মুম্বইয়ে নাইটস ডে-আউট। মঙ্গলবার রাজবেশে দুশখাতে, কামিন্স, হগ। নারিন অবশ্য মোহকেই। ছবি টুইটার।
শাহরুখ খান প্রবল ভাবে আছেন।
শাহরুখ খান থেকেও নেই।
আরবসাগরের পারে দেশের ক্রিকেটনগরীতে কেকেআর বনাম মুম্বই ম্যাচ দেখতে যদি কোনও নাইট সমর্থক আসেন, তা হলে ম্যাচ ঘিরে তৈরি আবহ দেখে তাঁর এটাই যুগপত্ মনে হবে। এক দিকে তিনি দেখবেন ওয়াংখেড়ের সিংহদরজা বলিউড বাদশার জন্য আজও বন্ধ। ওয়াংখেড়ে তাঁকে আরও দুটো বছর তার ত্রিসীমানায় থাকতে দেবে না। কিন্তু সঙ্গে তাঁরা এটাও বুঝবেন, মুম্বইয়ে কেকেআর বনাম মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ম্যাচ হবে অথচ কিঙ্গ খান সেখানে দৃশ্য-অদৃশ্য কোনও ভাবেই নেই, এটা ঠিক ততটাই অসম্ভব যতটা বিরাট কোহলি ছাড়া ভারতীয় ক্রিকেট।
প্রশ্নটা সহজ। এবং একমুখী। শাহরুখ খান ওয়াংখেড়েতে ঢুকতে পারবেন না সবাই জানে। কিন্তু তিনি মুম্বইয়েই তো? টিম হোটেলে দেখা গেল নাকি? নাকি মন্নতেই নেমন্তন্নের ডাক পড়ল গোটা টিমের?
যা শুনলে শাহরুখের আশপাশের লোকজন রেগে যাচ্ছেন। টিম ম্যানেজমেন্ট বলছে, গতকাল থেকে আজ বিকেল পর্যন্ত ট্রাইডেন্ট চত্বরে দেখা যায়নি। কেকেআরের এক কর্তা আবার বলে রাখলেন, মন্নতে টিম যাচ্ছে এমন কোনও খবর তাঁর কাছে নেই। তবে শাহরুখ মুম্বইয়েই আছেন।
যদিও এটা নিয়ে দ্বিমত পাওয়া গেল। তথ্যটা পুরোপুরি সংশয়হীন থেকে গেল না। বাদশার কোম্পানির কাউকে কাউকে জিজ্ঞেস করা হলে তাঁরা প্রায় তেড়েফুঁড়ে উঠলেন। শুনিয়ে দেওয়া হল, যত বার কেকেআর ওয়াংখেড়েতে আসবে, তত বারই কি মিডিয়া একই প্রশ্নপত্র নিয়ে হাজির হবে? এটা জেনেও যে, ওয়াংখেড়ে-শাহরুখ ব্যাপারটা অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটা বিষয়। কিঙ্গ খানের কাছে আঘাতের বিষয়। এটা বলা হল, শাহরুখ কোথায়, মুম্বইয়ে না অন্য কোথাও, বলা যাবে না। বলা যাবে, তিনি দেশের যে কোনও একটা প্রান্তে আছেন। শুটিং করছেন। সেই প্রান্ত মুম্বই কি না, গ্যারান্টি নেই।
তাই বলে একেবারেই ভাবা যাবে না যে, টিম মালিক নিয়ে ধোঁয়াশায় আচ্ছন্ন কেকেআর। এটা সত্যি যে, পরোক্ষে একটা ঢাক-গুড়গুড়, একটা অস্বস্তি নাইটদের ঘিরে আছে। আর মুম্বই বনাম কলকাতা যুদ্ধের বাড়তি আঙ্গিক হয়তো মাঝেমধ্যে প্রকাশ্যেও এসে পড়ছে। যখন কলকাতার মিডিয়াকে টিমের প্র্যাকটিস দেখতে দিতে না চাওয়া সিকিউরিটি গার্ড বিরস ভাবে বলে দিচ্ছেন, কলকাতা খেলতে এলে নিরাপত্তা নিয়ে এ রকম বাড়াবাড়ি হয়েই থাকে। বা যখন বহু দিনের সতীর্থ জন্টি রোডস আর জাক কালিস এক মাঠে থেকেও একে অন্যের সঙ্গে মিনিটখানেকের বেশি সময় কাটাচ্ছেন না। গাঢ় নীল আর সোনালি-বেগুনি থাকছে মাঠের দুই প্রান্তে, নিজ নিজ বৃত্তে।
কিন্তু এর কোনওটাই বোধহয় আরোপিত নয়। বরং দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী টিমের রেষারেষির ইতিহাসের স্বাভাবিক প্রতিফলন। তার মধ্যে একটা টিম যদি প্লে-অফ প্রায় নিশ্চিত করে ফেলে আর অন্যটার আগামী সব ক’টা ম্যাচ হয় মরণবাঁচন, তা হলে তাদের সম্প্রীতির সহাবস্থান আশা করাও বোধহয় ভুল। মুম্বই যেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নেটে পড়ে থাকল, কলকাতা সেখানে মেরেকেটে দুটো ঘণ্টা কাটাল মাঠে। তা-ও নেট নয়, অভিনব ভলিবল বা ক্যাচিং প্র্যাকটিস নিয়ে। লাসিথ মালিঙ্গা বা কায়রন পোলার্ড যখন দাঁতে দাঁত চেপে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, প্যাট কামিন্স তখন দুর্দান্ত ক্যাচ নেওয়া ব্র্যাড হগকে ‘ওয়েল ডান ইয়ংস্টার’ বলে নিজেই হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ছেন। টিম ক্যামেরাম্যানের সঙ্গে ফুটবল খেলছেন ইউসুফ পাঠান। অফস্পিন বোলিংটা ঝালিয়ে নিচ্ছেন সুনীল নারিন নন, কেকেআর সিইও বেঙ্কি মাইসোর!
টেনশনের ম্যাচের আগে মিনিট খানেকের সম্প্রীতি। ওয়াংখেড়েতে দেখা জাক কালিস-জন্টি রোডসের। ছবি টুইটার।
সুখ-স্বাচ্ছল্যের নাইট সংসারকে দেখতে দেখতে হঠাত্ই মৃদু আশঙ্কা। আরে, আন্দ্রে রাসেল কোথায়? মাঠে নেই কেন? কাঁধের পুরনো চোট আবার বেড়ে যায়নি তো? আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে এক নাইট কর্তা জানালেন, রাসেল ড্রেসিংরমেই বসে আছেন। একটু রিল্যাক্স করছেন।
দেখলে মনে হবে পৃথিবী সময়ের সঙ্গে কত দ্রুত বদলে যায়। কী ভাবে সময় একই টিমকে দুটো দুনিয়ার বাসিন্দা করে দেয়। একটা সময় ছিল যখন কেকেআর বনাম মুম্বই মানে বেটিং বাজারে আপনি নাইটদের সঙ্গ দিলে ডাহা ডুবতেন। তখন মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে কেকেআরের হার নয়, জয়টাই ছিল খবর। চারটে বছরে সে সব পাল্টে কেকেআর এখন রিল্যাক্স করছে। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের ডেরায় সাত সকালে ক্রিকেটপ্রেমীদের সঙ্গে দেখা করছে। আর মুম্বই সেখানে সমানে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে টুর্নামেন্টে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখার। কেকেআর আজ দুই, রোহিত শর্মারা এখন অনিশ্চিত। ঠিকই আছে। বাদশাহি দর্শনটাও তো তাই। তাঁর জীবনের, তাঁর টিমেরও।
হার কে জিতনেওয়ালেকো বাজিগর কেহতে হ্যায়!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy