Advertisement
E-Paper

ভারতের বার্তা, তদন্ত শুরু ম্যাচ রেফারির

দিলরুয়ানের বিরুদ্ধে মারাত্মক অভিযোগ উঠেছে যে, অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক স্টিভ স্মিথের মতোই তিনি ডিআরএস নেওয়ার ব্যাপারে ড্রেসিংরুমের সাহায্য নিয়েছেন।

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:৩৩
বিতর্ক: ‘আউট’ হয়েও ফিরলেন  পেরেরা। বোলার শামি। ছবি: এএফপি।

বিতর্ক: ‘আউট’ হয়েও ফিরলেন  পেরেরা। বোলার শামি। ছবি: এএফপি।

দিলরুয়ান পেরেরার ডিআরএস বিতর্ক নিয়ে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ড যতই সাফাই দিক, ভারতীয় দল চুপচাপ থাকছে না। বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, বিরাট কোহালিদের তরফে এই ঘটনা সম্পর্কে ম্যাচ রেফারির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। ম্যাচ রেফারি ডেভিড বুন ইডেনের ডিআরএস বিতর্ক নিয়ে তদন্তে নেমেছেন বলে খবর। যদিও প্রকাশ্যে ভারতীয় দল থেকে এ নিয়ে কেউ মুখ খুলছেন না কারণ, নিয়ম অনুযায়ী তাঁরা সেটা পারেন না।

কী ঘটেছে রবিবারের ইডেনে?

দিলরুয়ানের বিরুদ্ধে মারাত্মক অভিযোগ উঠেছে যে, অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক স্টিভ স্মিথের মতোই তিনি ডিআরএস নেওয়ার ব্যাপারে ড্রেসিংরুমের সাহায্য নিয়েছেন। যেটা ক্রিকেটের আইনবিরুদ্ধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অভিযোগ প্রমাণিত হলে দিলরুয়ান এমনকী, নির্বাসিত পর্যন্ত হতে পারেন।

আরও পড়ুন: পেরেরার ‘রিভিউ’ নিয়ে বিতর্ক চরমে

মহম্মদ শামির ইনসুইঙ্গার দিলরুয়ানের প্যাডে আছড়ে পড়তেই ভারতীয় ক্রিকেটারদের জোরালো আবেদনে সাড়া দিয়ে আম্পায়ার নাইজেল লং আউট দিয়ে দেন। কাকতালীয় ভাবে এই লং-ই বেঙ্গালুরুতেও আম্পায়ার ছিলেন স্টিভ স্মিথের ঘটনাটির সময়। স্মিথ সতীর্থের ইঙ্গিতে ড্রেসিংরুম থেকে সাহায্যের অপেক্ষায় ছিলেন। এখানে দিলরুয়ান প্রথমে আউট হয়েই হাঁটতে শুরু করেন ড্রেসিংরুমের দিকে। তার পরেই হঠাৎ ঘুরে দাঁড়িয়ে ফিরে আসেন এবং আম্পায়ারের দিকে তাকিয়ে ডিআরএস চান।

দলবদ্ধ: ‘সুইং সুলতান’ শামিকে নিয়ে উচ্ছ্বাস দলের। ডিআরএস বিতর্কেও ঐক্যবদ্ধ দল। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

ইডেনের প্রেস বক্স থেকে ড্রেসিংরুম দেখার উপায় নেই কারণ প্লেয়ার্স ড্রেসিংরুম একই দিকে প্রেস বক্সের নীচে। কিন্তু ঘটনা মারাত্মক আকার নেয় কয়েক জন ধারাভাষ্যকারের তোলা অভিযোগে। বিশেষ করে প্রাক্তন নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটার এবং ইডেনে অন্যতম ধারাভাষ্যকার সাইমন ডুল বলতে থাকেন, শ্রীলঙ্কার ড্রেসিংরুম থেকে সঙ্কেত পাওয়ার পরেই ক্রিজে ফিরে এসেছেন দিলরুয়ান। শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট বোর্ড এক বিবৃতিতে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। রঙ্গনা হেরাথ— যিনি নয় নম্বর ব্যাটসম্যান হয়েও শ্রীলঙ্কার পক্ষে সর্বোচ্চ রান করে গেলেন (১০৫ বলে ৬৭), তিনিও সতীর্থের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ওই সময় হেরাথই ব্যাট করছিলেন দিলরুয়ানের সঙ্গে। হেরাথের দাবি, ড্রেসিংরুম থেকে সঙ্কেত পেয়ে ফিরে আসেননি দিলরুয়ান। এসেছিলেন, হেরাথের ডাকে। ভারতীয় শিবির যে ব্যাখ্যায় একেবারেই সন্তুষ্ট নয়। তাদের সাফ মনে হয়েছে, ড্রেসিংরুম থেকে সঙ্কেত পেয়েই দিলরুয়ান ফেরত এসেছেন।

স্টিভ স্মিথের ঘটনাটি ছিল বেঙ্গালুরু টেস্টে। আউট হওয়ার পরেও ড্রেসিংরুমের দিকে তাকিয়ে অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক সঙ্কেত পাওয়ার অপেক্ষা করছিলেন যে, তিনি রিভিউ নেবেন কি না। তাঁর সঙ্গী ব্যাটসম্যান পিটার হ্যান্ডসকম্বকে দেখা গিয়েছিল, হাত নেড়ে স্মিথকে ড্রেসিংরুমের সাহায্য নিতে বলছেন। যা দেখে উত্তেজিত ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহালি ছুটে এসে অভিযোগ করেন আম্পায়ারের কাছে। পরে এই ঘটনা নিয়ে তুলকালাম ঘটে যায়। স্মিথের সময় ‘ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম’-এর নতুন নামকরণ হয়ে যায়, ‘ড্রেসিংরুম রিভিউ সিস্টেম’। এ বার কি তাহলে ড্রেসিংরুম রিভিউ পার্ট টু?

• ৫৭তম ওভারে মহম্মদ শামির ইনসুইং লাগল দিলরুয়ান পেরেরার প্যাডে। আম্পায়ার নাইজেল লং ভারতীয়দের জোরাল আবেদনে সাড়া দিয়ে আউট দিলেন।

• দিলরুয়ান ড্রেসিংরুমের দিকে হাঁটা দিতে শুরু করেন। নিশ্চিত আউট জানার পরেই সাধারণত এমন প্রতিক্রিয়া হয় ব্যাটসম্যানের।

• নিজেদের ড্রেসিংরুমের দিকে তাকাতে দেখা যায় দিলরুয়ানকে। তার পরেই হাঁটা থামিয়ে ক্রিজে ফিরে আসেন তিনি। রিভিউ চাইলেন।

• আম্পায়ার নাইজেল লং তাঁকে রিভিউ নিতে দেন। রিভিউতে দেখা যায় অফস্টাম্প লাইনের বাইরে পায়ে বল লেগেছে। নট আউট।

• স্টিভ স্মিথের মতো এখানে ততটা পরিষ্কার হয়নি যে, ড্রেসিংরুম থেকে সঙ্কেত এসেছিল কি না। কিন্তু টিভি ধারাভাষ্যকারেরা বলতে থাকেন, সঙ্কেত না পেলে চলে যেতে গিয়েও ঘুরে দাঁড়াবেন কেন দিলরুয়ান?

• ঘটনার সময় দিলরুয়ান ৭ বল খেলে ০ রানে ছিলেন। বেঁচে গিয়ে আরও ২৭ বল তিনি খেলেন এবং রঙ্গনা হেরাথের সঙ্গে মূল্যবান ৪৩ রান যোগ করেন অষ্টম উইকেটে। তাই খেলার উপর ভাল মতোই প্রভাব ফেলেছে এই ঘটনা।

• শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ড বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, তাদের ড্রেসিংরুম থেকে কোনও সঙ্কেত পাঠানো হয়নি। হেরাথের দাবি, তিনি ডেকেছিলেন বলেই ফেরত এসেছিলেন দিলরুয়ান।

ঘটনা আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে কারণ জোরাল ওই আবেদনের সময় দিলরুয়ান ০ রানে ছিলেন। এর পর আরও ২৭ বল তিনি খেলেন এবং অষ্টম উইকেটে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা পার্টনারশিপ গড়েন রঙ্গনা হেরাথের সঙ্গে। দু’জনে মিলে যোগ করেন ৪৩ রান। অর্থাৎ, ম্যাচের গতি-প্রকৃতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে ওই ঘটনা প্রভাব ফেলেছে বলে ধরা যেতেই পারে।

আইসিসি নিয়ম অনুযায়ী, কোনও ক্রিকেটার যদি বাইরে থেকে সঙ্কেতের সাহায্যে ডিআরএস নিয়ে থাকেন, আম্পায়াররা সেই ডিআরএস বাতিল করে দিতে পারেন। স্টিভ স্মিথের ক্ষেত্রে যেটা করা হয়েছিল। দিলরুয়ানের ক্ষেত্রে নাইজেল লং রিভিউ নিতে দিয়েছেন। স্মিথের মতো দ্রুত তিনি বুঝে উঠতে পারেননি, কী ঘটল। কোহালি বা ভারতীয় ক্রিকেটারেরাও কেউ মাঠে তক্ষুনি বুঝতে পারেননি কারণ, তাঁরাও উইকেটটা পেয়েছেন ধরে নিয়ে উৎসব করতে ব্যস্ত ছিলেন।

কেউ কেউ বলছেন, আইসিসি-র উচিত গভীরে গিয়ে তদন্ত করা। সাধারণত, দলগুলোর কাছে লাইভ ম্যাচের সম্প্রচার ঢুকতে থাকে খুব দ্রুতগতিতে। প্রত্যেকটা দলের সঙ্গে কম্পিউটার বিশ্লেষক থাকেন। ডিআরএস চাওয়ার জন্য কোনও দল সময় পায় ১৫ সেকেন্ড। অত্যাধুনিক সফ্‌টওয়্যারের সাহায্যে কি সেই স্বল্প সময়ের মধ্যে কোনও দল তাদের ব্যাটসম্যানকে সঙ্কেত পাঠাতে পারে যে, রিভিউ নেবে কি না? বেঙ্গালুরুর পরে ইডেনের এই ডিআরএস বিতর্কে প্রশ্নটা জোরাল ভাবে উঠে পড়ল।

Cricket Mohammed Shami Dilruwan Perera Review Match referee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy