ফলস নাইন নয়। উইং নয়। উইথড্রল ফরোয়ার্ডও নয়। এত দিন স্ট্রাইকিং জোনে বিভিন্ন ফরোয়ার্ড পজিশনে খেলতে দেখা গিয়েছে লিওনেল মেসিকে। এত বছর ধরে বার্সেলোনার গোল ভাগ্য নির্ভর করে এসেছে দশ নম্বর জার্সিধারী এই ফুটবল প্রতিভার উপর। লং রেঞ্জ হোক, পাঁচজনকে ড্রিবল করে হোক, অদ্ভুত সমস্ত গোল মানেই তো লিওনেল মেসি।
এ বার সেই গোল শিকারিকেই হয়তো দেখা যাবে স্কিমারের ভূমিকায়। সেভিয়ার বিরুদ্ধে ইউরোপীয় সুপার কাপে নামার আগে লিওনেল মেসি সমর্থকদের আগাম বার্তা দিয়ে রাখলেন, তাঁকে মাঝমাঠে দেখলে যেন তারা চমকে না যায়। ‘‘দলের যদি সাহায্যে আসতে পারি তা হলে যে কোনও পজিশনে খেলতে রাজি আছি। অনেক ফুটবলারই মাঝমাঠে চলে আসে কেরিয়ারের পরের দিকটায়। এমনও হতে পারে আমি পুরোপুরি মাঝমাঠে নেমে গেলাম,’’ বলছেন মেসি। ফুটবল বিশ্বকে চমকে দিয়ে।
প্রশ্ন একটাই, মেসি যদি মাঝমাঠে নামেন তা হলে গোলটা করবে কে? সুয়ারেজ ও নেইমার দু’জনেই গোল স্কোরার। তবে মেসির মতো ধারাবাহিকতা নেই। কিন্তু এলএম টেনের যুক্তি, ‘‘আমি মাঝমাঠে অনেক বার খেলে ফেলেছি। ডিপ ফরোয়ার্ড হিসাবে খেলতে কোনও অসুবিধা নেই আমার। অনেক ফুটবলার আছে যারা পজিশন পাল্টে খেলেছে। হয়তো সব সময় পুরো গতিতে দৌড়ব না। কিন্তু দলকে তো সাহায্য করতে পারব।’’
সদ্য শেষ হওয়া কোপা আমেরিকায় প্রতিটা ম্যাচই ডিপ মিডফিল্ড থেকে খেলেছেন মেসি। শুরুতে ফরোয়ার্ডে থাকলেও যত ম্যাচ এগিয়েছে, তত বেশি করে মাঝমাঠে নেমে এসেছেন এলএম টেন। আর শোনা যাচ্ছে, বার্সায় নাকি এখন থেকেই এনরিকে ভাবছেন জাভির পরিবর্তে মেসিকে অনেক বেশি ডিপে খেলানোর কথা। কারণ এলএম টেনের পাস দেওয়ার ক্ষমতা অপার্থিব।
গত বছর ক্লাব তিনটে ট্রফি জিতেছে। এ বার সমর্থকেরা দাবি তুলছেন, ‘এ বার চাই ছ’টা।’ সেই ছ’টা ট্রফি জেতার অনন্য নজির গড়তে প্রথম বাধা সেভিয়া। যুদ্ধের প্রেক্ষাপট জর্জিয়ায় ইউরোপীয় সুপার কাপ। অর্থাত্ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ী বার্সেলোনার বিরুদ্ধে ইউরোপা লিগ জয়ী সেভিয়া। লিওনেল মেসির প্রত্যাবর্তনে কি লুই এনরিকের ট্রফি ভাগ্য বজায় থাকবে?
ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে অবশ্য বার্সেলোনা শিবির দেখলে মনে হবে মিনি হাসপাতাল। মামসে আক্রান্ত হয়ে ছিটকে গিয়েছেন নেইমার। আবার পেশির চোটে খেলতে পারবেন না ইয়র্দি আলবা। তাই বার্সার সমস্ত আশা ফের সেই দশ নম্বরের উপর নির্ভর করছে। সেভিয়া লড়াইয়ের আগেও সেটা মনে করিয়ে দিতে চান মেসির সতীর্থ ইভান রাকিটিচ। ‘‘আমার তো মনে হয় সর্বকালের সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসি,’’ বলছেন রাকিটিচ। মরসুমের শুরু ট্রফি দিয়ে হলে আরও আত্মবিশ্বাস বাড়বে দলের সেটাই মনে করছেন বার্সার মাঝমাঠ তারকা। ‘‘অবশ্যই একটা ট্রফি সব সময় দলের জন্য ভাল। আর মরসুম শুরুতেই যদি সেটা পাওয়া যায় তবে সেটা আরও ভাল হবে,’’ বলছেন রাকিটিচ। মেসি ছাড়াও দলের ফরোয়ার্ড লাইনে থাকবেন লুই সুয়ারেজ। যাঁর প্রশংসায় আগেই মেসি বলেছিলেন, ‘‘সুয়ারেজ খুবই ভাল স্ট্রাইকার। ওর সঙ্গে খেলতে কোনও অসুবিধা হয় না।’’ তৃতীয় বার সুপার কাপ জেতার আগে মেসি ফেসবুকে সমর্থকদের আশ্বস্ত করছেন, ‘‘টিবিলিসিতে পৌঁছলাম। আশা করছি সমর্থকদের আর একটা স্মরণীয় মুহূর্ত উপহার দেব।’’
সুপার কাপ ম্যাচটাকে আবার বলা হচ্ছে পেদ্রোর বিদায়ী ম্যাচ। কারণ এই ম্যাচের পরেই বার্সা তারকা ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডে সই করতে চলেছেন।
বার্সা শিবিরে মেসির যতই প্রশংসা করা হোক না কেন, সেভিয়া কোচ উনাই এমেরি এখন থেকেই আর্জেন্তিনা রাজপুত্রকে আটকাতে ছক কষতে আরম্ভ করেছেন। কার্লোস বাক্কার মতো গুরুত্বপূর্ণ স্ট্রাইকার ক্লাব ছাড়লেও আটজন নতুন ফুটবলার সই করেছেন সেভিয়ায়। যাঁদের মধ্যে রয়েছেন বার্সা থেকে আসা ডেনিস সুয়ারেজও। বার্সার বিরুদ্ধে খেলার আগে যিনি হয়ে উঠতে চান ‘ঘরের শত্রু বিভীষণ।’ ‘‘বার্সেলোনার বিরুদ্ধে খেলাটা খুব স্মরণীয় হবে। তবে আমি সুপার কাপ জিততে মরিয়া। সেভিয়াকে জেতাতে সাহায্য করব,’’ বলেছেন তিনি। সেভিয়ার বিরুদ্ধে বরাবর গোল করে এসেছেন মেসি। তবে দলের গোলকিপার বেটো মনে করছেন এলএম টেনকে আটকানোর রাস্তা আছে। ‘‘মেসিকে আটকানো যাবে না বললে ভুল। কিন্তু সেটা গোটা দলের দায়িত্ব। শুধু আমার নয়,’’ বলছেন সেভিয়া গোলকিপার।
এখন দেখার, মেসি কোন পজিশনে খেলেন? ফরোয়ার্ড না মাঝমাঠ?