মারিয়া শারাপোভা। উইম্বলডন দৌড় শুরুর আগে লন্ডনের রাজপথে। ছবি ফেসবুক
এমন থমথমে উইম্বলডন কমই দেখেছি। সম্প্রতি পরপর তিন দেশে জঙ্গিহানার জের।
চার দিকে নিরাপত্তা রক্ষীদের তৎপরতা, পুলিস কুকুর, বম্ব স্কোয়াডের প্রস্তুতি— শনিবার সকালে উইম্বলডনে গিয়ে এ সব দেখে যেন কেমন অচেনাই লাগছিল এস ডব্লিউ ১৯-কে। টেনিসের এই বর্ষসেরা উৎসবে আসার সৌভাগ্য প্রায় প্রতি বছরই হয়ে থাকে। কিন্তু কোনও বার চেহারাটা এমন পাল্টে যেতে দেখিনি। এখন না হয় তারকাদের প্র্যাকটিস, অনামীদের নিয়ে বাছাই পর্ব চলছে। কিন্তু সোমবার থেকে যখন মূলপর্ব শুরু হবে! সেরেনা, জকোভিচ, ওয়ারিঙ্কা, শারাপোভারা একসঙ্গে নেমে পড়বে, তখন নিরাপত্তার বহরটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে কে জানে। এমনিতেই এ দিন বারবার আমার পরিচয়পত্র দেখতে চাইছিল নিরপত্তারক্ষীরা। সোমবার থেকে কত রকম নিরাপত্তার বেড়াজাল টপকাতে হবে, জানি না।
এ দিন সকালে উইম্বলডনে গিয়ে শুনি কে এক ছোকরা পাশের এক গল্ফ কোর্স থেকে অল ইংল্যান্ড ক্লাবের আকাশে ড্রোন ওড়াচ্ছিল। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের অফিসাররা তা দেখতে পেয়েই সঙ্গে সঙ্গে তা নামিয়ে নেন। কেন উইম্বলডনের আকাশে ও ভাবে ড্রোন ওড়ানো হচ্ছিল। কোনও খারাপ উদ্দেশ্যে ওড়ানো হচ্ছিল কি না, উইম্বলডনে তা নিয়ে জল্পনাই বেশি শুনতে পাওয়া যাচ্ছে। কে এ বার চ্যাম্পিয়ন হতে পারে, কারা অঘটন ঘটাতে পারে, চ্যাম্পিয়নকে কড়া চ্যালেঞ্জ ছুড়তে পারে কারা, এ সব নিয়ে তেমন আলোচনা শোনা গেল কোথায়?
অল ইংল্যান্ড ক্লাবে ঢুকে পড়া মানে টেনিস গ্রহে ঢুকে পড়া। সেখানে টেনিস ছাড়া অন্য কিছুর প্রবেশ নিষেধ। এটাই বরাবর দেখে আসছি। বলতে বাধ্য হচ্ছি, এ বার কিন্তু ফোকাসটা অন্য দিকে সরে চলে গিয়েছে। জঙ্গি হানা, নিরাপত্তা, কমান্ডো— এই সবের দিকে।
কোর্টের লড়াই নিয়ে যে নতুন করে কিছু আলোচনার আছে, তাও তো নয়। সেই তো নোভাক জকোভিচ আর সেরেনা উইলিয়ামসের দিকেই তাকিয়ে সবাই। ব্রিটিশরা অ্যান্ডি মারের কাছে থেকে যথারীতি অনেক কিছু আশা করে বসে রয়েছে। যদি কিছু থেকে থাকে, তা হল স্ট্যান ওয়ারিঙ্কাকে নিয়ে আলোচনা। ছেলেটা যে ভাবে রোলাঁ গারোর ফাইনালে জোকারকে হারিয়েছিল, তাতে সারা টেনিস দুনিয়ায় ওকে নিয়ে আলোচনা হওয়ারই কথা। গ্রাস কোর্টে ছেলেটা খারাপ খেলছে না। গত বার তো এখানে কোয়ার্টার ফাইনালেও উঠেছিল। আসলে ও এত দ্রুত উন্নতি করতে পারে যে, এটাই ওকে যে কোনও সারফেসে খুব ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ করে তোলে। তা ছাড়া আত্মবিশ্বাসে টগবগ করছে সুইস ছেলেটা। সে দিনই লন্ডনের এক কাগজে দেওয়া ইন্টারভিউয়ে দেখলাম ও বলেছে, ‘‘আমার খেলা কেন পছন্দ করবে জকোভিচ? ও তো জানে, এখন আমি ছাড়া ওকে হারানোর মতো আর কেউ এখন নেই সার্কিটে।’’ কতটা আত্মবিশ্বাস থাকলে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় সম্পর্কে এ রকম কথা বলা যায়! তবে একটা ব্যাপার উইম্বলডনে ওকে সমস্যায় ফেলতে পারে। ফরাসি ওপেনের পর ও গ্রাস কোর্টে মাত্র একটা টুর্নামেন্ট খেলেছে। অ্যাগন চ্যাম্পিয়নশিপে। তাও আবার দ্বিতীয় রাউন্ডেই হেরে ছিটকে যায়। তাই উইম্বলডনে ও কতটা তাড়াতাড়ি মানিয়ে নিয়ে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে, সেটাই দেখার।
তবে আমার ফেভারিট অবশ্যই জকোভিচ। ড্রয়ে ওয়ারিঙ্কা ওর দিকেই রয়েছে। ফলে নিশ্চিন্তে প্রথম দিকের রাউন্ডগুলো খেলতে পারবে জোকার। বরং যা ড্র তৈরি হয়েছে দেখলাম, তাতে অ্যান্ডি মারের চিন্তা অনেক বেশি। কোয়ার্টার ফাইনালে ওকে রাফায়েল নাদালের মুখোমুখি হতে পারে। অবশ্য নাদাল যদি ওই পর্যন্ত পৌঁছয়। ওর ফর্ম যে রকম পড়তির দিকে, তাতে ওকে নিয়ে এই সন্দেহই দেখা দিচ্ছে আমার মনে। মারে সেমিফাইনালে পেতে পারে রজার ফেডেরারকে। ইদানীং স্ট্যামিনায় খুব ঘাটতি পড়ছে ফেড-এর। আর ফাইনালে উঠলে মারের সামনে সম্ভবত জোকার। প্রথম রাউন্ডের প্রতিদ্বন্দ্বীও খারাপ নয় মারের। মিখায়েল কুকুশকিন, যে ওর চেয়ে ৫৫ ধাপা পিছিয়ে। এদের মতো প্লেয়াররাই তো অঘটন ঘটায়। তবে সে রকম সম্ভাবনা খুবই কম বলে মনে হয় আমার।
মেয়েদের দিকে একটাই ফেভারিট, সেরেনা উইলিয়ামস। যদিও গত দু’বারই ও পারেনি। গত বার তৃতীয় রাউন্ডে ছিটকে গিয়েছিল। তবে এ বার যা পারফরম্যান্স দেখছি ওর, তাতে ও নিজে বড় ভুল না করলে গত দু’বারের মতো ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা কম। যদি কেউ হারানোর ক্ষমতা রাখে ওকে, সে মারিয়া শারাপোভা ছাড়া আর কেউ না। সেরেনার যা ড্র পড়েছে দেখলাম, তাতে শারাপোভা, আনা ইভানোভিচ ও ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কাদের হারিয়ে ওকে খেতাব জিততে হবে। কাজটা কঠিন। তবে সেরেনার পক্ষে অসম্ভব হবে বলে মনে হয় না। তবে গত বারের চ্যাম্পিয়ন পেত্রা কিভিতোভা আর রানার্স ইউজনি বুশার্ডের দিকে অবশ্যই নজর রাখব। উইম্বলডনকে তো এরাই মাঝে মাঝে দূর্ঘটনার ধাক্কায় কাঁপিয়ে দেয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy