Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
India Vs Australia

ওয়ার্নার-ফিঞ্চের জোড়া সেঞ্চুরি, ওয়াংখেড়েতে ভারতকে হারিয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া

প্রথমে ব্যাট করে ভারত তোলে ২৫৫ রান। ৩৭.৪ ওভারেই ম্যাচ জিতে নেয় অস্ট্রেলিয়া।

ধ্বংসলীলা চালালেন ওয়ার্নার ও ফিঞ্চ। ছবি— এএফপি।

ধ্বংসলীলা চালালেন ওয়ার্নার ও ফিঞ্চ। ছবি— এএফপি।

সংবাদ সংস্থা
মুম্বই শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২০ ১৩:১১
Share: Save:

বাংলাদেশ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কাকে হেলায় উড়িয়ে দিয়ে মেঘের উপর দিয়ে হাঁটছিল বিরাট কোহালির ভারত। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা বলছিলেন, এই ভারতই একমাত্র অস্ট্রেলিয়াকে রুখে দিতে পারে।

মঙ্গলবার ওয়াংখেড়েতে ভারতীয় ক্রিকেট আছড়ে পড়ল বাস্তবের রুখা-সুখা জমিতে। বিপজ্জনক ডেভিড ওয়ার্নার ও অ্যারন ফিঞ্চের দুরন্ত ব্যাটিংয়ে উড়ে গেল ভারত। ন’ বছর আগে এই ওয়াংখেড়েতেই শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতেছিলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনিরা। লিখেছিলেন গৌরবের এক ইতিহাস। এ দিন সেই ওয়াংখেড়েতেই ৭৪ বল বাকি থাকতে ভারতকে মাটি ধরাল অস্ট্রেলিয়া। ১০ উইকেটে ম্যাচ জিতে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে অস্ট্রেলিয়া এগিয়ে গেল ১-০-এ। টস জিতে ভারতকে ব্যাট করতে পাঠিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্কদের দাপটে পুরো পঞ্চাশ ওভার খেলতে পারেনি ভারত। ৪৯.১ ওভারে ‘টিম ইন্ডিয়া’র ইনিংস শেষ হয়ে যায় ২৫৫ রানে। অনেকেই ভেবেছিলেন এই ভারতীয় দলে রয়েছেন যশপ্রীত বুমরা, শার্দুল ঠাকুর, মহম্মদ শামির মতো বোলার। তাই ২৫৫ রানের পুঁজি নিয়েও শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়াকে আটকে রাখতে সমস্যা হবে না ভারতের। শুরু থেকেই ‘বিষ’ ঢালবেন ভারতীয় বোলাররা।

আরও পড়ুন: কামিন্সের বলে আঘাত পেয়ে কনকাশন পন্থের, কিপিং করছেন রাহুল

রান তাড়া করতে নেমে ওয়ার্নার ও ফিঞ্চ অন্য ছবি তুলে ধরলেন। শুরু থেকেই ঝড় তোলেন দুই অজি ওপেনার। যে বুমরাকে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বোলার বলেন কোহালি, তাঁকে খুব সহজেই সামলালেন দুই অজি ওপেনার। শামি-শার্দুল ঠাকুরও পারলেন না ওয়ার্নার (১২৮, ১১২ বলে) ও ফিঞ্চকে (১১০, ১১৪ বলে) থামাতে। দুই ওপেনারের সেঞ্চুরিই বলে দিচ্ছে কতটা প্রাধান্য নিয়ে তাঁরা ব্যাট করেছেন। উল্টোদিকে শুরু থেকেই ছন্দহীন দেখাল ভারতীয় ব্যাটিংকে। শিখর ধওয়ন ও লোকেশ রাহুলের জুটি ভাঙার পর আর হল না তেমন কোনও জুটি। বরং তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল ভারতের ব্যাটিং। ইনিংস শেষের দিকে প্রত্যাশিত গতি পেল না একেবারেই।

আরও পড়ুন: ভক্তের কাছ থেকে দারুণ উপহার পেলেন কামিন্স, ফিরে গেলেন ফেলে আসা কলকাতার দিনগুলোয়

২৮ থেকে ৩৩, এই পাঁচ ওভারের মধ্যে ৩০ রানে চার উইকেট হারিয়ে ঘেঁটে গিয়েছিল টিম ইন্ডিয়ার ইনিংস। নেমেছিল মিডল অর্ডারে ধ্বস। যা লড়াইয়ে ফিরিয়ে আনে অস্ট্রেলিয়াকে। ১০ বলের ব্যবধানে ড্রেসিংরুমে ফেরেন রাহুল ও ধওয়ন। তার ফলে আচমকাই চাপে পড়ে গিয়েছিল ভারতীয় ইনিংস। সেই চাপই কয়েকগুণ বেড়েছিল। কারণ, চার নম্বরে নামা বিরাট কোহালিও বেশি ক্ষণ ক্রিজে থাকেননি। ১৪ বলে ১৬ রান করে অ্যাডাম জাম্পাকে ফিরতি ক্যাচ দেন তিনি। সেই ধাক্কা আর সামলে ওঠা যায়নি। নয় বল পরে মিচেল স্টার্কের বলে আউট হন শ্রেয়াস আইয়ারও (৪)। তাঁর খোঁচা জমা পড়ে উইকেটকিপার অ্যালেক্স ক্যারির গ্লাভসে।

ষষ্ঠ উইকেটে ঋষভ পন্থ ও রবীন্দ্র জাডেজা যোগ করেছিলেন ৪৯ রান। যখন মনে হচ্ছিল দু’ জনে ভদ্রস্থ স্কোরে নিয়ে যাবেন ভারতকে, তখনই ফেরেন জাডেজা (৩২ বলে ২৫)। ঋষভও (৩৩ বলে ২৮) ফিরলেন তার পর। শার্দুল ঠাকুর আগ্রাসী হওয়ার আগেই (১৩ বলে ১০) ফিরলেন। ২১৩ রানে ষষ্ঠ উইকেট পড়ার পরই বোঝা গিয়েছিল বড় রান আর সম্ভব নয়। কারণ, ভারতের টেলএন্ডারদের দুর্বলতা ক্রিকেটমহলে বেশ প্রচারিত। সেটাই আরও একবার প্রমাণিত হল। তাও কুলদীপ যাদব (১৫ বলে ১৭) ও মহম্মদ শামির (১৫ বলে ১০) জন্য আড়াইশোর গণ্ডি পেরিয়েছিল ভারত। ঋষভের সামনেও বড় রানের মাধ্যমে নিজেকে প্রমাণের মঞ্চ ছিল। কিন্তু তিনি তা পারলেন না। ছয় নম্বরে নেমে দায়িত্ববান হওয়াও দরকার তাঁর। পাশাপাশি, প্রশ্ন উঠছে অস্ট্রেলিয়ার মতো শক্তি‌শালী বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধে ভারতের কি ব্যাটিং গভীরতা আরও বাড়িয়ে নামা উচিত ছিল না! ব্যাট-বলে ভারতের পরীক্ষা নিল অস্ট্রেলিয়া।

ওয়াংখেড়েতে শিখর ধওয়ন পারলেও হাফ-সেঞ্চুরি পেলেন না রাহুল। বাঁ-হাতি স্পিনার অ্যাশটন আগারকে ক্রিজ ছেড়ে এগিয়ে এসে মারতে গিয়ে কভারে স্টিভ স্মিথকে সহজ ক্যাচ দেন তিনি। তাঁর ৬১ বলে ৪৭ রানের ইনিংসে ছিল চারটি চার। বড় রানের আশ্বাস ছিল তাঁর ব্যাটে। কিন্তু তা হল না। ২৭.১ ওভারে ফিরেছিলেন তিনি। আর শিখর ধওয়ন ফেরেন ২৮.৫ ওভারে। শুরুতে ছন্দহীন দেখালেও ধীরে ধীরে হাত খুলছিলেন তিনি। ৬৬ বলে পঞ্চাশে পৌঁছেছিলেন। বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করেছিলেন দিল্লির বাঁ-হাতি ওপেনার। মঙ্গলবারও তেমন সম্ভাবনা জন্ম নিচ্ছিল। কিন্তু তা হল না। প্যাট কামিন্সের বলে অ্যাশটন আগারকে ক্যাচ দিয়ে রাহুলের পরই ফিরলেন তিনি। ৯১ বলে তাঁর ৭৪ রানের ইনিংসে ছিল নয়টি চার ও একটি ছয়।

ইনিংসের গোড়ায় পঞ্চম ওভারেই ধাক্কা খেয়েছিল ভারত। মিচেল স্টার্কের বলে লং-অফে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গিয়েছিলেন রোহিত শর্মা (১৫ বলে ১০)। তিন নম্বরে নেমেছিলেন লোকেশ রাহুল। শিখর ধওয়নের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটের জুটিতে ১২১ রান যোগ করে ইনিংস মেরামত করলেন তিনি। প্রথম পাওয়ারপ্লে-র ১০ ওভারে এসেছিল ৪৫। ভারতের ১০০ এল ১৯.৫ ওভারে। ১৫০ এল ৩০.৫ ওভারে। ২০০ এল ২৪৬ বলে। ২৫০ এল ৪৮.৩ ওভারে। অস্ট্রেলিয়ার সফলতম বোলার মিচেল স্টার্ক (৩-৫৬)। কেন রিচার্ডসন (২-৪৩), প্যাট কামিন্স (২-৪৪), অ্যাডাম জাম্পা (১-৫৩), অ্যাশটন আগার (১-৫৬) বাকি উইকেট ভাগ করে নিলেন। তার পরে ব্যাট করতে নেমে ধ্বংসলীলা চালালেন ওয়ার্নার ও ফিঞ্চ।

সংক্ষিপ্ত স্কোরভারত (৪৯.১ ওভার) ২৫৫

অস্ট্রেলিয়া (৩৭.৪ ওভার) ২৫৮-০

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE