সুযোগ: কাশ্মীর থেকে এ বার আইপিএলে খেলার সুযোগ দারের।
গ্রামটায় পা দিলেই বোঝা যাবে যে, একটা উৎসব শুরু হয়ে গিয়েছে। কানে আসবে মহিলাদের কণ্ঠে কাশ্মীরি লোকগীতি। দেখা যাবে, অতিথিদের মধ্যে বিলি করা হচ্ছে মিষ্টি। পুরোপুরি উৎসবের মেজাজ।
এই উৎসবের কেন্দ্রে একজনই। শিগন পোরা সোনাওয়ারি গ্রামের ২৪ বছরের তরুণ ক্রিকেটার মনজুর আহমেদ দার। গ্রামে যাঁর পরিচিতি পাণ্ডব নামে। তাঁদের আদরের পাণ্ডব এ বারের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে সুযোগ পাওয়ার পরেই উৎসব লেগে গিয়েছে গ্রাম জুড়ে।
সদ্য সমাপ্ত আইপিএল নিলামে কিংগস ইলেভেন পঞ্জাব তুলে নিয়েছে এই অলরাউন্ডারকে। যে টিমে রয়েছেন যুবরাজ সিংহ, আর. অশ্বিনের মতো তারকারা। কাশ্মীর থেকে আইপিএলে যিনি শেষ খেলেছিলেন, তাঁর নাম পরভেজ রসুল। তার পরে দার-ই কাশ্মীর থেকে দ্বিতীয় ক্রিকেটার যিনি আইপিএলে খেলার সুযোগ পেলেন। পরভেজের সঙ্গে দারের আরও একটা মিল আছে। দু’জনেই অলরাউন্ডার। তবে রসুল ছিলেন স্পিনার। আর ডান হাতে ব্যাট করার পাশাপাশি পেস বলটাও করেন দার। গত বছর বিজয় হাজারে ট্রফিতে জম্মু-কাশ্মীরের প্রতিনিধিত্বও করেছেন এই অলরাউন্ডার।
তরুণ এই ক্রিকেটারের জীবন অবশ্য আদৌ ফুলে ভরা ছিল না। বরং এত দিন সেখানে কাঁটার আধিক্যই ছিল বেশি। কখনও ছুতোর মিস্ত্রি, কখনও বা ব্যাঙ্কের নিরাপত্তাকর্মী— নানা ধরনের কাজ করে জীবন কাটাতে হয়েছে তাঁকে। হঠাৎই আইপিএলের এই চুক্তি নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছে
এই তরুণকে।
বাড়িতে ঢোকার সময়ই দেখা হয়ে গেল দার-এর বাবা এবং মায়ের সঙ্গে। আর তিনি কোথায়? জনা পঞ্চাশেক স্থানীয় তরুণের সঙ্গে বসা ক্রিকেটার আনন্দবাজারকে বলে দিলেন, ‘‘আমার জীবনের অত্যন্ত খুশির একটা মুহূর্ত। আইপিএলে খেলার সুযোগ পেলে আমিও ধোনির মতো ছয় মারতে চাই।’’ পাশাপাশি আরও একটা লক্ষ্যকে সামনে রেখে এগোতে চান দার। কী সেটা? নিজের ভাই, বোন, পরিবারের দেখভাল করা। দার বলছেন, ‘‘আমি চাই, ওরা সবাই যেন পড়াশুনা চালিয়ে যেতে পারে।’’
বাইশ গজের বাইরের লড়াই যে তাঁকে কতটা নিংড়ে নিয়েছিল, সেটা বোঝা যায় দারের কথা শুনলেই। ‘‘আমি যখন প্রথম আইপিএল নিলামে দল পাওয়ার ব্যাপারটা জানলাম, তখন মনে পড়ে যাচ্ছিল সে সব দিনের কথা। যখন দিনমজুর হিসেবে আমার আয় ছিল ষাট টাকা। প্রীতি জিন্টা ম্যাডামকে ধন্যবাদ, আমাকে এই সুযোগটা দেওয়ার জন্য।’’
ডিসেম্বরে দিল্লিতে ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে যুবরাজ সিংহের বিরুদ্ধে খেলার অভিজ্ঞতা আছে দারের। যা নিয়ে এই কাশ্মীরি তরুণ বলছেন, ‘‘সে দিন যুবরাজদের বিরুদ্ধে খেলেছিলাম। কিন্তু কোনও দিন ভাবিনি যুবরাজ সিংহের সঙ্গে একই টিমে খেলার সুযোগ পাব। আমি এও আশা করব, যুবরাজ আমাকে পরামর্শ দেবে। আমাকে গাইড করবে।’’
আর তাঁর বন্ধুরা কী বলছেন? শোনা যায়, দার আইপিএলে খেলার সুযোগ পেয়েছেন শোনার পরে নাকি ৩০ হাজার মানুষ এসে তাঁর বাবা-মাকে অভিনন্দন জানিয়ে যান। দারের বন্ধুরা নিশ্চিত, আইপিএল এক নতুন তারকার জন্ম দেবে। দারের কথা উঠতেই প্রায় এক সুরে তাঁরা বলছেন, ‘‘ওর জন্য আমাদের দারুণ গর্ব হচ্ছে। আমরা তাকিয়ে আছি সেই মুহূর্তটার দিকে, যখন ও আইপিএলে খেলতে নামবে।’’ তাঁদের বন্ধু যে আইপিএলে সফল হবেন, সে ব্যাপারেও নিশ্চিত এই তরুণরা। ‘‘আমরা ওর সঙ্গে খেলেছি। আমরা জানি, ও কী করতে পারে। ব্যাটে-বলে চমক দেখাবে দার,’’ নিশ্চিত শোনায় ছেলেগুলোর গলা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy