Advertisement
E-Paper

বিরাটের দল ভাল, বদল চান না কপিল

ওভালে হারের পরে হাঁটু কেঁপে যাওয়া প্রতিক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট মহলে। এমনকি, প্রাক্তন ক্রিকেটারেরাও অনেকে সরব। কেউ কেউ দাবি তুলছেন যে, কোচিং পদ থেকে দল, সব কিছুতেই পরিবর্তন আনো।

সুমিত ঘোষ 

শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:৪১
কপিল দেব।

কপিল দেব।

ইংল্যান্ডে সফলতম ভারত অধিনায়ক? কোনও তর্কেরই অবকাশ নেই। তিরাশির লর্ডসে আন্ডারডগ হিসেবে ক্লাইভ লয়েডের বিশ্বত্রাস ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জেতা। তার পর ছিয়াশিতে গুচ, গ্যাটিংদের ইংল্যান্ডকে ২-০ হারিয়ে টেস্ট সিরিজ জয়।

তিনি কপিল দেব— এ বারের বিরাট কোহালির দলের ১-৪ পরাজয় দেখে হতাশ। তবে ভারতীয় ক্রিকেটে ভূমিকম্প ঘটে যাওয়ার মতো প্রতিক্রিয়া দেখাতে নারাজ। বুধবার সকালে আনন্দবাজারকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে দেশের সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার বলে দিলেন, ‘‘আমি এই ১-৪ স্কোরলাইনটা দেখে হতাশ। কিন্তু কেন আমি হতাশ জানেন? কারণ, আমি বিশ্বাস করি এই সিরিজটায় আমাদের দল অনেক ভাল করতে পারত। এমনকি, আমার মনে হয়, ভারত জিততেও পারত।’’

ওভালে হারের পরে হাঁটু কেঁপে যাওয়া প্রতিক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট মহলে। এমনকি, প্রাক্তন ক্রিকেটারেরাও অনেকে সরব। কেউ কেউ দাবি তুলছেন যে, কোচিং পদ থেকে দল, সব কিছুতেই পরিবর্তন আনো। কপিল তাঁদের শান্ত হতে বলছেন, ‘‘আমি কিন্তু মনে করি বিরাটরা দেখিয়েছে, ওরা বেশ ভাল দল। দুর্ভাগ্যবশত, স্কোরলাইনটাকে ওরা নিজেদের অনুকূলে আনতে পারেনি এবং সেটা একটা ব্যর্থতা বটেই। কিন্তু ভাল করে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে পাঁচ টেস্টের সিরিজে তিন থেকে চারটি টেস্ট ভারত জিততেও পারত।’’ দ্রুত যোগ করলেন, ‘‘আমার মনে হয়, সুযোগ তৈরি করেও সেটা বার বার হারালাম কেন, এটা নিয়ে বেশি আলোচনা, পোস্টমর্টেম হওয়া দরকার। কারও গর্দান চাওয়ার সময় এটা নয়।’’ সিরিজ নিয়ে তাঁর আরও বিশ্লেষণ, ‘‘দলগত ভাবে ইংল্যান্ড আমাদের চেয়ে ভাল ব্যাটিং করেছে। কিন্তু আমাদের বোলারদের প্রশংসা করতে চাই। ওরা হৃদয় উজাড় করে দিয়ে বল করেছে। পেস বোলারদের এই জানপ্রাণ লড়িয়ে বল করা দেখে আমি সত্যিই খুব খুশি।’’

সিরিজ হারার পরে অনেক প্রাক্তন ক্রিকেটার এবং অধিনায়ক যেখানে কোহালির দলকে আক্রমণ করছেন, তাঁর দিক থেকে কেন এত সংযত প্রতিক্রিয়া? কপিলের তৎক্ষণাৎ জবাব, ‘‘কারণ, আমি মনে করি এই ভারতীয় দলটা ভাল। ওদের জেতার ক্ষমতা রয়েছে, সেটা দেখিয়েছে। ওদের যোগ্যতার প্রতি আমার বিশ্বাস আছে। কাছাকাছি গিয়েও সীমানা অতিক্রম করতে পারেনি। সেই খুঁতটা সারাতে হবে। সেটা বাদ দিলে সব বিভাগেই কিন্তু দলটা ভাল। ব্যাটিং ভাল, বোলিং ভাল, ফিল্ডিং তো দারুণ। তফাত হয়েছে একটা জায়গাতেই। ইংল্যান্ড আমাদের চেয়ে ভাল ব্যাটিং করেছে।’’

এমন একটা সময়ে তিনি পেস বোলিংকে বেছে নিয়েছিলেন, যখন ভারত বলতে চোখ বুজে লোকে বলত স্পিনারের দেশ। নতুন বলে বোলিং করতেন সুনীল গাওস্কর, আবিদ আলিরা। যাতে তাঁরা তাড়াতাড়ি পালিশ তুলে দেওয়ার পরে বেদি, চন্দ্র, প্রসন্ন, বেঙ্কট এসে স্পিনের জাল বুনতে পারেন। সেই ইতিহাসকে প্রথম পাল্টে দিতে শুরু করেছিলেন কপিলই। ভারতীয় ক্রিকেটের চিরকালীন রূপকথায় ঢুকে রয়েছে তাঁর সেই কিশোর বয়সের কাহিনি। কোচিং ক্যাম্পে গিয়ে দু’টো রুটি হাতে পাওয়ার পরে তিনি বলেন, ‘‘আমি পেস বোলার হতে চাই। দু’টো রুটিতে আমার কী হবে? চারটে দাও।’’ সে দিন কপিলকে পাল্টা কটাক্ষ শুনতে হয়েছিল, ভারতে আবার পেস বোলার! ও সব এখানে হয়-টয় না!

এখন সেই ভারতের জার্সিতেই চার পেসার রাজ করছে। প্রতিপক্ষের চেয়েও যাঁরা জোরে বল করছেন। কেমন লাগছে সেই দৃশ্য দেখতে? ‘‘আমি অত্যন্ত খুশি,’’ ফোনের ও প্রান্তে উত্তেজিত শোনায় কিংবদন্তিকে, ‘‘এত দিনে যে বোঝানো গিয়েছে, ফাস্ট বোলাররা ম্যাচ জেতায়, সেটা দেখে বেশ শান্তি পাচ্ছি। আমার মনে হয়, বিরাটের এই দলটা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে ওদের ফাস্ট বোলারদের জন্য।’’ তাঁর আরও ব্যাখ্যা, ‘‘তোমার দলে যতই দুর্ধর্ষ ব্যাটসম্যান থাকুক, ম্যাচ জিততে গেলে ভাল বোলার দরকার। ভাল ফাস্ট বোলার দরকার। ইংল্যান্ডে এই সিরিজ আমাকে আশাবাদী করে তুলেছে ভারতের পেস বোলিং বিভাগের সাফল্যের জন্য।’’

কথা উঠেছে, কোচিং স্টাফে বদল আনার। কয়েক জন প্রাক্তন অধিনায়ক কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছেন হেড কোচ রবি শাস্ত্রী এবং ব্যাটিং কোচ সঞ্জয় বাঙ্গারকে। আপনার কী মনে হয়? জিজ্ঞেস করায় কপিলের জবাব, ‘‘শুধুমাত্র এই সিরিজের ফলের উপর ভিত্তি করে যদি কোচিং বিভাগে বদল আনার কথা ওঠে, সেটা খুবই অন্যায় হবে।’’ তার পরেই প্রাক্তন অধিনায়ক বা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে তাঁর পর্যবেক্ষণ, ‘‘আমাদের মতো প্রাক্তন ক্রিকেটার, যারা বিচার-বিশ্লেষণ করতে বসছি প্রত্যেক দিন, তাদের কিছু দায়দায়িত্ব আছে। ক্রিকেট খেলায় একটা লোক কেন শুধু ফলাফল আর স্কোরকার্ড দেখে বিচার করবে? সেটা সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া হতে পারে কারণ, তাঁরা সব সময় ফলই শুধু পেতে চাইবেন।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘ম্যানেজমেন্ট বদলের দাবি তুলে দেওয়া সহজ। কিন্তু আগে তো এই প্রশ্নটার উত্তরও পেতে হবে যে, ম্যানেজমেন্টে বদলে ছবিটা পাল্টাবে কি পাল্টাবে না?’’

আপনার কি মনে হয়, ইংল্যান্ডে ১-৪ ফলের পরে ভারতীয় দলে নতুন ছেলেদের নিয়ে আসা উচিত? প্রশ্ন শুনে কপিল ফের সেই সোজাসাপ্টা। বলে দিলেন, ‘‘আমি নির্বাচক নই। আর হতেও চাই না। দল নির্বাচন করা কোচ, অধিনায়ক, নির্বাচকদের কাজ। দূরে বসে তার মধ্যে নাক গলানো আমাদের উচিত নয়।’’ সেই পুরনো কপিল। হরিয়ানা হারিকেন!

Cricket Test India England Kapil Dev
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy