Advertisement
E-Paper

আমাকে টেনে নামাচ্ছে ছোটরা, বিস্ফোরক লিয়েন্ডার

সচিন তেন্ডুলকর দেখা মাত্রই বললেন, ‘‘হেরে গেলে!’’ লিয়েন্ডার পেজের জবাব, ‘‘ওরা খুব ভাল খেলল। তা ছাড়া যা চলছে! জেতা কঠিন।’’ শুনে অবাক চোখে তাকালেন মাস্টার ব্লাস্টার। লিয়েন্ডারের চোখ থেকে তখন ঠিকরে বেরোচ্ছে রাগ। একটু আগেই বারহা দ্য তিজুকার পাঁচ নম্বর টেনিস কোর্টের বাইরে নিজের দেশের মিডিয়ার সামনে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন ভারতীয় টেনিসের সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আইকন।

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৬ ০৪:২২
নিজের অলিম্পিক্স-স্বপ্ন শেষ। সচিনের সঙ্গে সানিয়ার ডাবলস ম্যাচ দেখছেন লিয়েন্ডার।—নিজস্ব চিত্র

নিজের অলিম্পিক্স-স্বপ্ন শেষ। সচিনের সঙ্গে সানিয়ার ডাবলস ম্যাচ দেখছেন লিয়েন্ডার।—নিজস্ব চিত্র

সচিন তেন্ডুলকর দেখা মাত্রই বললেন, ‘‘হেরে গেলে!’’ লিয়েন্ডার পেজের জবাব, ‘‘ওরা খুব ভাল খেলল। তা ছাড়া যা চলছে! জেতা কঠিন।’’

শুনে অবাক চোখে তাকালেন মাস্টার ব্লাস্টার। লিয়েন্ডারের চোখ থেকে তখন ঠিকরে বেরোচ্ছে রাগ।

একটু আগেই বারহা দ্য তিজুকার পাঁচ নম্বর টেনিস কোর্টের বাইরে নিজের দেশের মিডিয়ার সামনে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন ভারতীয় টেনিসের সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আইকন। বলেছেন, ‘‘আমার সঙ্গে যা হয়েছে বা হচ্ছে, সেটা কি গাওস্কর, সচিন, সৌরভ, পিটি উষার সঙ্গে হয়েছে? ওঁদের হাঁটুর বয়সি খেলোয়াড়েরা কখনও এ ভাবে কাঁকড়া হয়ে উঠেছে? ওঁদের অসম্মান করেছে? টেনে নামানোর চেষ্টা করেছে? আমি তো ভাবতেই পারছি না!’’

লিয়েন্ডার বসেছিলেন কোর্টের বাইরে। অনেকটা দূরে একটা চেয়ারে। মোবাইল কানে। বিধ্বস্ত। চুল এলোমেলো। নিঃসঙ্গ। নোভাক জকোভিচ তাঁকে দেখতে পেয়ে জড়িয়ে ধরেছিলেন। অথচ ভারতীয় দলের এক জনও পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাকাচ্ছেন না ১৮ গ্র্যান্ড স্লাম জয়ীর দিকে। লিয়েন্ডার প্রায় জোর করে পাশে নিয়ে এসে বসালেন কোচ, তাঁর পুরনো কলকাতা-সতীর্থ জিশান আলিকে। প্রথমে কথা বলতে রাজি হচ্ছিলেন না লিয়েন্ডার। তার পরেও নিজের শহরের সাংবাদিককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ডেকে নিলেন মিনিট দশেক পর।

আপনার অলিম্পিক্স-বিদায় কি চক্রান্ত করে ঘটানো হল? অলিম্পিক্সে প্রথম ম্যাচেই লিয়েন্ডার পেজ হেরে গেলেন, এটা ভাবাই যাচ্ছে না। রোহন বোপান্না কি পেছন থেকে ছুরি মারলেন আপনাকে?

প্রশ্নগুলো শোনা মাত্রই চোখে যেন জল এসে গেল ছাব্বিশ বছর পেশাদার সার্কিট দাপানো লিয়েন্ডারের। একনাগাড়ে বলে চললেন, ‘‘আপনারা যা দেখেছেন, সেটাই লিখুন। আমি কারও নাম করতে চাই না। যদি কিছু আপনাদের চোখে পড়ে, সেটাই লিখুন। আমি সাত নম্বর অলিম্পিক্স খেলছি। মার্চপাস্টে আমাকে দেখে দেশ-বিদেশের অ্যাথলিটরা জড়িয়ে ধরছে। সেল্ফি তুলছে। আর এরা কী করছে দেখছেন তো!’’

রোহন বোপান্নার নাম না করলেও নিশানা যে তিনি, ঠারেঠোরে বুঝিয়েই দিলেন লিয়েন্ডার। তেতাল্লিশের চিরসবুজকে ঘিরে টুকরো টুকরো ঘটনাও আরও জোরদার করল সেই সন্দেহ।

সচিনের পাশে বসে সানিয়া মির্জাদের ডাবলস ম্যাচ দেখছিলেন লিয়েন্ডার। সপ্তাহ ছয়েক আগে বাঁ পায়ে অস্ত্রোপচার হয়েছে সচিনের। এখনও পায়ে স্ট্র্যাপ। একটু খুঁড়িয়েই হাঁটছেন অলিম্পিক্সের ভারতীয় শুভেচ্ছা-দূত। একটু আগে সচিন নিজেই বলছিলেন, ‘‘আরও এক সপ্তাহ পরে আশা করছি ঠিকমতো হাঁটতে পারব। ডাক্তাররা সে রকমই বলেছেন।’’ তা সত্ত্বেও হাতের কাছে সচিনকে পেয়ে নিজস্বী তোলার এমন হুড়োহুড়ি চলল যে, এক সময়ে বাধ্য হয়েই তাঁকে সরিয়ে নিয়ে যেতে হল। সানিয়াদের ম্যাচে গ্যালারির একেবারে উপরের সারির একটা চেয়ারে বসলেন সচিন। লিয়েন্ডার গিয়ে বসলেন তাঁর পাশেই।

টুকটাক গল্প চলছিল দুই মহাতারার। এমন সময় হঠাৎ বোপান্নার আবির্ভাব। তাঁকে আসতে দেখেই ‘বাথরুম যাচ্ছি’ বলে উঠে পড়লেন লিয়েন্ডার। সেই যে গেলেন, আর ফেরেননি। বোপান্না তত ক্ষণে সচিনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বসে পড়েছেন একেবারে সামনের সারিতে। যেখানে বসে সানিয়ার মা, প্রার্থনা থোম্বারের পরিবার। লিয়েন্ডারকে এর খানিক পরে আবিষ্কার করা গেল উল্টো দিকের গ্যালারিতে। সেখানে বসেই চিনা জুটির কাছে সানিয়াদের হার দেখে বেরিয়ে গেলেন নিঃশব্দে।

গেমস ভিলেজে কি ফিরবেন না রাতে? নাকি ফিরবেন বেশি রাত করে, যাতে কারও সঙ্গে দেখা-টেখা না হয়? লিয়েন্ডার পাল্টা প্রশ্ন তুলছেন, ‘‘ওরা কেন আমার পেছনে লেগেছে? আমি কি এক বারও বলেছি, দেশের হয়ে পুরোটা দেব না? এক বারও বলেছি, বোপান্নার সঙ্গে রুম শেয়ার করব না? আমি যে ম্যাচের আগের দিন এখানে পৌঁছব, সবাই জানত। বলুক জিশান যে, ও জানত না? আসলে একটা গ্রুপ হয়েছে। তাতে দু’এক জন মিডিয়ার লোকও আছে। আরে, মিডিয়াতে খবর খাওয়াচ্ছিস কেন? দম থাকে তো সরাসরি আমাকে বল!’’

অলিম্পিক্সে ভারতীয় দলের পিতামহ ভীষ্মের অভিযোগ, তিনি যে সাত নম্বর অলিম্পিক্স খেলেন, সেটাই নাকি অনেকে চাইছিল না। কিন্তু কেন?

—‘‘আমি তো নিজের যোগ্যতায় খেলেছি। কেউ কি জোর করে টিমে ঢুকিয়েছে আমাকে?’’ কেন গেমস ভিলেজে প্রথম থেকে ঘর বরাদ্দ রাখা হয়নি তাঁর জন্য, এ বার সেই প্রশ্নটা করতে প্রায় ফেটে পড়লেন লিয়েন্ডার। বললেন, ‘‘ইচ্ছে করে এ সব করা হয়েছে। দেশের কোনও প্লেয়ার এ রকম ব্যবহার পেয়েছে নিজের টিমের কাছ থেকে? চরম দুর্ভাগ্যজনক ছাড়া কী আর বলা যায় একে?’’ সঙ্গে যোগ করলেন, ‘‘আমি চার বছর বাদে পরের অলিম্পিক্সও খেলব কি না বলতে পারছি না। তবে আরও দু’বছর তো পেশাদার ট্যুরে খেলব।’’

কুড়ি বছর আগের অলিম্পিক্সে ব্রোঞ্জজয়ীর এই শেষের মন্তব্যে যেন আবার একটু থমকে যেতে হল। অন্য কারণে অবশ্য। কারণ, কেউ কেউ বলছেন, কোর্ট থেকে সরে দাঁড়ানোর বহু আদর্শ মুহূর্ত জীবন সাজিয়ে দিয়েছিল লিয়েন্ডারকে। তিনি গ্রহণ করেননি। করলে হয়তো অলিম্পিক্সের কোর্টের বাইরে দাঁড়িয়ে নিজের টিমের বিরুদ্ধেই বিস্ফোরক সাক্ষাৎকার দিতে হতো না। এমন বর্ণময় কেরিয়ারকে অন্তিম লগ্নে পুড়তে হতো না এত যন্ত্রণায়!

Leander Paes Rio Olympics Tennis
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy