Advertisement
E-Paper

সাতাশি বছর পর বোর্ডে উদারীকরণের পরোয়ানা

কোনটা থাকবে? কোনটা থাকবে না? ভোররাতের ভূমিকম্পে আতঙ্কিত শহরবাসীর চেয়েও উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড কর্তাদের। সাম্প্রতিক ভারতের খেলা কোনও ওয়ান ডে ম্যাচের ভাগ্য বিচারেও এমন জল্পনা দেখা যায়নি যা প্রকাশিত হচ্ছে জাস্টিস লোঢার আমূল সংস্কারমুখী প্রস্তাবের কতটা সুপ্রিম কোর্ট গ্রহণ করবে? কোনগুলো এখনকার মতো স্থগিত রাখবে?কোনটা থাকবে? কোনটা থাকবে না? ভোররাতের ভূমিকম্পে আতঙ্কিত শহরবাসীর চেয়েও উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড কর্তাদের। সাম্প্রতিক ভারতের খেলা কোনও ওয়ান ডে ম্যাচের ভাগ্য বিচারেও এমন জল্পনা দেখা যায়নি।

গৌতম ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:৪৭

• রাজনীতিবিদদের আর বোর্ডে পদ আঁকড়ানো চলবে না?

ফিফটি-ফিফটি। যে কোনও দিকে যেতে পারে সুপ্রিম কোর্ট। যদি মেনে নেয়, সাংঘাতিক ব্যাপার। না কীর্তি আজাদ, না অরুণ জেটলি, কেউ থাকতে পারবেন না ক্রিকেটে। ছাড়তে হবে কাশ্মীরে আবদুল্লাদের। গ্বালিয়রে সিন্ধিয়াকে। পুণেয় পওয়ারকে। দিল্লিতে রাজীব শুক্লকে।

• সত্তরের বেশি বয়সি কাউকে ক্রিকেট বোর্ডের পদে আর সত্যিই রাখা যাবে না?

এটা সম্ভবত বলবৎ হবে। আর হলে শরদ পওয়ার তো এমনিতেই বিদায়! উৎপাটিত হবে দীর্ঘ দিনের আরও কিছু বৃক্ষও। বিন্দ্রা, নিরঞ্জন শাহ। সবচেয়ে বড় কথা, শ্রীনির কামব্যাক ঘটার আর এক পার্সেন্ট চান্সও অবশিষ্ট থাকবে না। তিনি তো একাত্তর। সোমবারের রায় সবচেয়ে অস্বস্তিকর ভাবে যাঁকে বিঁধত তিনি অবশ্য মাসচারেক আগেই ইহজগত থেকে বিদায় নিয়েছেন। জগমোহন ডালমিয়া। বেঁচে থাকলে আজকের পর অসম্মানিত অবস্থায় তাঁকে গদি ছাড়তে হত।

• বোর্ডকে সিইও নিযুক্ত করা সমেত পেশাদার করতে হবে এবং কর্তাদের এত বছরের সাম্মানিক কাঠামোটা সত্যি লোপ পাবে?

ধরে নেওয়া হচ্ছে এই পরিবর্তন এখনই গৃহীত না হলেও প্রক্রিয়াটা শুরু হয়ে গেল। এটা নতুন দিনের ডাক। যে সাম্মানিক কাঠামোয় থেকে ছড়ি ঘোরানো অনেক হয়েছে। এ বার সমস্ত পর্যায়ে পেশাদারিত্ব আনো।

• প্রেসিডেন্টের ভোট তিন থেকে কমে দাঁড়াবে এক?

মনে করা হচ্ছে এটা গৃহীত হয়ে যাবে। এত দিন চাপের মুখে বোর্ড প্রেসিডেন্ট তিনটি ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। যা গণতান্ত্রিক কাঠামোয় ভাবা যায় না। একটা ভোট তাঁর নিজের। একটা ভোট যে রাজ্য সংস্থার তিনি প্রতিনিধিত্ব করছেন, তার। একটা টাই হলে তাঁর কাস্টিং ভোট। মাত্র তিরিশ জন ভোটারের মধ্যে এক জনের ভোট তিনটে, এটা খতিয়ে দেখে আশ্চর্য হয়ে যান বিচারপতি লোঢা। তাঁর কড়া সুপারিশ, ওটা একে নামাও। সুপ্রিম কোর্ট সিলমোহর দিলে শশাঙ্ক মনোহরের রাতারাতি ব্যক্তিগত দু’ভোট কমবে।

• ওয়ান স্টেট ওয়ান অ্যাসোসিয়েশনের বৈপ্লবিক ডাক গৃহীত হয়ে যাবে?

মনে করা হচ্ছে এই জায়গাটা স্থগিত থেকে যাবে। গৃহীত হলে যে তীব্র বিভ্রান্তি দেখা যাবে কোন রাজ্য থেকে কোন সংস্থা ম্যাচ পাবে? কারা ভোট দিতে যাবে? গুজরাত থেকে রয়েছে গুজরাত, সৌরাষ্ট্র আর বডোদরা। এত বছর ধরে এরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। প্রত্যেকের নিজস্ব স্টেডিয়াম রয়েছে। নিজস্ব অ্যাকাডেমি তৈরির পিছনে লাখ লাখ টাকা খরচ করেছে। এ বার নিজস্ব রাজ্যের মধ্যেই যদি ম্যাচ পাওয়া নিয়ে রোটেশন শুরু হয়ে যায় এবং মাত্র একজন ভোটার বাছতে হয়, তীব্র হানাহানি অনিবার্য।

• প্লেয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন আইনসিদ্ধ ঘোষিত হবে?

সম্ভবত হবে। কারণ বিচারপতি লোঢার প্রস্তাবগুলোর মূল সেন্টিমেন্টই হল ওহে কর্তারা, এত বছরের মৌরসিপাট্টা গুটিয়ে এ বার বিশ্রামে যাও। আসতে দাও নতুন রক্ত। বিশেষ করে ক্রিকেটারদের। তোমরা প্রভু প্লেয়াররা কর্মচারী, এই সমীকরণ আর চলবে না। বরঞ্চ প্রাক্তন ক্রিকেটারদের প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে হবে। কুম্বলে-সৌরভ এঁরা এমন নিয়ম কার্যকর হলে জাতীয় পর্যায়ে আরও বেশি করে প্রশাসনিক পাদপ্রদীপে চলে আসবেন।

মিলেজুলে ১৫৯ পাতার রিপোর্টে লোঢা যা সব সংস্কারের কথা বলেছেন তা আপাতদৃষ্টিতে বৈপ্লবিক। আদতে যুক্তিপূর্ণ। পেশাদারি দুনিয়ায় এটাই হওয়ার কথা ছিল। অথচ যে বদলের হাওয়াকে মানতে চাননি বোর্ড কর্তারা। তাঁদের নামগুলোই সময়ের সঙ্গে বদলেছে। রুংতা থেকে চিদম্বরম। ডালমিয়া থেকে পওয়ার। শ্রীনি থেকে মনোহর। ঘরানাটা বরাবর এমন থেকেছে যে, মুম্বই ক্রিকেটে ব্যাটসম্যানদের পাওয়া ড্রেসিংরুমের নির্দেশ তুমিও মেনে চলো। বেডিং নিয়ে প্রশাসনে ঢোকো। আর থেকে যাও টিকেসি হয়ে। টিল খাটিয়া কামস।

বারবার মিডিয়ায় লেখা হয়েছে যে ভারতীয় ক্রিকেট এত বড় একটা ব্র্যান্ড। কোটি কোটি সমর্থক তার বিশ্বের সর্বত্র। অথচ বোর্ড কর্তাদের কোনও দায়বদ্ধতা নেই। শেয়ারহোল্ডার যে অধিকার আশা করে তা দূর স্বপ্নেও কখনও ভারত সমর্থককে দেওয়া হয়নি। তার আবেগের লগ্নি ব্যবহার হয়েছে যুগ যুগ ধরে। কিন্তু বিনিময়ে দেওয়া হয়েছে লবডঙ্কা। বোর্ড মোটেও কর্পোরেটের মতো নয়, চালানো হয়েছে জয়েন্ট হিন্দু ফ্যামিলি বিজনেসের মতো। সব কিছু ঢেকেঢুকে। শশাঙ্ক মনোহর ক্ষমতায় এসে সামান্য স্বচ্ছতা জারির আগে বোর্ডের অ্যানুয়্যাল রিপোর্ট দেখারও উপায় ছিল না মিডিয়ার।

ভারতীয় অর্থনীতির উদারীকরণ হতে লেগেছিল দেশ স্বাধীন হওয়ার পর চুয়াল্লিশ বছর। নরসিংহ রাও সরকারের আমলে যা সম্পন্ন হয়। ভারতীয় ক্রিকেটে উদারীকরণের ডাক দিতে লাগল সাতাশি বছর। তাও এটা স্বাভাবিক উদারীকরণ নয়। আদালতের পরোয়ানা জারি করে বাধ্য করতে হচ্ছে।

লোঢা রিপোর্টে যে বোমা থাকছে, পরলোকগত ডালমিয়াও জানতেন। তা বলে এত শক্তিশালী বিস্ফোরণের মশলা থাকবে, আন্দাজ করা যায়নি। ব্যাকুল, বিপন্ন বোর্ড কর্তারা যে বিশেষ সাধারণ সভা ডাকছেন তা এতটুকু আশ্চর্যের নয়। এ তো রিখটার স্কেলে ৬.৮ নয়। ৮.৮।

৪ জানুয়ারি ২০১৬-কে অতঃপর কী চোখে দেখা হবে? হ্যাঁ ২৫ জুন নয়। ২ এপ্রিল নয়। ইংল্যান্ডে ভারতের প্রথম টেস্ট জয়ের দিন নয়। কিন্তু তাৎপর্যের বিচারে টপ টেন-এ যে চলে গেল হয়তো শশাঙ্ক মনোহরও স্বীকার করবেন!

lodha committee report
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy