Advertisement
১৮ মে ২০২৪

প্রতারণা করিনি, বলে দিলেন পুনর্জন্মের মেসি

‘‘তোমাদের টপকে একটা গোল আজ দেবই দেব।’’ ‘‘আরে, তুমি খেলছ? আমি তো জানতাম তুমি অবসর নিয়ে ফেলেছ!’’ ‘‘ম্যাচটা শেষ হোক। এমন অবস্থা করব, তুমি ভাববে কেন আমি অবসর ভাঙলাম!’’ নাটকীয় সংলাপ নিঃসন্দেহে। আর সংলাপের প্রেক্ষাপট শুনলে ব্যাপারটা আরও বেশি নাটকীয় মনে হবে। বিশেষ করে তাঁদের, যাঁরা ফুটবলটা একটু-আধটু দেখেন।

 গোলের পর দি’মারিয়ার আলিঙ্গনে। -এএফপি

গোলের পর দি’মারিয়ার আলিঙ্গনে। -এএফপি

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৪:২৪
Share: Save:

‘‘তোমাদের টপকে একটা গোল আজ দেবই দেব।’’

‘‘আরে, তুমি খেলছ? আমি তো জানতাম তুমি অবসর নিয়ে ফেলেছ!’’

‘‘ম্যাচটা শেষ হোক। এমন অবস্থা করব, তুমি ভাববে কেন আমি অবসর ভাঙলাম!’’

নাটকীয় সংলাপ নিঃসন্দেহে। আর সংলাপের প্রেক্ষাপট শুনলে ব্যাপারটা আরও বেশি নাটকীয় মনে হবে। বিশেষ করে তাঁদের, যাঁরা ফুটবলটা একটু-আধটু দেখেন।

কারণ আর কিছুই নয়, সংলাপের দুই চরিত্র। এক জন, লুইস সুয়ারেজ। অন্য জনের নাম লিওনেল মেসি!

উরুগুয়ে বনাম আর্জেন্তিনা ম্যাচের ঠিক আগেকার ঘটনা। বিশ্বকাপের কোয়ালিফায়ার খেলতে নামার আগে নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলেন দুই বার্সেলোনা সতীর্থ। তাঁদের মুখ ঢাকা ছিল, তাই টিভি ক্যামেরায় ঠিকঠাক বোঝা যায়নি মেসি-সুয়ারেজ কী নিয়ে কথা বলছেন। কিন্তু তাই বলে ফুটবল ভক্তরা ছেড়ে দেবেন কেন?

নানা রকম ভিডিও ফুটেজ ঘেঁটে ঘেঁটে একটি ওয়েবসাইটের কয়েকজন ‘বিশেষজ্ঞ’ সংলাপের মর্মোদ্ধার করে ফেলেছেন। এবং তাঁদের মতে, মেসি নাকি ম্যাচ শুরুর আগে সুয়ারেজকে হাসতে হাসতে বলে দেন, উরুগুয়ের রক্ষণকে টপকে তিনি গোল করবেন। যার উত্তরে সুয়ারেজের ঠাট্টা, তিনি ভেবেছিলেন মেসি বোধহয় দেশের হয়ে আর খেলবেন না!

এত পর্যন্ত পড়ে যদি মনে হয়, আর্জেন্তিনার শহর মেন্ডোজার মাঠে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন ম্যাচ শুধু হাসিঠাট্টায় আটকে ছিল, তা হলে সেটা একেবারেই ভুল। এই ম্যাচের গুরুত্ব স্রেফ স্কোরবোর্ড থেকেও বোঝা যাবে না। বৃহস্পতিবার জিতে দক্ষিণ আমেরিকান গ্রুপের এক নম্বর জায়গাটা যে আরও পাকাপোক্ত করল আর্জেন্তিনা, তাতেও ধরা যাবে না এই ম্যাচের গুরুত্ব।

এই ম্যাচ তো শুধু একটা ফুটবল ম্যাচ ছিল না। এটা ছিল এক জাতীয় নায়কের প্রত্যাবর্তনের মঞ্চ। যে নায়ক চোখের জলে মাঠ ছেড়েছিলেন, বিশ্ব জুড়ে তাঁর ভক্তদের কাঁদিয়ে। পরপর তিনটে ট্রফি হারিয়ে যে নায়ক বলে দিয়েছিলেন, আর নয়। সেই নায়ক যে ম্যাচে অবসর ভেঙে ফের সাদা-নীল জার্সিতে মাঠে নামলেন, সেই ম্যাচ কি শুধুই ম্যাচের বৃত্তে আটকে থাকতে পারে?

আর এমনই সেই প্রত্যাবর্তনের জাদু যে, ম্যাচ শেষে স্কোরলাইনটা ফুটনোটের থেকেও নীচে চলে গিয়েছে। আর্জেন্তিনা-সহ গোটা বিশ্ব যেন নতুন প্রেমের ঘোরলাগা চোখে দেখছে তাদের পুরনো প্রেমের মানব লিওনেল মেসিকে।

না হলে যে প্লেয়ার বছরের পর বছর দেশের জার্সিতে খেলেছেন, তাঁর প্রত্যাবর্তন আবেগের এমন সাইক্লোন সৃষ্টি করে কী ভাবে? কেন এক মেসি-ভক্ত গ্যালারির রেলিং টপকে মাঠে ঢুকে পড়েন, মেসিকে জড়িয়ে ধরার আকুতিতে? কেন সে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে মাঠে? যেন রক্তমাংসের ফুটবলার নন, সামনে দাঁড়িয়ে ঈশ্বর স্বয়ং!

না হলে কেন আর এক মেসি-ভক্ত টিভি ক্যামেরার সামনে ব্যানার টাঙিয়ে দেন— লিও, আমাদের এত কিছু দিয়েছ তুমি। তোমাকে ধন্যবাদ। আর তোমাকে যে আমরা কিছুই দিতে পারিনি, তার জন্য ক্ষমা চাইছি। মেসিদের ড্রেসিংরুম আর মাঠের মধ্যে যে টানেল, সেই টানেলের পাশে ওই ভক্ত ব্যানারটা নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। ম্যাচ শুরুর ঝাড়া আড়াই ঘণ্টা আগে!

না হলে কেন মেসির আগমনের অপেক্ষায় মেন্ডোজা বিমানবন্দরের সামনে অষ্টমীর ম্যাডক্স স্কোয়্যারের ভিড় জমে যায়? না হলে কেন মেসির হোটেলের সামনে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকেন হাজার-হাজার ভক্ত? না হলে কেন মেসির পায়ে বল আসার সঙ্গে সঙ্গে গ্যালারির গর্জন জীবন্ত হয়ে ওঠে?

আবেগের ঢেউ নিশ্চয়ই বেসামাল করে দিয়েছিল মেসিকেও। ম্যাচের পর তাঁর মন্তব্যই যার প্রমাণ। ‘‘এত আবেগ, এত ভালবাসার জন্য আমি কৃতজ্ঞ,’’ পরে বলছিলেন মেসি। এবং এটাও বলেন যে, শতবার্ষিকী কোপার পর তাঁর অবসর ঘোষণার পিছনে খাঁটি আবেগ ছাড়া আর কিছু ছিল না। ‘‘আমি কারও সঙ্গে প্রতারণা করার চেষ্টা করিনি। যেটা মনে হয়েছিল, সেটাই বলেছিলাম। এখন আমার খুব আনন্দ হচ্ছে।’’

হঠাৎ থমকে যাওয়া প্রেমকাহিনির পুনর্জন্মের লগ্নে আবেগ থাকবে, ঠিক। মেসির সঙ্গে আর্জেন্তিনার পুনর্মিলনের রাতে তা পর্যাপ্ত পরিমাণে ছিলও। আর হয়তো ছিল স্বয়ং ঈশ্বরের স্পর্শ। না হলে এই ম্যাচের একমাত্র গোলের পাশে লিওনেল মেসির নাম থাকে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Leo Messi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE