Advertisement
E-Paper

বোলার মাশরাফির ব্যাটেও ঝড়, দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড!

ক্রিকেট কেরিয়ার যখন শুরু, তখন পেস অল রাউন্ডার হিসেবেই নিজেকে উপস্থাপন করেছিলেন মাশরাফি। ব্যাটিং পজিশনটা ছিল মিডল অর্ডারে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৬ ১৩:৩৬

ক্রিকেট কেরিয়ার যখন শুরু, তখন পেস অল রাউন্ডার হিসেবেই নিজেকে উপস্থাপন করেছিলেন মাশরাফি। ব্যাটিং পজিশনটা ছিল মিডল অর্ডারে। ২০০১ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এসিসি অনূর্ধ্ব-১৭ ক্রিকেটে কুয়েতের বিপক্ষে ১৬ বলে হাফ সেঞ্চুরি ব্যাটিংয়ে জাত চিনিয়েছিলেন মাশরাফির। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের পর নেটে তেমন ব্যাটিং অনুশীলনের সুযোগই পান না, ব্যাটসম্যান পরিচয়টা প্রায় মুছে গেছে তার। তবে দলের প্রয়োজনে দায়িত্ব নিয়ে করতে পারেন ব্যাটিং। ২০০৭ সালে ভারতের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে ম্যাচ বাঁচানো ৭৯ রানের হার না মানা ইনিংসে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন সেটা। ২০০৬ সালে মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের আন্তর্জাতিক অভিষেকে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ২৭ বলে মাশরাফির ম্যাচ উইনিং ফিফটিকেও মনে রেখেছে ঢাকার দর্শক। ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট আসর জাতীয় লিগে টেল এন্ডে নেমে ১১ বছর আগে সেঞ্চুরির অতীতও আছে তার। ওয়ানডেতে দ্রুততম ফিফটিতে বাংলাদেশের সবাইকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও ছিল মাশরাফির। ২০০৬ সালে বগুড়ায় কেনিয়ার বিপক্ষে ১৬ বলে নট আউট ৪৪ রানের সেই ইনিংসটা এখনো মনে রেখেছেন মাশরাফি। ১৪৫ কিলোমিটার গতিতে বল করে নড়াইল এক্সপ্রেস খেতাব পেয়েছেন ১৩ বছর আগে। তবে ব্যাটিংয়ের চাহিদা যে পারেন মেটাতে, ছ’মাসের মধ্যে দু’বার সে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) থ্রিতে চিটাগাং ভাইকিংসের বিপক্ষে ৩২ বলে ৫৬ রানের ম্যাচ উইনিং ইনিংসের পর শনিবার ফতুল্লায় ব্যাটে তুলেছেন ঝড়! ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে ৫০ বলে সেঞ্চুরি করে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের মধ্যে দ্রুততম এখন তিনি! ২০০৯ সালে বুলাওয়েতে জিম্বাবোয়ের বিপক্ষে ৬৩ বলে সাকিবের সেঞ্চুরিটি ছিল এতদিন সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে দ্রুততম। সেই রেকর্ড টপকে ৫০ বলে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে সেঞ্চুরি করেছেন মাশরাফি !

বাংলাদেশের মাটিতে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে মাশরাফির রেকর্ডটি অবশ্য সব মিলিয়ে তৃতীয়। ১৯৯৯ সালে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৪৫ বলে লারার সেঞ্চুরি একে। তারপর ২০১৩ সালে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে রাজশাহীতে কলাবাগান অ্যাকাডেমির বিপক্ষে প্রাইম ব্যাংকের জিম্বাবুইয়ান ক্রিকেটার ব্রান্ডন টেলরের ৪৬ বলে সেঞ্চুরি। তার পরই গতকাল শেখ জামাল ধানমন্ডীর বিপক্ষে ৫০ বলে মাশরাফির সেঞ্চুরিটি ঠাঁই পেয়েছে তৃতীয় দ্রুততম তালিকায়। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের মধ্যে শুধু দ্রুততম ফিফটির রেকর্ডই নয়, লিস্ট ‘এ’ ম্যাচে এক ইনিংসে রেকর্ড ১১টি ছক্কার রেকর্ডও গড়েছেন মাশরাফি। বাংলাদেশের মাটিতে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে তার চেয়ে বেশি ছক্কার ইনিংস আছে কেবল অজি ক্রিকেটার শেন ওয়াটসনের। ২০১১ সালে মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে ১৮৫ রানের ইনিংসে ১৫টি ছক্কা ছিল ওয়াটসনের।

লিস্ট ‘এ’ ম্যাচে অতীতের ২০৫ ম্যাচে যে ছেলেটির ফিফটির সংখ্যা সর্বসাকুল্যে ৭টি, ২০৬তম ম্যাচে সেই কি না উদযাপন করেছে প্রথম সেঞ্চুরি। ৫১ বলে ১০৪ রানের ইনিংসে মাশরাফির ফিফটি উদযাপনে লেগেছে ৩৫টি বল, সেঞ্চুরির জন্য প্রয়োজনীয় বাকি পঞ্চাশ তুলতে সেখানে লেগেছে মাত্র ১৫ টি বল ! ইনিংসে ১১ ছক্কার পাশে বাউন্ডারি মাত্র ২টি। সেঞ্চুরির জন্য শেষ ৫০ রানে ছক্কা মেরেছেন তিনি ৭টি! এমন ব্যাটিং ঝড়ের ইনিংসে সিঙ্গলস, ডাবলস থেকে এসেছে মাত্র ৩০টি রান। তার এই ইনিংসে ভর করে ৩১৬/৭ স্কোর পুঁজিতে শেখ জামাল ধানমন্ডী ক্লাবকে রান পাহাড়ে চাপা দিয়ে মাশরাফির কলাবাগান ক্রীড়াচক্র ২১ রানে হারিয়েছে শেখ জামাল ধানমন্ডী ক্লাবকে। আরাফাত সানি ছাড়া এদিন মাশরাফির হাতে ছক্কা খেয়েছেন সবাই। ৪৬তম ওভারে পেস বোলার মোক্তার আলিকে মেরেছেন তিনটি ছক্কা। ৪৮তম ওভারে বাঁ হাতি স্পিনার ওয়াহিদুল আলমের উপর একটু বেশিই চড়াও হয়েছিলেন মাশরাফি। মেরেছেন ওই ওভারে চার চারটি ছক্কা ! যার মধ্যে প্রথম তিন বলে টানা ছক্কা ! অথচ কি জানেন, এই ম্যাচে খেলার মতো অবস্থা ছিল না মাশরাফির ! দুই সপ্তাহ আগে ১০২ ডিগ্রি জ্বর নিয়ে খেলেছেন মনের জোরে, প্রাইম ব্যাংকের বিপক্ষে সেই ম্যাচে পেয়েছেন ৪ উইকেট। ডেঙ্গু জ্বর থেকে সেরে উঠে বিপিএলে পারফর্ম করা মাশরাফির কাছে কোন অসুস্থতাই পায় না পাত্তা। শনিবারও শরীরের ক্লান্তিকে জয় করে সে দৃষ্টান্ত রেখেছেন। দলের বড় স্কোরের প্রয়োজনে ৬ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমেছেন ঠিকই, তবে ৫২ রানের পর পিচের উপর নাকি দাঁড়িয়ে থাকাই কঠিন হয়ে পড়েছিল মাশরাফির। নিজেই বললেন, ‘‘সকালে মাঠে গিয়ে দেখি মাথা ঘোরাচ্ছে। ৫২ রান হওয়ার পর থেকে খুব খারাপ লাগছিল। তখন কতো দ্রুত রান তোলা যায় সেটাই চাইছিলাম।’’

লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারে নিজের প্রথম সেঞ্চুরিটি যে রেকর্ড হয়ে গেছে, তা জেনে নিজেও অবাক, ‘‘তাই নাকি ! রেকর্ডের জন্য তো খেলি না। এসব নিয়ে ভাবিও না। দল জিতেছে এটাই আসল কথা। আমার সেঞ্চুরিতে দল জিতেছে, রেকর্ডের চেয়ে এটা অনেক বড় কিছু’’। বললেন মাশরাফি।

আরও পড়ুন...

উইকেট না পেয়েও কৃপণ বোলিং-এ বাজিমাত মুস্তাফিজুর

Mashrafe Batting Century Bangladesh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy