আমার দেখা অন্যতম সেরা টেস্ট এটা। যদিও কম রানের। কিন্তু সারা ম্যাচ জুড়ে যে রকম নামা-ওঠা চলছে দুই দলের, তাতে টানটান উত্তেজনায় ভরে গিয়েছে ম্যাচটা। শনিবার খেলা শেষে ইংল্যান্ড ২৩৩ রানে এগিয়ে থাকায় এখন যা অবস্থা, তাতে ম্যাচটা ৫০-৫০ অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। রবিবার যদি ইংল্যান্ড ২৫০ রানের বেশি লিড নিয়ে ফেলে, তা হলে চতুর্থ ইনিংসে ভারতের কাজটা সহজ হবে না। কিন্তু ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা যদি মইন আলিকে সামলে নিতে পারেন, তা হলে ভারতের সিরিজে সমতা ফেরানোর সম্ভাবনা অবশ্যই থাকছে। এখন তাকিয়ে থাকতে হবে সেই বিরাট কোহালি ও চেতেশ্বর পূজারার দিকেই। বাকিরা যে ভরসা দেওয়ার মতো কিছুই করেনি।
খেলাটাকে প্রথম দিন ঘোরান স্যাম কারেন, কোহালিকে ফিরিয়ে। পরের দিন সেই কারেনই জস বাটলারের সঙ্গে ৫৫ রানের পার্টনারশিপ গড়ে ইংল্যান্ডকে বিপদসীমা থেকে সরিয়ে আনেন। আইপিএলে যে বাটলারকে ৩৪ বলে ৫০ করতে দেখেছি, সেই বাটলার ৯৬ বলে পঞ্চাশ করলেন। লাল বলের খেলার সঙ্গে কী ভাবে মানিয়ে নিচ্ছেন বাটলার সেটাই ভেবে দেখুন। ইংল্যান্ডের মিডল অর্ডার কিন্তু ওদের ঠিক টেনে নিয়ে যাচ্ছে। অথচ ভারতের মিডল অর্ডার সেই কাজটা করতে পারছে না।
অন্য দিকে পরপর উইকেট পড়লেও মাঝের ওভারগুলোতে ওদের আউট করতে পারছে না আমাদের বোলাররা। এই সময়ে কিন্তু উইকেট নেওয়ার জন্য আর অশ্বিনের দায়িত্ব নেওয়া উচিত।
ইশান্ত শর্মা এমন একটা ফুটমার্ক তৈরি করে দিয়েছিলেন, অফ স্পিনাররা যা কাজে লাগিয়ে সফল হতে পারে। সেই জন্যই শুরু থেকেই অশ্বিনকে বোলিং দেওয়া হয় দ্বিতীয় ইনিংসে। কিন্তু তা সত্ত্বেও অশ্বিন পারলেন না ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের জব্দ করতে। যেখানে মইন আলি নামের এক অফ স্পিনার আগের দিনই ভারতকে বিপদে ফেলে দেন পাঁচ উইকেট নিয়ে, সেখানে ভারতীয় স্পিনার ব্যর্থ!
কিন্তু অশ্বিন পার্টনারশিপ ভাঙতে পারলেন না। তিনি বোধহয় দ্রুত উইকেট নিতে চাইছেন আর তাই একটু জোরেই বোলিং করছেন। এই সময় যে হাওয়ায় বোলিং করতে হবে ওঁকে, এটা কেন বুঝতে পারছেন না, কে জানে? মইন আলি বলটা ঠিক জায়গায় ফেলে দেয়। আমরা যাকে ময়দানি ভাষায় বলি ‘বলটা চড়ে খাবে’। বাকি কাজটা করে দেয় ক্লোজ ইন ফিল্ডার। কিন্তু অশ্বিন ইশান্তের তৈরি ফুটমার্কও ব্যবহার করতে পারছেন না।
ইংল্যান্ড যদি ২৫০ রানের বেশি লিড নিয়ে ফেলে, ভারত কিন্তু চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে চাপে পড়ে যাবে। ইংল্যান্ড একটা দিক থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে। কারণ, অ্যালেস্টেয়ার কুকের সময় খারাপ যাচ্ছে। ওঁর ক্যাচটা স্লিপে দু’বার ফস্কানোর পরেও যে ভাবে ধরলেন রাহুল, তা ওঁর দুঃসময়েরই প্রতিফলন। মইন আলি কাউন্টিতে দুশো করে এসেছে বলে বোধহয় ওঁকে এ দিন তিন নম্বরে নামানো হয়েছিল। ফলে যা হওয়ার তাই হল। মাত্র ন’রান করে আউট হয়ে যান তিনি। আর জনি বেয়ারস্টোকে দেখে আমার মনে হচ্ছে, মানসিকভাবে তিনি এখনও ফিট হয়ে ওঠেননি।
এখন লিড যাই হোক, দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের ওপেনিং জুটিকে অন্তত ৮০ রানের পার্টনারশিপ গড়তেই হবে। ওপেনাররা এখন পর্যন্ত এই সিরিজে তেমন কিছুই করতে পারেননি। ফলে বারবার চাপটা সামলাতে হয়েছে মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের। আরও ভাল করে বলতে গেলে সেই কোহালি আর পূজারাকে। কিন্তু বারবার কেন কোহালি আর পূজারার দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে ভারতকে? দ্বিতীয় ইনিংসে ওপেনিং জুটি যদি দায়িত্ব না নিতে পারে, এই টেস্টে লড়াইটা বেশ কঠিন হয়ে উঠতে পারে।