Advertisement
০৬ মে ২০২৪

যত যুদ্ধ বাইরে, মাঠে বন্ধুত্বের পক্ষেই মাশরফি

আবেগ আছে। কিন্তু আবেগে ভাসেন না। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ ২০১৫-র বিশ্বকাপে শেষ আটে উঠেছে। এ বছর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শেষ চারেও পৌঁছছে। আইসিসি ওয়ান ডে র‌্যাঙ্কিংয়ে ছয়েও উঠেছিল বাংলাদেশ।

ক্রীড়াক্ষেত্রে সেরা বাঙালি মাশরফি মর্তুজাকে ঝুলন গোস্বামীর অভিনন্দন। শনিবার এবিপি আনন্দ-র অনুষ্ঠানে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

ক্রীড়াক্ষেত্রে সেরা বাঙালি মাশরফি মর্তুজাকে ঝুলন গোস্বামীর অভিনন্দন। শনিবার এবিপি আনন্দ-র অনুষ্ঠানে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

রাজীব ঘোষ
শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৭ ০৪:১৮
Share: Save:

একই আকাশ, একই বাতাস, এক হৃদয়ের একই তো শ্বাস...।

শনিবার সন্ধ্যায় এ পারে এসে যখন সেরা বাঙালির সম্মান নিতে এলেন ও পারের ক্রিকেট অধিনায়ক, তখনকার বাতাবরণ যেন ঠিক এ রকমই।

মাশরফি মর্তুজারও কি তখন গাইতে ইচ্ছে করছিল, ‘এ পার ও পার কোন পাড়ে জানি না, ও আমি সব খানেতেই আছি’?

আবেগ আছে। কিন্তু আবেগে ভাসেন না। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ ২০১৫-র বিশ্বকাপে শেষ আটে উঠেছে। এ বছর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শেষ চারেও পৌঁছছে। আইসিসি ওয়ান ডে র‌্যাঙ্কিংয়ে ছয়েও উঠেছিল বাংলাদেশ। ১৬ বছরের ক্রিকেট জীবনে যত ওঠাপড়া দেখেছেন, যত সাফল্য ও ব্যর্থতা তাঁকে ছুঁয়ে গিয়েছে, মাশরফিকে আবেগে ভাসাতে পারেনি কোনও কিছুই। সেই মাশরফি বিন মর্তুজা শনিবার সেরা বাঙালির সম্মান নিতে এসে যখন বললেন, ‘‘বাংলাদেশ থেকে এখানে এসে এই সম্মান পাওয়াটা আমার কাছে খুবই গর্বের। আজ এখানে এসে খুব ভাল লাগছে,’’ তখন অবাক হতেই হল।

শুধু এ বাংলা কেন, গোটা ভারত ও এ দেশের ক্রিকেটাররাও যে তাঁদের বন্ধু, তা স্বীকার করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা নেই বাংলাদেশের ওয়ান ডে অধিনায়কের। মধ্য কলকাতার পাঁচতারা হোটেলে বসে এ দিন বললেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে ভারতীয় ক্রিকেটারদের সম্পর্ক মোটেই খারাপ নয়। সে মাঠে বলুন বা মাঠের বাইরে। এই তো সে দিন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বার্মিংহামে হারার পরেও আমরা নিজেদের মধ্যে গল্প করেছি, আড্ডা দিয়েছি। যুবরাজের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব যেমন রয়েছে, তেমনই বিরাটের সঙ্গে আমাদের রুবেল, মুশফিকদের ভাল সম্পর্ক।’’ মাঠে দুই দেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে স্লেজিংও কি হয় না? মাশরফি বললেন, ‘‘না, না। স্লেজিংও হয় না, যেটুকু হয় সীমার মধ্যে থেকেই। মারাত্মক পর্যায়ে কিছু না।’’

তা হলে ক্রিকেট মাঠে ভারত-বাংলাদেশ মুখোমুখি হলে ইদানীং এত বারুদের গন্ধ বেরয় কেন? কেনই বা দু’দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে এত দ্বন্দ, রেষারেষি? মাশরফির ধারণা, ‘‘এর জন্য সোশ্যাল মিডিয়া বোধহয় অনেকটাই দায়ী। আর একটা কারণও হতে পারে। আমরা যেহেতু এখন আগের চেয়ে অনেক ভাল খেলছি, তাই আমাদের কাছে আমাদের দেশের মানুষের প্রত্যাশা বেড়ে গিয়েছে। জয়ের আশায় একে অপরের বিরুদ্ধে মন্তব্য পাল্টা মন্তব্য করে ফেলেন সবাই। তবে বাইরে যতই যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব থাক, মাঠে কিন্তু তা থাকে না। আমরা দুই দেশের খেলোয়াড়রাই স্পোর্টিং থাকার চেষ্টা করি। প্রতিযোগিতার জন্য যেটুকু উত্তেজনা থাকে। এটা কখনও হিংসার পর্যায়ে যায় না।’’

টি-টোয়েন্টির বিপুল অর্থ, জৌলুসের হাতছানি উপেক্ষা করে সম্প্রতি ক্রিকেটের এই আধুনিক রূপ থেকে অবসর নিয়েছেন মাশরফি। অতিরিক্ত আগ্রাসন, উত্তেজনার চাপই কি নিতে পারলেন না? জবাব দিলেন, ‘‘টি-টোয়েন্টিতে হয়তো টাকা আছে, জৌলুস আছে। কিন্তু টি-টোয়েন্টি একজন ক্রিকেটারের মানদণ্ড হতে পারে না। টেস্ট, ওয়ান ডে-তেই তো ক্রিকেটারদের আসল পরীক্ষা। সচিন তেন্ডুলকর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, ভিভিএস লক্ষ্মণদের দেখুন। ওরা তো মূলত টেস্ট ক্রিকেটেই নিজেদের প্রতিভা দেখিয়েছে।’’

কিন্তু ওয়ান ডে-তে আর কত দিন? সাকিব আল হাসানদের ওয়ান ডে অধিনায়ক বললেন, ‘‘যত দিন ক্রিকেট উপভোগ করব। যে দিন মনে হবে, আর ভাল লাগছে না, সে দিনই ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধা করব না।’’

মাশরফি এ রকমই। স্পষ্টবক্তা ও সাহসী। সেরা-রা যেমন হয়ে থাকেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE