এত ভিতু হলে চলবে না— কোচবিহারে প্রশাসনিক বৈঠকে গিয়ে পুলিশকে এই কথাই বললেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলাদেশ থেকে ভারতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে অন্তঃসত্ত্বা সোনালি বিবিকে। তাঁকে বিএসএফ সীমান্তের ও পারে পাঠিয়ে দিয়েছিল বলে অভিযোগ। সেই প্রসঙ্গ তুলেই মমতার প্রশ্ন, স্থানীয় পুলিশ কী করছিল! তাদের সক্রিয় হওয়ার পরামর্শ দেন মমতা। সেই সঙ্গে সীমান্তে নাকা তল্লাশি বৃদ্ধি করতে বলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী নাম না-করে এ প্রসঙ্গে কেন্দ্র এবং বিএসএফ-কে কটাক্ষ করেন। তিনি জানান, যাঁরা সমালোচনা করেন, তাঁরাই খেয়ে যান। দোষ হয় অন্যের।
সম্প্রতি সোনালিকে বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে এনেছে রাজ্য সরকার। তাঁর স্বামী এবং পরিবারের কয়েক জন এখনও বাংলাদেশে আটকে রয়েছেন। সোমবার মমতা বলেন, ‘‘লোকাল পুলিশ কী করছে? গর্ভবতী মাকে নিয়ে এলাম। তাঁরা ভারতের নাগরিক। কাগজও রয়েছে। তাঁদের পুশব্যাক করেছিল। আমরা নিয়ে এলাম।’’ তার পরেই তিনি পুলিশকে সক্রিয় হওয়ার পরামর্শ দেন। তাঁর কথায়, ‘‘এত ভিতু হলে চলবে না। মারপিট করতে বলছি না। খুনখারাপি করতে বলছি না। প্রোঅক্টিভ (সক্রিয়) হোন।’’
দু’দিনের কোচবিহার সফরে গিয়েছেন মমতা। সোমবার সেখানে রবীন্দ্রভবনে প্রশাসনিক বৈঠকে পুলিশকে সীমান্তে নাকা চেকিং বৃদ্ধি করতে বলেন পুলিশমন্ত্রী মমতা। কেন, তা-ও জানিয়েছেন তিনি। মমতার কথায়, ‘‘নাকা চেকিং করুন ঠিকঠাক ভাবে। প্রচুর লেনদেন হচ্ছে বর্ডার দিয়ে। যারা বেশি সমালোচনা করে, তারাই খেয়ে যায়। দোষ হয় অন্য লোকের। সব পাখি মাছ খায়, দোষ হয় মাছরাঙার।’’
মমতা সোমবারের বৈঠকে জানান, কোচবিহারের রাজবংশীদের নোটিস পাঠিয়েছে অসম সরকার। এই নিয়ে ‘প্রতিবাদ’ জানান তিনি। সেই সঙ্গে পুলিশকে তাঁর বার্তা, অসম থেকে এসে এ রাজ্যের মানুষকে যাতে গ্রেফতার করে নিয়ে যেতে না পারে, তা দেখতে হবে। তিনি বলেন, ‘‘অসম সরকারের অধিকার নেই বাংলার লোককে চিঠি পাঠানোর। পুলিশকেও বলা থাকল, অন্য রাজ্য থেকে এসে যাতে আমার রাজ্যের লোককে গ্রেফতার করে নিয়ে যেতে না পারে, এটা দেখার দায়িত্ব আপনার।’’ তবে তিনি এ-ও জানিয়েছেন, অপরাধীদের রেয়াত করা হবে না। তাঁর কথায়, ‘‘অপরাধীদের অনুমতি দেব না। কিন্তু সাধারণ মানুষ আর অপরাধী এক নয়। কাউকে অপরাধী বানিয়ে দেওয়ার আগে দেখতে হবে, সে আদৌ চোর কি না!’’ পশ্চিমবঙ্গে তিনি ডিটেনশন ক্যাম্প করতে দেবেন না বলেও জানিয়েছেন মমতা।
আরও পড়ুন:
সেই সঙ্গে বিএলও, বিএলএ-দের বার্তা দিয়েছেন, এসআইআরের কাজের পাশাপাশি রাজ্যের উন্নয়নের কাজও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তাঁর অভিযোগ, ‘ইচ্ছা করেই’ এই সময়ে (ভোটের আগে) রাজ্যে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) করা হচ্ছে। কেন এত কম সময়ে এসআইআর করা হচ্ছে, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি। কাজের চাপে রাজ্যে ৪১ জন বিএলও মারা গিয়েছে। অন্য রাজ্যেও কাজের চাপে বিএলও-দের মৃত্যু হয়েছে বলে জানান তিনি।
মমতার সোমবারের বৈঠকে উত্তরবঙ্গের আটটি জেলার বিভিন্ন দফতরের প্রশাসনিক ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। কন্যাশ্রী, যুবশ্রী, লক্ষ্মীর ভান্ডার-সহ বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা স্থানীয়দের হাতে তুলে দেন তিনি। এই প্রশাসনিক বৈঠকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে আটটি জেলার বেশ কিছু প্রকল্পের শিলান্যাস এবং উদ্বোধনও করেন মুখ্যমন্ত্রী। কোচবিহার জেলায় যে ৫৯টি প্রকল্পের শিলান্যাস করা হয়, তাতে মোট খরচ হচ্ছে ১৭৬ কোটি টাকা। গোটা উত্তরবঙ্গ জুড়ে আটটি জেলায় ৬৮৯টি প্রকল্পের ১,৮৬৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রশাসনিক বৈঠক শেষ করে মুখ্যমন্ত্রী যান কোচবিহারের মদনমোহন মন্দিরে। সেখানে তিনি পুজো দেন।