Advertisement
E-Paper

মেন্ডিসের ঝড়ে জমজমাট টেস্ট

কলম্বোয় অবশ্য নাটকীয় প্রত্যাবর্তন ঘটানো টিমটার নাম ভারত নয়, তাদের বিরুদ্ধেই এ বার সেই রূপকথা সৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি করেছে শ্রীলঙ্কা। তৃতীয় দিনের শেষে তুলেছে ২০৯-২।

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৭ ০৫:০২
বিস্ময়: সেঞ্চুরি করার পরে কুশল মেন্ডিস। ছবি: এএফপি।

বিস্ময়: সেঞ্চুরি করার পরে কুশল মেন্ডিস। ছবি: এএফপি।

ইডেনের সেই ১৬ বছর আগের অবিশ্বাস্য ক্রিকেট দিবস কি কলম্বোর সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাবের মাঠে ফিরতে পারে?

সে দিন ফলো-অন করার পরেও ভিভিএস লক্ষ্মণ এবং রাহুল দ্রাবিড় সারা দিন ধরে ব্যাট করে ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছিলেন ভারতকে। তার পর শেষ দিনে ঐতিহাসিক জয় এনে দেন হরভজন সিংহ। অস্ট্রেলিয়া বধের সেই ম্যাচ ক্রিকেটের সেরা রূপকথা হয়ে রয়েছে।

কলম্বোয় অবশ্য নাটকীয় প্রত্যাবর্তন ঘটানো টিমটার নাম ভারত নয়, তাদের বিরুদ্ধেই এ বার সেই রূপকথা সৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি করেছে শ্রীলঙ্কা। প্রথম ইনিংসে ধুড়ধাড় করে ভেঙে পড়ে ফলো-অন করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ঘুরে দাঁড়িয়েছে তারা। তৃতীয় দিনের শেষে তুলেছে ২০৯-২।

কুশল মেন্ডিস নামক বিস্ময় তরুণের কাউন্টার-অ্যাটাকে ভারতীয় বোলিং কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়েছে সন্দেহ নেই। তবু দিনের শেষে বলতে হয়, লঙ্কা বহু দূর। ইডেনের সেই বিরল ক্রিকেট দিবস ফেরাতে গেলে এখনও অনেক অসাধ্যসাধন করতে হবে শ্রীলঙ্কাকে। মেন্ডিসের মাত্র ১৩৫ বলে ঝোড়ো ১১০ এবং দিমুথ করুণারত্নের ৯২ নট আউটের লড়াকু ইনিংসের পরেও ২৩০ রানে পিছিয়ে শ্রীলঙ্কা। টেস্টের এখনও দু’দিন বাকি। হয় ঘাটতি মিটিয়ে শ্রীলঙ্কাকে অন্তত দেড়শো রানে এগিয়ে যেতে হবে, নয়তো ভারত সিরিজে ২-০ এগিয়ে যাবে।

অশ্বিনরা রবিবার সকালে এসেই মেন্ডিসের টিমের বাকি আট উইকেট সাবাড় করে দিতে পারেন। আর সেটা করতে পারলে ইনিংসে জিতে সিরিজ জিতে ফেলবেন বিরাট কোহালিরা। তখন একমাত্র আগ্রহ থাকবে ক্যান্ডিতে গিয়ে ৩-০ হোয়াইটওয়াশ হবে কি না, তা নিয়ে। বিদেশের মাটিতে এর আগে কখনও যা হয়নি।

তবু বলতেই হবে, যে ভাবে হেলায় লঙ্কা করিব জয়— বলা যাচ্ছিল এই ক’দিন ধরে, সেটা আর বলতে সাহস পাচ্ছেন না কোনও ভারতীয় ক্রিকেট ভক্ত। শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের নতুন উদিত সূর্য কুশল মেন্ডিসের তেজে সেই দর্প পুড়ে গিয়েছে। কী রকম প্রভাব ফেলতে পেরেছেন মেন্ডিস? কয়েকটা উদাহরণ দিলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে। ইংল্যান্ডে থাকা কুমার সঙ্গকারা টুইট করলেন, ‘যদি মেন্ডিসকে ঠিক মতো পরিচর্যা করা যায়, শ্রীলঙ্কার সেরা হওয়ার ক্ষমতা আছে ওর’। সতীর্থ অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ উচ্ছ্বসিত ভাবে টুইট করলেন, ‘অসাধারণ ইনিংস। চলো, আমরা লড়াই চালিয়ে যাই’।

অধিনায়ক বিরাট কোহালি-সহ ভারতীয় ক্রিকেটারেরা সকলে মাঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে অভিনন্দন জানালেন সেঞ্চুরি পূরণ করা মাত্র। সেই হাততালি দেওয়ার দলে শিখর ধবনও ছিলেন। ১ রানে থাকা মেন্ডিসের ক্যাচ যিনি মিড-অনে দাঁড়িয়ে ফেলে দেন। এর পর একবার আম্পায়ার আউট দেওয়ার পরেও ডিআরএস নিয়ে বাঁচেন তিনি।

অরবিন্দ ডি’সিলভা এমনিতে খুব একটা মাঠে আসেন না। এ দিন এসেছিলেন এবং নতুন রত্নের চকমকি দেখে গেলেন। শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট মহলে মেন্ডিসকে বলা হচ্ছে নতুন অরবিন্দ। তাঁর মতোই নাকি স্ট্রোকের ফুলঝুরি রয়েছে। মাঠে ছিলেন মেন্ডিসের বাবাও। পেশায় ছুতোর মিস্ত্রি তিনিই নতুন নায়কের সব চেয়ে বড় প্রেরণা। কষ্টের সংসারেও কখনও ছেলের ক্রিকেট স্বপ্নকে ফিকে হতে দেননি। ক্রমাগত উৎসাহ দিয়ে গিয়েছেন। আজ নিজের চোখে দেখে নিলেন ভেন্টিলেশনে চলে যাওয়া শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটকে বাঁচিয়ে তুলে মোরাতুয়ার দরিদ্র পরিবারেও স্বচ্ছলতার প্রদীপ জ্বালিয়ে দিল ছেলে।

কলম্বো থেকে সড়ক পথে ঘণ্টা খানেকের পথ মোরাতুয়া। এর আগেও বেশ কয়েক জন ক্রিকেটার সেখান থেকে বেরিয়েছেন। শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটের মেন্ডিস-রা মোটামুটি মোরাতুয়ারই বাসিন্দা। দলীপ মেন্ডিস, অজন্তা মেন্ডিস, এ বার কুশল মেন্ডিস। ছিয়ানব্বই বিশ্বকাপে সনৎ জয়সূর্যের জুড়িদার রোমেশ কালুভিথর্নেও এখানকার ছেলে। অজন্তা ছিলেন বোলিংয়ের বিস্ময়। কুশল ব্যাটিংয়ের। এখানকার ক্রিকেট ভক্তদের এখন প্রার্থনা যেন অজন্তা মেন্ডিসের মতো সাময়িক আলোড়ন ফেলে হারিয়ে না যান কুশল।

মেন্ডিসের জাদুর প্রভাবে কে বলবে সকালে তাঁরাই প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৮৩ রানে শেষ হয়ে গিয়ে ফলো-অনের মুখে পড়েছিল। তখন ৪৩৯ রানে পিছিয়ে ছিল শ্রীলঙ্কা। সেই আন্দাজে ২৩০ অনেক কমই। হাতে রয়েছে আট উইকেট। ম্যাথিউজের টুইটের মতো শ্রীলঙ্কা লড়াই চালিয়ে গেলে অবাক হওয়ার নেই। আর সত্যিই যদি অভাবনীয় কিছু ঘটিয়ে কোনও ভাবে ১০০-১৫০ রানের লিডও তারা আদায় করে নিতে পারে, তা হলে ম্যাচ জমে গেল। শেষ ইনিংসে আরও খারাপ হওয়া উইকেটে রঙ্গনা হেরাথদের খেলা মোটেও সহজ হবে না। হয়তো এখনও সেই সম্ভাবনা কম, আবার খেলাটার নাম যখন ক্রিকেট, একেবারে উড়িয়েও বা দেওয়া যায় কী ভাবে? কে ভাবতে পেরেছিল এ দিনই বা শ্রীলঙ্কা এমন ভাবে ঘুরে দাঁড়াবে!

মেন্ডিস লড়াইয়ের আবহটা ফিরিয়ে আনতে পেরেছেন। কী দুঃসাহসিক সব শট খেললেন! রবীন্দ্র জাডেজা খুবই ভাল বল করছিলেন। কিন্তু তাঁকে ক্রমাগত স্টাম্পের বলেও সুইপ মেরে গেলেন। অশ্বিন প্রথম ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন। তাঁকেও পাল্টা আক্রমণ করে থিতু হতে দিলেন না। সুইপ তাঁর সেরা অস্ত্র। সেটাকেই কাজে লাগিয়ে ভারতীয় স্পিনারদের ছন্দ নষ্ট করে দিলেন। ১১০-এর মধ্যে ৬৮ রান বাউন্ডারি থেকে। এ রকম দুঃসাহসিক ব্যাটিংয়েই তিনি মিচেল স্টার্ককে পিটিয়ে ম্যাচ জেতানো সেঞ্চুরি করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে।

দিনের খেলা শেষে দু’দলের ড্রেসিংরুমের বাইরেটাতেও পরিবর্তনের ছোঁয়া। অন্যান্য দিন ভারতীয় ক্রিকেটারদের অটোগ্রাফ আর সেলফির জন্যই দাঁড়িয়ে থাকছিলেন শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট ভক্তরা। এ দিন কিন্তু বিরাট কোহালিদের টিম বাস বেরিয়ে যাওয়ার পরেও শ্রীলঙ্কান ভক্তরা দাঁড়িয়ে রইলেন তাঁদের নিজেদের দলের জন্য। আজ যে তাঁদের নিজেদের তারকার জন্ম হয়েছে— সাড়ে বাইশ বছরের কুশল মেন্ডিস। সারা দিন ধরে অসংখ্য বার মাঠে বাজতে থাকা একটা গানটাকে তখন খুব প্রাসঙ্গিক মনে হতে শুরু করেছে— ‘দেখা হ্যায় পহেলি বার, সাজন কি আঁখো মে প্যায়ার’!

India vs Sri Lanka Kusal Mendis Cricket 2nd Test
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy