Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
বর্ণবিদ্বেষ নিয়ে ফেডারেশনে অভিযোগ গ্লেনের

কোচ বাদে বাগানে কেউ সাহসী হতে পারছেন না

অর্ণব মণ্ডল শনিবার ডার্বি চলাকালীন ঠিক কী মন্তব্য করেছিলেন কর্নেল গ্লেনের উদ্দেশ্যে? বাগান শিবিরে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে অনেক কিছু— ‘কালো বাঁদর’। ‘কালো চামড়ার শয়তান’। নাকি অন্য কিছু? কিছুতেই ফাঁস করতে চাইছেন না মোহনবাগানের ত্রিনিদাদ টোবাগো বিশ্বকাপার। ‘‘মনে করতে পারছি না’’ বলে এড়িয়ে যাচ্ছেন। হয়তো বা ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্ডারের বলা কথা নিজের মুখে উচ্চারণ করতে রাজি নন গ্লেন।

কর্নেল গ্লেন ও অর্ণব মণ্ডল।

কর্নেল গ্লেন ও অর্ণব মণ্ডল।

রতন চক্রবর্তী
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৩২
Share: Save:

অর্ণব মণ্ডল শনিবার ডার্বি চলাকালীন ঠিক কী মন্তব্য করেছিলেন কর্নেল গ্লেনের উদ্দেশ্যে?

বাগান শিবিরে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে অনেক কিছু— ‘কালো বাঁদর’। ‘কালো চামড়ার শয়তান’। নাকি অন্য কিছু?

কিছুতেই ফাঁস করতে চাইছেন না মোহনবাগানের ত্রিনিদাদ টোবাগো বিশ্বকাপার। ‘‘মনে করতে পারছি না’’ বলে এড়িয়ে যাচ্ছেন। হয়তো বা ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্ডারের বলা কথা নিজের মুখে উচ্চারণ করতে রাজি নন গ্লেন।

তবে গতকাল ডার্বির পর নিজের করা বিস্ফোরক টুইটের যে ব্যাখ্যা রবিবার গ্লেন দিলেন সেটাও যথেষ্ট বিস্ফোরক। ‘‘একটা বিশ্রী গালাগাল দিয়েছিল অর্ণব। আর আমাকে এই দেশ ছেড়ে যেতে বলে ও।’’ এ দিন শিলিগুড়ির টিম হোটেল থেকে শিলং রওনা হওয়ার ঠিক আগে কর্নেলের মন্তব্য আরও চমকপ্রদ। ‘‘কাল রেফারির সামনে পুরো ঘটনাটা ঘটেছিল। রেফারি রিপোর্ট দেবেন বলেছেন। এর পর ইস্টবেঙ্গলের কয়েক জন ফুটবলার ক্ষমাও চায়। যদিও অর্ণব তাদের মধ্যে ছিল না। ওর শাস্তি হওয়া উচিত।’’

ফিফার আচরণবিধিতে বর্ণবিদ্ধেষমূলক মন্তব্য করা সর্বোচ্চ অপরাধ। আজীবন সাসপেন্ড হতে পারেন অভিযুক্ত ফুটবলার। এমনকী এ ধরনের অভিযোগ পেয়ে কোনও ব্যবস্থা না নিলে সমস্যায় পড়তে পারে সেই দেশের ফুটবল ফেডারেশনও। তাই বিশ্বকাপার কর্নেলের অভিযোগ পেয়েই নড়েচড়ে বসেছে এআইএফএফ। আই লিগ সিইও সুনন্দ ধর বললেন, ‘‘এটা খুব স্পর্শকাতর বিষয়। আমরা গোপন তদন্তের পাশাপাশি কর্তাদের সঙ্গেও কথা বলছি। ম্যাচের টিভি ফুটেজ দেখা হবে। রেফারির রিপোর্টের অপেক্ষায় আছি। যা যা করা দরকার সব হচ্ছে।’’

গ্লেনের পাশে এই ইস্যুতে দাঁড়িয়েছে তাঁর ক্লাব মোহনবাগান। ইতিমধ্যে ফেডারেশন সচিব কুশল দাশের কাছে সরকারি ভাবে চিঠি দিয়ে অভিযোগ জানানো হয়েছে সবুজ-মেরুনের তরফে। শাস্তির দাবি তোলা হয়েছে অর্ণবের বিরুদ্ধে। আর তা জানার পরে গ্লেনের এ দিন নতুন টুইট, ‘‘গড ইজ গুড। ফাইনালি গট আ গুড নিউজ।’’ কোন খবরটা ভাল সেটা অবশ্য ভাঙছেন না পেশাদার গ্লেন। তবে পুরো ব্যাপারটাই অস্বীকার করেছেন ভারতীয় দলের সিনিয়র ফুটবলার অর্ণব।

শিলিগুড়ি থেকে বাড়ি ফেরার পথে অর্ণব বলে দিলেন, ‘‘আমি জানি গায়ের রং নিয়ে কিছু বললে সেটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আমি সে রকম কিছু বলতে যাব কেন? মাঠে সচরাচর যা হয় সেটাই হয়েছে কাল। ও আমাকে গালাগালি করেছিল। আমিও কিছু বলেছি। গ্লেন প্রমাণ করুক আমি কী বলেছি।’’ অর্ণবের রুম-মেট মেহতাবেরও দাবি, এ রকম কিছু হয়নি। ইস্টবেঙ্গলের কেউ ক্ষমাও নাকি চাননি রেফারির সামনে।

গ্লেনের টুইট নিয়ে দিল্লির ফুটবল হাউস বা ভারতীয় ফুটবলমহল আলোড়িত হলেও এখানে বাগান হোটেলে তার বিশেষ প্রভাব নেই। সেখানে বরং ডার্বি হারের আফসোস, রেফারির নানা সিদ্ধান্ত এবং জেজে কেন পেনাল্টি মারতে গেলেন— এ সব নিয়ে তোলপাড়। দু’দিন পরেই শিলং লাজংয়ের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অ্যাওয়ে ম্যাচ। খেতাবের লড়াইয়ে টিকে থাকতে হলে যে ম্যাচ জিততেই হবে। বলা যায় শেষ সুযোগ। তাই ডার্বি হার নিয়ে টিমের মধ্যে এই মুহূর্তে কাটাছেঁড়া করতে চাইছেন না কোচ সঞ্জয় সেন। ‘‘আমি তো টিম মিটিংয়ে বলেই দিয়েছিলাম পেনাল্টি পেলে গ্লেন কিংবা লুসিয়ানো মারবে। ওরা না মারলে কাতসুমি। জেজেকে তো আমি গত তিন মাসেও পেনাল্টি মারা প্র্যাকটিস করাইনি। কিন্তু শেহনাজ কাল জেজেকে ফাউল করায় ও-ই পেনাল্টি মারতে গেল। আমি বা শঙ্করলাল বেঞ্চে থাকলে এটা হত না। তবে এ সব ভেবে এখন লাভ নেই। বরং পরপর তিনটে ম্যাচ জিতে চ্যাম্পিয়ন হতে হবে।’’

এর পর সঞ্জয়ের সংযোজন, ‘‘ডার্বি জিতলেও ইস্টবেঙ্গল এমন টিম নয় যে পরের চারটে ম্যাচও জিতবেই। বিশুদা ভাবছে ৩২ পয়েন্ট হলেই চ্যাম্পিয়ন হবে। কিন্তু আমি বলছি, ৩৪ পয়েন্ট লাগবে। আর সেটায় আমরা ছাড়া পৌঁছতে পারে একমাত্র বেঙ্গালুরু। ইস্টবেঙ্গল নয়। তবে পরের শিলং ম্যাচটা না জিততে পারলে আমরাও আর ট্রফির লড়াইতে থাকব না।’’

মঙ্গলবার শিলংয়েও সঞ্জয় সাসপেনশনের জন্য বেঞ্চে বসতে পারবেন না। ডার্বিতে রেফারির নির্দেশে মাঠের বাইরে চলে যাওয়া বাগানের সহকারী কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তীও কি পারবেন বেঞ্চে বসতে? তাঁকে অবশ্য মাঠের বাইরে বেরিয়ে যেতে বললেও শনিবার লাল কার্ড দেখাননি রেফারি সন্তোষ কুমার। তবু যদি শঙ্করলাল সাসপেন্ড থাকেন তা হলে মাঠে সম্পূর্ণ কোচহীন অবস্থায় লাজং ম্যাচ খেলতে হবে বাগানকে।

এ সবের মধ্যেই বান্ধবীকে নিয়ে কলকাতা ফিরে গেলেন সনি নর্ডি। বাগানে সনি ভারতীয় ক্রিকেট দলে কোহালির মতো। হাইতি স্ট্রাইকার খেললে বাগান জিতবেই এই ধারণা এখন সবুজ-মেরুন সমর্থকদের। টিমের অনেকেরও। সনিকে দেখে মনে হল, হাঁটুর চোট এখনও কমেনি। টিম হোটেলের ঘরে চোটের জায়গায় বরফ লাগানোর ফাঁকে বললেন, ‘‘ন’তারিখ শিবাজিয়ান্স ম্যাচটা হয়তো খেলতে পারব।’’ কিন্তু ডার্বি হারের পরে যা পরিস্থিতি তাতে কি বাগান চ্যাম্পিয়ন হতে পারবে? প্রশ্ন শেষ হওয়ার আগেই সনি বলে উঠলেন, ‘‘আমাকে ছেড়ে দিন। এ সব নিয়ে কথা বলতে ভাল লাগছে না। নিজেই খেলতে পারছি না।’’ সবান্ধবী গাড়িতে ওঠার আগে সনি লবিতে দাঁড়িয়ে থাকা বাগান-কোচের সঙ্গে কথা বললেন। ‘‘সনি দারুণ টিম ম্যান। ও পালিয়ে যাওয়ার ছেলেই নয়। কাল ডার্বির আগে টিম মিটিংয়ে এসেছিল। সবাইকে উদ্বুদ্ধ করে। ও যদি হাঁটতেও পারত তা হলেও ডার্বিতে খেলানোর কথা ভাবতাম। হাইতি থেকে টানা চল্লিশ ঘণ্টা পা ঝুলিয়ে আসাটাই কাল হল সনির।’’ তীব্র বিতর্কের মধ্যেও সনির পাশে এ ভাবেই দাঁড়াচ্ছেন সঞ্জয়।

জেজের পেনাল্টি বিতর্ক, গ্লেনের টুইট বিস্ফোরণ, সনির কলকাতা ফিরে যাওয়া। কয়েক দিন আগেও যে দলটাকে বলা হচ্ছিল অশ্বমেধের ঘোড়া, ডার্বি-সহ জোড়া হারের ধাক্কায় সেই বাগান টালমাটাল এখন। আই লিগ ডাবল এর পর সম্ভব কী? কোচ সঞ্জয় ছাড়া কেউই যেন জোর গলায় ‘হ্যাঁ’ শব্দটা উচ্চারণ করতে পারছেন না!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE