Advertisement
E-Paper

‘শাপমুক্তি’র ম্যাচে মেসির ধৈর্য মুগ্ধ করল

অবশেষে মঙ্গলবার রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে শেষমেশ চেলসির বিরুদ্ধে নবম ম্যাচে গোল করতে দেখলাম মেসিকে।

দীপেন্দু বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৪:২০
উচ্ছ্বাস: লন্ডনে গোল করে ইনিয়েস্তার সঙ্গে মেসি। ছবি: গেটি ইমেজেস

উচ্ছ্বাস: লন্ডনে গোল করে ইনিয়েস্তার সঙ্গে মেসি। ছবি: গেটি ইমেজেস

চেলসি ১ : বার্সেলোনা ১

গত কয়েক দিন ধরে দুনিয়া জুড়ে আলোচনা চলছিল, লিওনেল মেসি কেন চেলসির বিরুদ্ধে শেষ আট ম্যাচেও গোল পায়নি তা নিয়ে। এই ম্যাচটায় কেন মেসি গোল পায় না, তার কোনও ফুটবল-ব্যাখ্যা পাচ্ছিলাম না।

অবশেষে মঙ্গলবার রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে শেষমেশ চেলসির বিরুদ্ধে নবম ম্যাচে গোল করতে দেখলাম মেসিকে। যা দেখে বুঝলাম, ঠান্ডা মাথায় ধৈর্য ধরে, শিকারি বাঘের মতো ডিফেন্ডারদের ভুলের জন্য অপেক্ষা করেই পরীক্ষাটা উতরে গেল মেসি।

বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার। তাঁর চেলসির বিরুদ্ধে শেষ আট ম্যাচে গোল নেই। দ্বিতীয়ার্ধের মাঝপথে উইলিয়ানের গোলে এগিয়ে গিয়েছে চেলসি। মেসিকেও জোনাল মার্কিংয়ে রেখে ফাঁকা জায়গা প্রায় দিচ্ছেন না চেলসি কোচ আন্তোনিও কন্তে। মেসি কিন্তু তাতেও অবিচল। ধৈর্য হারায়নি। খেলা শেষ হওয়ার ঠিক পনেরো মিনিট আগে চেলসি রক্ষণের একটি ভুল। আর সেখান থেকেই চেলসির বিরুদ্ধে মেসির গোল-ক্ষরার শাপমুক্তি।

মেসির গোলে ড্র করে ঘরের মাঠে বার্সেলোনা সুবিধাজনক অবস্থায় থাকলেও, এই বার্সেলোনার আসল লোক কিন্তু আন্দ্রে ইনিয়েস্তা। মেসি-সুয়ারেস-দের টিমে মাঝমাঠের জেনারেল বলা যায় ওকে। মেসির গোল শোধের সময় সেটা আরও ভাল করে বুঝিয়ে দিয়ে গেল ও। চেলসির ড্যানিশ ডিফেন্ডার আন্দ্রে ক্রিস্টেনসেন যখন বলটা রক্ষণের বাঁ দিক থেকে স্কোয়ারে ঠেলল, তখন ফ্যাব্রেগাস বলটা ধরে বিপন্মুক্ত করার বদলে বেশি ব্যস্ত থাকল মেসিকে কভার করতে। সেটা দেখেই গোলের গন্ধ পেয়ে গিয়েছিল ইনিয়েস্তা। চোখের পলকেই দশ-বারো গজের একটা ছোট্ট স্প্রিন্ট। আর তাতেই দ্রুত বলের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল বার্সেলোনার আট নম্বর। এতটাই বিদ্যুৎগতিতে যে চেলসি ডিফেন্ডার সিজার আৎ্সপিলিকুয়েতা ট্যাকল করতেই সময়ের গণ্ডগোল করে বসল। পিছন থেকে ভিক্টর মোজেস আর ধরতে পারেনি ইনিয়েস্তাকে। এর পরেই ইনিয়েস্তার পাস অরক্ষিত মেসিকে। মেসি নিজেও যেন অপেক্ষা করছিল বলটা কখন ওর পায়ে আসবে। বল ওর পায়ে আসতেই বার্সা রক্ষণ দর্শকের মতো দেখল মেসির গোল করাটা। মেসির ‘শাপমুক্তি’-র দিনে ঠান্ডা মাথায় করা ওর গোলটার চেয়েও ইনিয়েস্তার এই প্রয়াসটাই চোখে ভাসছে। আর মুগ্ধ করছে মেসির ধৈর্য ও বরফ শীতল মস্তিষ্ক।

চেলসিকে এগিয়ে দিয়ে উইলিয়ান।

চেলসি কোচ আন্তোনিও কন্তে কিন্তু মেসির এই গোলটার আগে সঠিক পরিকল্পনাতেই এগোচ্ছিলেন। চেলসি কোচ মেসিকে আটকে দিয়েছিলেন জোনাল মার্কিং এবং সঙ্গে ডাবল কভারিং দিয়ে। খেলা শুরুর সময় ৩-৪-৩ ফর্মেশনে চেলসি দাঁড়ালেও ওরা আসলে খেলছিল ৫-৪-১ ছকে। রুডিগার, ক্রিস্টেনসেন ও আৎ্সপিলিকুয়েতা-দের দুই পাশে এসে দাঁড়াচ্ছিল ভিক্টর মোজেস আর মার্কোস আলোন্সো। এই পাঁচ ডিফেন্ডারের সামনে চার মিডফিল্ডার। আর ‘ফলস নাইন’-এর ভূমিকায় এডেন অ্যাজার। যার অর্থ, মাঝমাঠ ও রক্ষণে ফাঁকা জায়গা না রেখে পায়ের জঙ্গল তৈরি করে রাখা। যাতে ইনিয়েস্তা-মেসি-সুয়ারেস-পাওলিনহো চতুর্ভূজের যাবতীয় কেরামতি উইংয়ে গিয়ে হারিয়ে যায়। বার্সার ভাগ্য সদয় থাকায় উইলিয়ানের শট দু’বার পোস্টে লেগে ফিরে এসেছিল। গোল হয়নি। ইনিয়েস্তার পরে এই ম্যাচে কেউ যদি নজর কাড়ে সে হল উইলিয়ান। কখনও বল ‘হোল্ড’ করছিল, কখনও এক্সপ্রেস গতিতে জর্ডি আলবা-কে পিছনে ফেলে এগিয়ে গিয়ে গোলের দরজা খুলে ফেলছিল। এক কথায় অনবদ্য। গোলটা করার সময় বলটাও দুর্দান্ত ভাবে নজরে রেখে দুরপাল্লার শটটা নিয়েছে।

প্রথমার্ধে মেসিকে নিষ্প্রভ করে দিয়ে এ ভাবেই মাঠজুড়ে রাজত্ব করছিল উইলিয়ান, অ্যাজার-রা। কিন্তু ৪-৪-২ ছকে মেসি-সুয়ারেস জুটি চেলসির ফাঁকা জায়গা কাজে লাগাতে পারছে না দেখেই ভালভার্দে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ইনিয়েস্তা এবং পাওলিনহো-কে ঠেলে দিয়েছিলেন দুই উইংয়ে। এতক্ষণ ওরা একটু মাঝখানে ঢুকে খেলছিল। সেখান থেকেই ইনিয়েস্তার ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা শুরু।

ফিরতি ম্যাচ ১৪ মার্চ বার্সেলোনার ঘরের মাঠ কাম্প ন্যু-তে। যেখানে মেসিরা সব সময়েই ভয়ঙ্কর। আর অ্যাওয়ে গোলের জন্য ঘরের মাঠে আমি এগিয়ে রাখছি মেসিদেরই।

Lionel Messi Barcelona Chelsea UEFA Champions League Football
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy