Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

‘গোল না পেলেও বার্সার জয়ের নায়ক মেসিই’

বার্সেলোনা ম্যানেজার আর্নেস্তো ভালভার্দে জানতেন, অ্যাওয়ে ম্যাচে রোমা শুধু রক্ষণাত্মক ফুটবলই খেলবে না, মেসিকে আটকানোর জন্য মরিয়া হয়েও থাকবে।

রোমা-র বিরুদ্ধে গোল পাননি মেসি, তবু সমর্থকদের মন জয় করে ফিরলেন তিনি।

রোমা-র বিরুদ্ধে গোল পাননি মেসি, তবু সমর্থকদের মন জয় করে ফিরলেন তিনি।

শিশির ঘোষ
শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৮ ০৪:২৯
Share: Save:

জুভেন্তাসের বিরুদ্ধে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর বিস্ময় গোলের পরে যাবতীয় আকর্ষণ ছিল মেসিকে নিয়ে। বুধবার রাতে ক্যাম্প ন্যু-তে এএস রোমার বিরুদ্ধে আর্জেন্তিনা অধিনায়ক কী করে, তা নিয়েই আগ্রহ ছিল তুঙ্গে। মেসি গোল করতে না পারায় অনেকেই প্রচণ্ড হতাশ। আমি কিন্তু তাদের দলে নেই। কারণ, মেসির পারফরম্যান্স কখনওই গোল দিয়ে বিচার করা যায় না। আমার মতে, বার্সেলোনার জয়ের আসল নায়ক কিন্তু মেসি-ই।

বার্সেলোনা ম্যানেজার আর্নেস্তো ভালভার্দে জানতেন, অ্যাওয়ে ম্যাচে রোমা শুধু রক্ষণাত্মক ফুটবলই খেলবে না, মেসিকে আটকানোর জন্য মরিয়া হয়েও থাকবে। এই কারণেই বুধবার রাতে ভালভার্দে রণনীতিতে সামান্য পরিবর্তন করেছিলেন। ৪-৪-২ ছকে সামনে লুইস সুয়ারেস ও মেসি-ই ছিল। কিন্তু খেলাটা শুরু হওয়ার পরেই মেসি একটু নীচে নেমে এল। কারণ, ও বল ধরলেই রোমার তিন-চার জন ফুটবলার ওকে ঘিরে ধরছিল। মেসির মতো ভয়ঙ্কর ফুটবলার বিপক্ষে থাকলে সব দলই এই ধরনের ফুটবল খেলবে। যদিও তাতে লাভ খুব একটা হয় না। বরং মেসি একটু পিছন থেকে খেলায় আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিল। আন্দ্রে ইনিয়েস্তার সঙ্গে জুটি বেঁধে আক্রমণের ঝড় তুলছিল। যা সামলাতে না পেরে ৩৮ মিনিটে নিজের গোলেই বল ঢুকিয়ে দিল দানিয়েল দে রোসির মতো অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার।

মেসির সঙ্গে পাস খেলেই রোমা পেনাল্টি বক্সের কাছে পৌঁছে গোল লক্ষ্য করে শট নেয় ইনিয়েস্তা। যা বিপন্মুক্ত করতে গিয়েই আত্মঘাতী গোল করে বসে দে রোসি। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল ম্যাচের ৫৫ মিনিটে। এ বার আর এক ডিফেন্ডার কোস্তাস মোনোলাসের আত্মঘাতী গোলে পিছিয়ে পড়ে রোমা। এই গোলের নেপথ্যেও নায়ক সেই মেসি। এ বার অবশ্য ইনিয়েস্তার বদলে মেসির সঙ্গী ছিল ইভান রাকিচিত। ৬০ মিনিটে জেরার পিকে গোল করল সেই মেসির পাস থেকেই। বার্সলোনার হয়ে শেষ গোল করল সুয়ারেস। ৮৯ মিনিটে ডেনিস সুয়ারেসের পাস থেকে। প্রায় এক বছর পরে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গোল পেল উরুগুয়ে স্ট্রাইকার। সুয়ারেসের গোলের দু’মিনিট আগে অবশ্য রোমার এডেন জেকো গোল করে ব্যবধান কমায়।

উল্লাস: রোমার বিরুদ্ধে গোল করার পরে লুইস সুয়ারেস। ছবি: রয়টার্স

বার্সেলোনার চারটির মধ্যে তিনটি গোলের ক্ষেত্রেই অবদান মেসির। এই রকম অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্সের পরেও দেখছি, অনেকেই হতাশা প্রকাশ করেছে। আমার মতে বড় ফুটবলার তারাই, যারা পরিস্থিতি অনুযায়ী খেলার ধরন বদল করতে পারে। এই প্রজন্মের ফুটবলারদের মধ্যে মেসি, রোনাল্ডোরা সেই পর্যায়ে পড়ে। মেসি খুব ভাল ভাবেই জানত, ওকে কখনওই রোমার ফুটবলাররা স্বাভাবিক খেলা খেলতে দেবে না। মেরেধরে যে ভাবেই হোক আটকানোর চেষ্টা করবে। তাই ও নীচে নেমে গিয়েছিল।

কোনও তুলনায় যাচ্ছি না, কিন্তু বুধবার রাতে মেসির খেলা দেখে আমার কৃশানু দে-র কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিপক্ষের ফুটবলারদের শুরু থেকেই লক্ষ্য থাকত কৃশানুকে খেলতে না দেওয়া। এই পরিস্থিতি তৈরি হলেই দেখতাম, ও নীচে নেমে যেত। আমাকে ও চিমাকে বলত, ‘‘গোল করার জন্য তৈরি থাকো। আমি পাস দেব তোমাদের।’’ কৃশানুর সৌজন্যে আমি ও চিমা বহু ম্যাচে গোল করে নায়কের সম্মান নিয়ে মাঠ ছেড়েছিলাম। কিন্তু জানতাম আসল নায়ক কৃশানুই।

বার্সেলোনা: মার্ক আন্দ্রে টার স্টেগান, জর্ডি আলবা, স্যামুয়েল উমতিতি, জেরার পিকে, নেলসন সেমিদো, আন্দ্রে ইনিয়েস্তা (ডেনিস সুয়ারেস), সের্জিও বুস্কেৎস (পাওলিনহো), ইভান রাকিতিচ, সের্জিও রোবের্তো (আন্দ্রে গোমেস), লুইস সুয়ারেস ও লিয়োনেল মেসি।

রোমা: অ্যালিসন বেকার, আলেকজান্দার কোলারভ, ফেদ্রেকো ফাজিয়ো, কোস্তাস মোনোলাস, ব্রুনো পেরেস, দিয়েগো পেরোত্তি, লোরেঞ্জো পেলেগ্রিনি (ম্যাক্সিম গুনালোঁ), দানিয়েল দে রোসি (গ্রেগরিও দেফরেল), কেভিন স্ট্রুটম্যান, আলেসান্দ্রো ফ্লোরেঞ্জি (স্তেফান সারাওয়ে ও এডেন জেকো।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE