Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

বহিরঙ্গ ফুরফুরে রেখে কেকেআরে এখন চাপ, আক্ষেপ আর নিয়তি

বিশাল মঞ্চের মাঝখানটা জুড়ে নতুন মডেলের একটা কার্ভ টিভি। তার দু’দিকে দাঁড়িয়ে গৌতম গম্ভীর-সহ টিম কেকেআর। টিভিটা কেমন লাগছে? লাস্যময়ী সঞ্চালিকার প্রশ্নে টিমের ‘জোকারের’ চটজলদি উত্তর, “তোমার কার্ভসের চেয়ে কম সুন্দর!” সঞ্চালিকা একটু অপ্রস্তুত। সামলে উঠে পরের প্রশ্নটা ছুড়ে দিলেন সুনীল নারিনের দিকে— আপনি নাকি আন্দ্রে রাসেলকে হেয়ারকাট দিচ্ছেন? নাইটদের স্পিন মারণাস্ত্র তাঁর অস্ট্রেলীয় সতীর্থের মতো সপ্রতিভ নন।

সইফ আলি খান ও ব্র্যাড হগের সঙ্গে নাইট নেতা। মুম্বইয়ে এক অনুষ্ঠানে। ছবি: টুইটার।

সইফ আলি খান ও ব্র্যাড হগের সঙ্গে নাইট নেতা। মুম্বইয়ে এক অনুষ্ঠানে। ছবি: টুইটার।

প্রিয়দর্শিনী রক্ষিত
মুম্বই শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৫ ০৩:৩৩
Share: Save:

বিশাল মঞ্চের মাঝখানটা জুড়ে নতুন মডেলের একটা কার্ভ টিভি। তার দু’দিকে দাঁড়িয়ে গৌতম গম্ভীর-সহ টিম কেকেআর। টিভিটা কেমন লাগছে? লাস্যময়ী সঞ্চালিকার প্রশ্নে টিমের ‘জোকারের’ চটজলদি উত্তর, “তোমার কার্ভসের চেয়ে কম সুন্দর!”

সঞ্চালিকা একটু অপ্রস্তুত। সামলে উঠে পরের প্রশ্নটা ছুড়ে দিলেন সুনীল নারিনের দিকে— আপনি নাকি আন্দ্রে রাসেলকে হেয়ারকাট দিচ্ছেন? নাইটদের স্পিন মারণাস্ত্র তাঁর অস্ট্রেলীয় সতীর্থের মতো সপ্রতিভ নন। লাজুক ভাবে থেমে থেমে বলেন, “আসলে এটা ক্যারিবিয়ান ব্যাপার। ওর চুলের ছাঁট কেমন হবে, টিমে আমিই সবচেয়ে ভাল বুঝি।”

টার্গেট থ্রি, ইউসুফ পাঠান। দীর্ঘদেহীকে জিজ্ঞেস করা হল, বোলারদের ধোলাই দেওয়াটা তো ভালই পারেন। কোনও ফেভারিট ‘বলি’ আছে কি? হাসতে হাসতে পাঠানের জবাব, “না, না আমি অত দেখি না। যাকে সামনে পাই তারই ধোলাই করি!”

কেকেআর-সমর্থকদের স্বপ্নের এক-একটা ফ্রেম। রাতের ট্রাইডেন্টে মঞ্চে কেকেআর, পাশে সইফ আলি খান! আইপিএলে কেকেআরের প্রথম ম্যাচের আগে ছিলেন, শেষ ম্যাচের আগে আবার। বলে যাচ্ছেন, কেকেআরের ম্যাচ দেখা তাঁর এতটাই নেশা হয়ে গিয়েছে যে ইংল্যান্ডে জিম করতে করতেও ওটা তিনি দেখে থাকেন! মঞ্চ থেকে এ বার নেমে আসুন ভিভিআইপি সিটে। সেখানে কারা? দিলীপ বেঙ্গসরকর। আর পাশের ভদ্রলোক? মহম্মদ আজহারউদ্দিন! ঠিকই পড়লেন—আজহারউদ্দিন।

গ্রুপে কেকেআরের শেষ যুদ্ধের আগে আজহারের উপস্থিতি যতটা চমকপ্রদ, ততটাই বোধহয় রাতের বিরাট কোহলির টিমের কামব্যাকে যাবতীয় অঙ্কের ওলটপালট হয়ে যাওয়া। কেকেআর টিম ম্যানেজমেন্টের সদস্যের মুখটা মনে পড়লেও খারাপ লাগবে। সকালে টিম হোটেলের লবিতে যেটা বলছিলেন। হিসেব দিচ্ছিলেন, যদি সানরাইজার্স শেষ দু’টো ম্যাচ জেতে আর আরসিবি দু’টো হারে, তখন কেকেআর ব্রেবোর্নে হারলেও প্লে অফ হাতের বাইরে যাবে না। ঘটনা হল, ওয়ার্নার-এনরিকের মারণ-ব্যাটিংয়ের যথাযোগ্য মর্যাদা স্টেইনরা দিতে পারলে, হায়দরাবাদের প্লে অফ মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে তো যেতই, কেকেআরেরও সুবিধে হত। অন্তত শনিবারের ব্রেবোর্নে রাজস্থানের কাছে হেরে গেলেও ‘বিদায়’ শব্দটা লেখা সম্ভব হত না।

এ দিন রাত একটার পর হিসেবটা সোজা। কেকেআর শনিবার জিতলে আইপিএলে আছে। প্লে অফে যাবে। হারলে মোটামুটি নেই। কারণ সেক্ষেত্রে শেষ ম্যাচে বিশ্রী হেরে-টেরে আরসিবির রান রেট তখন শেষ অস্বাভাবিক নেমে আসতে হবে। যা কঠিন, মারাত্মক কঠিন। আরও একটা ব্যাপার আছে। যদি সানরাইজার্স বনাম মুম্বই ইন্ডিয়ান্স বৃষ্টি বা অন্য কিছুতে না হয়, পয়েন্ট যদি হয় ভাগাভাগি, তখন হারলেও কেকেআর, মুম্বই আর সানরাইজার্সের পয়েন্ট দাঁড়াবে ১৫। কিন্তু কেকেআরের রান রেট বাকি দুইয়ের চেয়ে ভাল বলে তখন তারা চলে যাবে। কিন্তু সেটা একান্তই ক্রিকেট-নিয়তির আশীর্বাদ।

এমনিতেই ওয়াংখেড়েতে হারের পর নাইটদের মেজাজ অত্যন্ত খারাপ। বহিরঙ্গে টিমটা স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছে। প্যাট কামিন্সের রাস্তা আটকে খুদেরা অটোগ্রাফ চাইলে দেখা গেল তিনি তাদের ফিরিয়ে দিচ্ছেন না। মর্নি মর্কেল সেলফি তুললেন তরুণীর আবদার রেখে। গৌতম গম্ভীর আতঙ্কের অতল খাদের ধারে দাঁড়িয়েও বলে দেওয়ার সাহস দেখালেন যে, ‘‘আমার টিম কারও দিকে তাকিয়ে নেই। আমরা কারও উপর নির্ভর করে নেই। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের নিয়তি আমাদের হাতে।’’ হুঙ্কার দিলেন যে, মরণবাঁচনের ফাঁদে তাঁরা একা পড়ে নেই। আরও অনেকে আছে। কিন্তু নাইটদের আসল সংসার তো তেমন নয়। সেখানে প্রায় রুটিন হয়ে যাওয়া ‘টিম ব্রেকফাস্ট’ বর্জন করা হচ্ছে। স্পনসরদের অনুষ্ঠানের বাইরে প্লেয়াররা নিজেদের মধ্যে গুটিয়ে থাকছেন। মেজাজ তাঁদের এতটাই খারাপ যে টিমের মিডিয়া ম্যানেজারও ক্রিকেটারদের কাছে ঘেঁষতে পারছেন না। গম্ভীর বলছেন বটে, কিন্তু তাঁর টিম ভালই জানে মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবারের হারটা তাদের পায়ের তলা থেকে স্বস্তির ভূখণ্ড অনেকটাই সরিয়ে নিয়েছে। না হলে মুম্বই ম্যাচের হাফসেঞ্চুরির ব্যর্থতা প্রসঙ্গে মুষড়ে পড়েন না ইউসুফ। আফসোস করেন না, শেষ ওভারটা হাতে পেলে কী করতে পারতেন ভেবে।

রাজস্থান রয়্যালসকে হারিয়ে দিলে এগুলোর কোনও কিছুই আর থাকবে না। শান্তির রেশম-জাল আবার ফিরে আসবে। প্রথম দুইয়েও শেষ করার সম্ভাবনা চলে আসতে পারে তখন সামনে। কে না জানে, প্রথম দুইয়ে শেষ করলে বাড়তি একটা ম্যাচের কুশন পাওয়া যায়। যেটা গত বারও পেয়েছে কেকেআর। ব্রেবোর্ন জয় করতে পারলে হয়তো পাবে এ বারও।

পারবে কেকেআর? এক দিকে স্বপ্ন শেষের খাদ। অন্য দিকে, ইডেন ফাইনালের এভারেস্টে ওঠার সিঁড়ি।

কেকেআর অধিনায়ক বলে গেলেন, আপ্রাণ চেষ্টা করবেন। সাকিব-আল-হাসান, তাঁকেও তো পারতেই হবে। কারণ স্ত্রী ‘ফতোয়া’ জারি করেছেন যে, ফাইনালে না উঠলে স্বামীর সঙ্গে দেখা করতেই আসবেন না।

দু’দিন আগে হলে মনে হতে, স্রেফ দাম্পত্যের খুনসুটি। কিন্তু টিমের যা অবস্থান, তাতে মন্তব্যটার সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে দুই বাংলার আবেগের গঙ্গা-পদ্মাও!

কোহলিদের কামাল

মোটামুটি ‘বুক ক্রিকেট’-এর মতো হয়ে দাঁড়ানো আইপিএল ম্যাচে সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে (১১ ওভারে ১৩৫-৩) ডাকওয়ার্থ-লুইস সিস্টেমে এক বল বাকি থাকতে ৬ উইকেটে হারিয়ে টুর্নামেন্টে পরের পর্যায়ে ওঠার ব্যাপারে রীতিমতো টিকে থাকল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (৫.৫ ওভারে ৮৩-৪)। উপ্পলের স্টেডিয়ামে মাঝেমধ্যে বৃষ্টিতে একাধিকবার বিঘ্নিত ম্যাচে হায়দরাবাদের এনরিকে (২২ বলে ৫৭) আর ওয়ার্নার (৩২ বলে ৫২ ন.আ.) যদি চার-ছক্কার ঝড় বইয়ে দেন, তা হলে পাল্টা বাউন্ডারি-ওভার বাউন্ডারির সুনামি দেখালেন বেঙ্গালুরুর গেইল (১০ বলে ৩৫) আর কোহলি (১৯ বলে ৪৪ ন.আ.)। ভুবনেশ্বর কুমারের শেষ ওভারে দুটো দুর্ধর্ষ টাইমিং আর প্লেসিংয়ে মারা বাউন্ডারি-সহ উইনিং শটও বেঙ্গালুরু ক্যাপ্টেনেরই। যেটা আবার বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ করতে দড়ি ছুঁয়ে বাউন্ডারি করে দেন হায়দরাবাদ অধিনায়ক ওয়ার্নার!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE