Share: Save:

সান্তিয়াগো মাঠে নামার আগে যখন ক্যাপ্টেন্স আর্মব্যান্ড বাঁধবেন সেলেকাও অধিনায়ক, বছরখানেক আগের ফোর্তালেজা কি তাঁর ভাবনায় থাকবে?
জুলাইয়ের সেই অভিশপ্ত রাতে শেষ হয়ে গিয়েছিল নেইমার দ্য সিলভা জুনিয়রের বিশ্বকাপ। মেরুদণ্ডে চোট পেয়েছিলেন একজন, ভেঙে গিয়েছিল একটা দেশের কাপ-স্বপ্নের শিরদাঁড়া।
বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালের রক্তক্ষয়ী সেই যুদ্ধের পর ফের লড়াইয়ে নামছে ব্রাজিল আর কলম্বিয়া। ফের মুখোমুখি নায়ক আর তাঁর ঘাতক। নেইমারের সামনে ফের হুয়ান ক্যামিলো জুনিগা। আর দুই প্রতিবেশী দেশের ফুটবল সমাজ জুড়ে একটা শব্দের অনুরণন— বদলা।
পরিসংখ্যানের দিক দিয়ে দেখলে ব্রাজিল-কলম্বিয়ার এক পংক্তিতে আসার কথা নয়। দুই দেশ একে অন্যের মুখোমুখি হয়েছে সাতাশ বার। তার মধ্যে ব্রাজিল হেরেছে মাত্র দু’বার।
হয়তো তাই কলম্বিয়ার তারকা হামেস রদ্রিগেজ প্রতিশোধ-প্রসঙ্গটা এড়িয়ে যাচ্ছেন। ফোর্তালেজায় যাঁকে কম হয়রান করেনি ব্রাজিল ডিফেন্স। যে ম্যাচটা তাঁর কাছেও কম হতাশার নয়। নেইমার ছিটকে গেলেও ব্রাজিল বিশ্বকাপে টিকে ছিল, কিন্তু তাঁর টিম সে দিনই ফেরার টিকিট কেটে ফেলেছিল।

তবু হামেস বলছেন, এই ম্যাচটা তাঁদের সামনে বাড়তি গুরুত্ব নিয়ে আবির্ভূত হয়নি। এই ম্যাচটা নাকি অন্য যে কোনও ম্যাচের মতোই। তবে হ্যাঁ, ম্যাচটা তাঁদের জিততেই হবে। কারণ ভেনেজুয়েলার কাছে প্রথম ম্যাচ হেরে কলম্বিয়ার অবস্থা মোটেও স্বস্তির নয়। ‘‘এটাকে বিশ্বকাপের রিম্যাচ ভাববেন না কিন্তু,’’ জোর দিয়ে যেমন বলছেন হামেস, তেমনই ব্রাজিল-প্রসঙ্গে তাঁর গলায় যথেষ্ট সমীহ। বিশেষ করে দশ নম্বর জার্সি নিয়ে। বিশ্বকাপে গোল্ডেন বুট জয়ী হামেস মনে করেন, নেইমার নিজেকে অবিশ্বাস্য শৃঙ্গে নিয়ে গিয়েছেন। তবে এটাও শুনিয়ে রাখেন, কলম্বিয়াকে হারাতে গেলে নেইমারদের আরও ভাল হতে হবে! কারণ হামেসের বিশ্বাস, ব্রাজিলের আক্রমণাত্মক ফুটবল বিপক্ষের জন্যও সুযোগ তৈরি করে দেয়। তারা খেলে, আবার বিপক্ষকে খেলার স্বাধীনতাও দেয়।

যাদের প্রতি হামেসের এই কটাক্ষ, তাদের এ সবে কান দেওয়ার সময় খুব বেশি নেই। ফুটবল-পাগল দেশ তাদের দশ নম্বর জার্সির বাইরে আর কোনও কিছু নিয়েই খুব একটা ভাবছে না! ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যম থেকে সোশ্যাল মিডিয়া— সর্বত্র নেইমার।

পেরু ম্যাচে তাঁর অপার্থিব পাস নিয়ে যত শব্দ খরচ হয়েছে এবং হচ্ছে, তত বোধহয় কারও গোল নিয়েও হয় না। ওই পাস নাকি অনেককে সেরা ফর্মের পেলেকে মনে করিয়ে দিচ্ছে। যাঁরা বলছেন, কোপায় নেইমারকে ঘিরে ব্র্যান্ড-বাণিজ্য-আবেগের যে বলয় তৈরি হচ্ছে, দক্ষিণ আমেরিকার কোনও ফুটলারকে নিয়ে হয়নি। যাঁরা বলছেন, মেসি-রোনাল্ডো তর্কে এখন ঢুকে গিয়েছে নেইমারের নামও। যাঁরা বলছেন, নেতৃত্বের দায়িত্ব নেইমারকে আরও উজ্জ্বল করে তুলছে। যাঁরা বলছেন, নেইমার অলৌকিক ফুটবল খেলছেন বলেই বিপক্ষ নাকি হিংসেয় বারবার তাঁকে ফাউল করছে!

মাত্র তেইশ বছর বয়সে দেশের স্বপ্ন-আশা-আবদারের একমুখী লক্ষ্য হয়ে উঠেছেন নেইমার। কিন্তু তাঁকে দেখে কে বলবে, এই তরুণের কাঁধ এত বড় দায়িত্ব বয়ে বেড়াচ্ছে। তিনি নিজেও ব্যাপারটা নিয়ে খুব স্বচ্ছন্দ। এই বয়সেই ব্রাজিলের সর্বোচ্চ গোলদাতাদের তালিকায় পাঁচ নম্বরে উঠে আসা তাঁর কাছে খুব স্বাভাবিক। অক্লেশে বলে দেন, ‘‘আমি আরও রেকর্ড করতে চাই। গোল করে হোক, পাস দিয়ে হোক, রেকর্ড করে যাবই।’’

বুধবারের ম্যাচের প্রেক্ষিতে কথাটা শুনলে মনে হতেই পারে, সান্তিয়াগো ম্যাচটা বদলার নয়, একটা অসম যুদ্ধ মাত্র। স্রেফ ফুটবলের বিচারে দেখতে গেলে ব্যাপারটা অনেকটা সে রকমই। ইতিহাস, তারকা-উপস্থিতি, বর্তমান ছন্দ, সবের নিরিখে ম্যাচটা ভারত বনাম জিম্বাবোয়ে। কিন্তু এর বাইরেও লাতিন ফুটবলে আবেগ নামক একটা বস্তু আছে। আর দু’দেশের আবেগ যদি একমাত্র বিচার্য হয়, তা হলে বুধবার ভারত-জিম্বাবোয়ে নয়।

ফুটবলের ভারত-পাকিস্তান!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE