ঘুম কোথায়, ঘুম?
পর্তুগাল টিমে খুব ভোরে যিনি ওঠেন, তিনি কোনও ফুটবলার নন। ফের্নান্দো স্যান্টোসের ধর্ম হল, ভোরে উঠে অনেক আগে দিন শুরু করে দেওয়া। গত রবিবারও পর্তুগাল কোচ রোজকার স্বাভাবিক আচার মেনে তাড়াতাড়িই উঠেছিলেন, আগের রাতে খেলা ছিল, তবু। কিন্তু উঠে স্যান্টোস আবিষ্কার করেন, তিনি একা নন। আরও এক জন জেগে রয়েছে।
তিনি ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো।
কত কথা হয় তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে। কত চর্চা চলে তাঁর বান্ধবী বদলানো নিয়ে। আজ ইরিনা শায়েক, কাল হাঙ্গেরির মডেল। মহিলা ফ্যানকে কখনও ডেটে যাওয়ার সরাসরি প্রস্তাব, কখনও ম্যাচের আগে সুন্দরী মহিলা দেখে নির্ণিমেষ তাকিয়ে থাকা। ফুটবল মহল, মিডিয়া ইদানিং বলছে— ক্রিশ্চিয়ানো আর মন দিয়ে ফুটবলটা খেলেন কোথায়? চুলের স্টাইল-গার্ল ফ্রেন্ড-বিতর্ক মিলিয়ে অধুনা ফুটবল-পৃথিবীর তিনি এখন সেরা বিনোদন প্যাকেজ। এ সব মিটিয়ে সময় পেলে একটু-আধটু ফুটবল খেলে থাকেন! বিলেতের এক মিডিয়া হাউস তো লিখেও দিয়েছে— ফুটবল নয়, শো বিজনেসটাই রোনাল্ডোর এখন প্রধান বিজনেস।
দুর্ভাগ্য, সত্যি। গোল মিস করে চুলে হাত দিলে এখন লোকে বলে, ওই দ্যাখো কী রকম গ্যালারি শো দিচ্ছে। তীব্র হতাশায় কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লে বলে, পুরো নাটক। ছত্রিশটা ফ্রি কিক নষ্ট করেও কি আর এমনি এমনি বিজ্ঞাপন বাজারে আগুন জ্বালিয়ে দেয় লোকটা? রোনাল্ডো সমর্থকরা শুনলে ক্ষেপে যান। বলে দেন, এত কথা বলার আগে ওর ওয়ার্ক আউট শিডিউলটা একটু দেখে নিও। সিরিয়াসনেস জেনে নিও টিমের সতীর্থদের সঙ্গে। ক্ষিপ্ত হয়ে পড়া তো স্বাভাবিক। কেউ তো আজ আর বুঝতেই চায় না যে, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোও আর পাঁচ জন রক্তমাংসের মতো। তাঁরও অনুভূতি আছে, তাঁরও দুঃখ হয়। পেনাল্টি মিস করলে কষ্ট হয়। লা লিগার রেকর্ড গোল পারে না অশান্ত মনকে নির্লিপ্ত রাখতে।
নইলে আর জেগে থাকবেন কেন?
‘‘ক্রিশ্চিয়ানোর একটা বড় গুণ হল, কঠিন পরিস্থিতিতে পড়লে পাল্টা দেয়। যত বার ওর গোল করার ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, ক্রিশ্চিয়ানো সবাইকে চুপ করিয়ে দিয়েছে,’’ হাঙ্গেরি ম্যাচের আগে বলে দিয়েছেন পর্তুগাল কোচ স্যান্টোস।
হাঙ্গেরি ম্যাচ— কথাটা মনে হয় ঠিক হল না। এটা এক কথায় পর্তুগালের বাঁচা-মরার ম্যাচ, রোনাল্ডোর জীবন-মৃত্যুর ম্যাচ। জিতলে টুর্নামেন্টে থাকবেন, নইলে কোন অতলে তলিয়ে যাবেন কে জানে। রোনাল্ডো-সমর্থকদের কথা ভেবে নয়, ফুটবলের স্বার্থেও বুধবার রোনাল্ডোকে জিতে বেরনোর কথা ভাবতে হবে। কিন্তু পারবেন তো?
ফুটবল বিশ্বের অধিকাংশই বলছেন, পারা কঠিন। আসলে আইসল্যান্ডকে ‘ছোট মনের দল’ বলে ফেলার পর কেন কে জানে, প্রায় গোটা ফুটবল-মহল তাঁর বিরুদ্ধে চলে গিয়েছে। সকলেই যেন ‘দাম্ভিক’ লোকটার পতন দেখতে চায়। এক ওয়েবসাইটে দেখা গেল, সিআর সেভেন সরিয়ে রোনাল্ডোর নতুন নাম দিয়েছে— সিআর জিরো! আর একটায় দেখা গেল, রোনাল্ডো-বেলের পাশাপাশি ছবি। পর্তুগাল-প্রিন্সের ছবির তলায় লেখা: ৩৬ ফ্রিকিক। কোনও গোল নেই। আর ওয়েলস উইজার্ডের ছবির নীচে লেখা: তিন ফ্রিকিক, দু’টো গোল। যে যা পারছেন, রোনাল্ডো নিয়ে এমন বিদ্রুপের বাজারে বলে দিচ্ছেন। নেদারল্যান্ডসের ফান ডার ভার্টকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘ধুর, ক্রিশ্চিয়ানোর সঙ্গে বন্ধুত্ব কখনও সম্ভব নাকি। একঘেয়ে লোক একটা!’’ ভাবা যায়, এই ফান ডার ভার্টই এক সময় রিয়াল মাদ্রিদে রোনাল্ডোর সতীর্থ ছিলেন। ফাঁক বুঝে হাঙ্গেরিও শুনিয়ে রেখেছে, রোনাল্ডোকে তারাও ভয় পায় না। আসুক না সিআর, পুসকাসের দেশ তৈরি!
বিদ্রুপ, শুধু বিদ্রুপ চার দিকে।
‘‘এতটাও প্রাপ্য কি?’’ বলে ফেলেন পর্তুগাল কোচ। ফের্নান্দো স্যান্টোস নিশ্চিত, রোনাল্ডোর পা থেকে গোল আসছে। হাঙ্গেরি ম্যাচেই আসছে। ‘‘এ বছরও ওর ফর্ম নিয়ে কম কথা হয়নি। দিয়েছিল তো একটা ম্যাচে একা পাঁচ গোল করে। হাঙ্গেরি ম্যাচেও করবে!’’ অবাক লাগতে পারে। ফুটবলে কেউ এত নিশ্চিত করে ‘গোল করবে’ বলতে পারে নাকি? পারে না। কিন্তু পর্তুগালকে পারলে যে ও ভাবেই পারতে হবে। স্যান্টোস জানেন, শেষ ম্যাচে জেতালে এখনও জেতাবে রোনাল্ডোর পা দু’টো। স্যান্টোস জানেন, বাকি ইউরোয় ছুটতেও ভরসা ওই দু’টো পা।
আজকের মতো পর্তুগাল কোচের ভরসা অবশ্য আরও একটা আছে। যুক্তরাষ্ট্রে তো আজই আবার নামছে পাঁচ ফুট ছ’ইঞ্চির আর্জেন্তিনীয় ছেলেটা— এলএম টেন।
অহং বলে একটা ব্যাপার আছে তো!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy