এটিকে-র কাছে হারের পরে আনন্দবাজারের মুখোমুখি কেরল ব্লাস্টার্স কোচ স্টিভ কপেল। ফুটবলার হিসেবে যাঁর সিভিতে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইউটেডের জার্সিতে ৩২২টা ম্যাচ। ইংল্যান্ডের হয়ে ৪২টা।
প্রশ্ন: আপনি কি শুরু থেকেই ফুটবলার হতে চেয়েছিলেন?
কপেল: লিভারপুলে আমার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা। আমাদের শহরে লিভারপুল-এভার্টন মানে পাগলামি। শীতে ফুটবল, গরমে ক্রিকেট। ওই সময় আমাদের কাছে না কম্পিউটর ছিল, না টিভি। পেশাদার ফুটবলার হওয়ার জেদ চাপে তখন থেকেই।
প্র: ফুটবলার না হলে কী হতেন?
কপেল: আসলে ফুটবল আমার জীবনে একটু দেরিতে আসে। ছোটবেলা থেকে ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন থাকলেও পড়াশোনাকেই বেশি গুরুত্ব দিই প্রথমে। ইকোনমিক্সে ডিগ্রি পাওয়ার পরে মনে হয়েছিল, ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন বোধহয় শেষ। ওই সময় ঠিকও করে ফেলেছিলাম, শিক্ষক হব। ইকোনমিক্স অথবা ফিজিক্যাল এডুকেশন পড়াব। কিন্তু ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড সব বদলে দিল।
প্র: আপনার শহরে তো ফুটবল খুব জনপ্রিয়। ভারতে সেটা করতে হলে কী দরকার?
কপেল: সবার আগে খুব ভাল ঘাসের মাঠ লাগবে। ফুটবলের প্রতি ভালবাসা শুরু হয় মাঠ থেকেই। এখানের বেশির ভাগ মাঠ এবড়ো-খেবড়ো। এই সব মাঠে খেলা যেমন বিপজ্জনক, তেমনই আকর্ষণও কমে যায়। নতুন প্রজন্মকে তুলে আনতে হলে আরও ভাল ট্রেনিংয়ের সুবিধে দিতে হবে।
প্র: আপনার বাড়িতে আপনি ছাড়া কোনও স্পোর্টসম্যান আছেন?
কপেল: সেই ভাবে নয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমার বাবা একজন কলের মিস্ত্রি ছিলেন রয়্যাল নেভিতে। বাবা ভাল ফুটবলার হলেও যুদ্ধের জন্য কখনও নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে পারেননি। কেন না যে সময় উনি পেশাদার ফুটবল ক্লাবে খেলার জন্য ডাক পান, সে সময়ই যুদ্ধে চলে যেতে হয়। আমার মা একটা প্রতিবন্ধী স্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন। তবে আমি এখনও মনে করি বাবার মধ্যে পেশাদার ফুটবলার হওয়ার সব গুণ ছিল। কিন্তু যুদ্ধের জেরে সেটা হয়নি।
প্র: আপনার আইডল কে?
কপেল: খুব কঠিন প্রশ্ন। এত নাম আছে যে বলে শেষ করা যাবে না। তাও মাঠের বাইরে আর মাঠের ভেতর দু’টো দিক বিচার করলে কেভিন কিগান।
প্র: মারাদোনা না পেলে, কে সেরা?
কপেল: আমার কাছে সেরা পেলে। প্রথমত তো ও আমার সময়ের। আর পেলে একটা কাজ করেছে যেটা ফুটবলে সবচেয়ে কঠিন — গোল। পেলে প্রায় এক হাজারের বেশি গোল করেছে ওর কেরিয়ারে। যখন ভাবি সংখ্যাটা ১০০০, তখন আর কাউকেই ওর সমতুল্য লাগে না। ও যে টিমে খেলত, তারা ৮০-৯০টা করে ম্যাচ খেলত বছরে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ তো আছেই। যেগুলো খেলে ও টাকা জোগাড় করত ওর ক্লাব স্যান্টোসের জন্য।
প্র: চোট আপনার জীবনের একটা বড় সেটব্যাক...
কপেল: (একটু চুপ) মন ভেঙে দিয়েছিল। ডাক্তারের কথাগুলো এখনও মনে আছে— ‘সরি স্টিভ। তুমি আর পেশাদার ফুটবল খেলতে পারবে না।’ মাত্র আঠাশ বছর বয়সে আমার বাচ্চাদের সঙ্গে ফুটবল খেলার সময় চলে এসেছিল। প্যাক আপ হয়ে যায়। তবে আমি হাল ছাড়িনি। তখন আমি ম্যানেজার হওয়ার জন্য পরিশ্রম শুরু করি। আর হয়তো এত কম বয়সে এই লাইনে চলে আসি বলে আজ আমার ১০০০-এর বেশি ম্যাচ খেলা হয়ে গিয়েছে ম্যানেজার হিসেবে। এটা সবাই করতে পারে না। আমার ধারণা মাত্র ১৯ জনের এই কৃতিত্ব আছে। তাই বলতে পারেন, চোট না লাগলে এই রেকর্ডটা হত না।
প্র: আইএসএলে কেরল ব্লাস্টার্সকে সবচেয়ে দুর্বল দল বলা হচ্ছে!
কপেল: এত তাড়াতাড়ি এত বড় সিদ্ধান্তে চলে আসা ঠিক নয়। আমরা এখনও জিততে পারিনি ঠিকই। তবে মাত্র দু’টো ম্যাচই তো হয়েছে। এক বার ছন্দে চলে আসতে পারলে অন্য রকম টিম হয়ে উঠবে কেরল। মিলিয়ে নেবেন।
প্র: তিন বছরে তিনজন কোচ বদল হয়েছে কেরলে। এই পদকে কি হটসিট বলবেন?
কপেল: সব কোচের পদই হটসিট। তুমি পারফর্ম করতে পারলে আছো। না হলে গুডবাই। তবে কলকাতা, চেন্নাইয়ান কিংবা গোয়ার দিকে তাকালে বোঝা যাবে, এক টিম এক কোচ থাকলে সাফল্যের রেট বাড়ে। এক সঙ্গে থাকলে বিদেশি এবং স্বদেশি ফুটবলারদের মধ্যে একটা বোঝাপড়া তৈরি হয়। কোচেরও সুবিধে হয়।
প্র: এটিকে-কে কেমন লাগল?
কপেল: ফরোয়ার্ড লাইন খুব শক্তিশালী। পস্টিগা-হিউম জুটি টুর্নামেন্টের সেরা।
প্র: আইএসএলে বেশির ভাগ মার্কিরই চোট। আপনার কি মনে হয় মার্কিরা ‘ওয়েস্টেজ অফ মানি’?
কপেল: এটা ঠিক যে যারা এই টুর্নামেন্ট খেলতে আসছে, তারা বেশির ভাগই খেলা ছাড়ার পরে। এবং তাদের বেশি কিছু দেওয়ারও নেই। দেওয়ার ইচ্ছেও নেই। কিন্তু আইএসএল-কে যদি এগোতে হয় তা হলে বর্তমান ফুটবলারদের নিয়ে আসতে হবে। প্রাক্তনদের কাঁধে বন্দুক রেখে বেশি দূর এগোনো সম্ভব নয়। ফুটবলার যারা খেলছে, তাদের নিয়ে আসতে হবে। এতে টুর্নামেন্টের কদরও বাড়বে। নামও হবে।