Advertisement
০৬ মে ২০২৪
আই লিগ

ব্রাত্য প্লাজাই হারিয়ে দিলেন মোহনবাগানকে

ম্যাচের সেরা প্লাজা কোনও বিতর্কে ঢুকতে নারাজ।

দুই-মেরু: এক জন চেনা মাঠে আগুন ঝরালেন। উইলিস প্লাজা। আর একজন সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে ব্যর্থ। সনি নর্দে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

দুই-মেরু: এক জন চেনা মাঠে আগুন ঝরালেন। উইলিস প্লাজা। আর একজন সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে ব্যর্থ। সনি নর্দে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:২৪
Share: Save:

মোহনবাগান ০ • চার্চিল ব্রাদার্স ৩

এ যেন কলকাতা ময়দানে ব্রাত্যজনদের ঝলসে ওঠার দিন!
রবিবার যুবভারতীতে আই লিগের ম্যাচে মোহনবাগান বনাম চার্চিল ব্রাদার্স ম্যাচে তাই দেখালেন এ রকম দুই ময়দানী ব্রাত্যজন।
প্রথমজন উইলিস প্লাজা। গত মরসুমে ইস্টবেঙ্গলে খেলে যাওয়া ত্রিনিদাদ ও টোব্যাগোর এই স্ট্রাইকারকে দলে রাখেনি লাল-হলুদ শিবির। প্লাজা নাম লিখিয়েছেন চার্চিলে। এ দিন সেই প্লাজাই মোহনবাগানের বিরুদ্ধে জোড়া গোল করে চার্চিল ব্রাদার্সের ৩-০ জয়ে বড় ভূমিকা পালন করলেন।
দ্বিতীয় জন ইসরায়েল গুরুং। গত বছর এই মোহনবাগানেই ট্রায়াল দিয়েও জায়গা হয়নি তাঁর। এ দিন সেই ইসরায়েলই পুরো নব্বই মিনিট ত্রাস সঞ্চার করলেন মোহনবাগান মাঝমাঠ ও রক্ষণে। প্লাজার প্রথম গোল তাঁর ক্রস থেকেই।
ম্যাচের সেরা প্লাজা যদিও কোনও বিতর্কে ঢুকতে নারাজ। তাঁর সাফ জবাব, ‘‘কোনও কথা নয়। আমার খেলাই জবাব দেয়।’’ চার্চিল ব্রাদার্সের মালিক আলেমাও চার্চিলের কন্যা ভালাঙ্কা ম্যাচ দেখতে কলকাতায় এসেছিলেন দলের সঙ্গে। হোটেলে ফেরার পথে প্লাজার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে গেলেন, ‘‘তোর হ্যাটট্রিক হল না। পরে ম্যাচে গোকুলমের বিরুদ্ধে সেটা করতে হবে।’’
মোহনবাগান শিবিরে তখন শুধুই নিস্তব্ধতা। পাঁচ ম্যাচে সনি নর্দেদের পয়েন্ট আট। সমসংখ্যক ম্যাচে নয় পয়েন্ট পেয়ে গোয়ার দলটি মোহনবাগানকে চার নম্বরে ঠেলে দিয়ে উঠে এল দ্বিতীয় স্থানে।
খেলা শুরুর আগে রিজার্ভ বেঞ্চে গিয়ে বসার আগে মাঠকে প্রণাম করে নিয়েছিলেন মোহনবাগান সহ-সচিব। কিন্তু ‘ফুটবল-দেবতা’ আশীর্বাদ করলেন কোথায়? সতেরো মিনিটের মাথায় সনি নর্দের ডান পায়ে শট পোস্টে লাগল। তাঁর পাঁচ মিনিটের মধ্যে দিপান্দা ডিকা ও হেনরির গোলের সুযোগ নষ্ট। আর এই হতাশার মধ্যেই শঙ্করলাল চক্রবর্তীর মোহনবাগানের ম্যাচ থেকে হারিয়ে যাওয়া শুরু।
দুই স্টপার কিংসলে ও দলরাজ সিংহের মধ্যে বেড়ে যাচ্ছিল দূরত্ব। যেখান দিয়ে বারবার ঢুকে আসছিলেন ইসরায়েল গুরুং এবং উইলিস প্লাজা। বল নিয়ে দৌড়ানোর অনেকটা জায়গা পাচ্ছিলেন তাঁরা। দুই সাইডব্যাক অরিজিৎ বাগুই ও অভিষেক আম্বেকর ওভারল্যাপে গেলে নামতে সময় নিচ্ছিলেন। আর সেই সুযোগে চার্চিলের দুই উইঙ্গার দওদা সিসে ও ল্যামগউলেন হ্যাংশিং দুই প্রান্ত থেকে অনবরত ক্রস ভাসিয়ে দিচ্ছিলেন প্লাজাদের জন্য। আর যা সামলাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছিল মোহনবাগান রক্ষণ। সনিদের তিন গোল খাওয়া এই ভুলেই।
২১ মিনিটে হ্যাংশিং-এর ক্রস কোনও ভাবে হেড দিয়ে বিপন্মুক্ত করেছিলেন দলজিৎ। কিন্তু সেই ছিটকে আসা বল অরক্ষিত অবস্থায় ধরে অনায়াসে গোল করে যান সিসে। মোহনবাগান মাঝমাঠ থেকে নেমে এসে কেউ ধরেননি তাঁকে। সবুজ-মেরুন শিবিরের কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তী সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে যে দুই ফুটবলারকে এ দিন নামিয়েছিলেন, সেই সৌরভ দাস বা ইউতা দু’জনেই বিধ্বংসী ফুটবলার হওয়ায় আক্রমণ ভাগে হেনরি ও ডিকার জন্য ফাইনাল পাস বাড়ানোর কেউ ছিলেন না। ফলে দু’জনে এক সঙ্গে বিপক্ষ বক্সে হাজির হয়ে চার্চিল রক্ষণকে বিপদে ফেলতে পারছিলেন না। যে টুকু খেললেন ওই সনিই। তিনিই পাল্টা ক্রস রাখছিলেন ডিকা-হেনরিদের জন্য।
প্লাজার প্রথম ও দলের দ্বিতীয় গোলের সময়ও অবাধেই ডান দিক থেকে ইসরায়েল ও সিসে বল ভাসিয়ে দিয়েছিলেন। সাইডব্যাকরা কোথায় ছিলেন? জানতে চাইলে মোহনবাগান কোচ বিখ্যাত বাংলা ছবির সংলাপ, ‘মাস্টারমশাই আপনি কিছুই দেখেননি’-র মতো বলেন, ‘‘আপনি ঠিক দেখেননি।’’ পরক্ষণেই তিনি অবশ্য বলেন, ‘‘এত ক্রস কেন আসছিল তার কারণ খুঁজতে হবে।’’
রক্ষণ এত নড়বড় করল কেন জানতে চাইলে মোহনবাগান কোচের জবাব, ‘‘গত ১২৫ বছরে এই ক্লাবে অনেক বড় ডিফেন্ডার খেলেছেন। তাঁরাও চার-পাঁচ গোল খেয়েছেন। এ রকম হতেই পারে।’’
যা শুনে হাসছেন মোহনবাগানের ঘরের ছেলে সুব্রত ভট্টাচার্য। বলছেন, ‘‘প্রাক্তনরা অতীতে চার-পাঁচ গোল খেলে এই মোহনবাগানও কি এখন পাঁচ গোল খাবে? তা হলে কোচ রয়েছেন কী করতে?’’

মোহনবাগান: শিল্টন পাল, অরিজিৎ বাগুই, দলরাজ সিংহ, কিংসলে ওবুমনেমে, অভিষেক আম্বেকর, পিন্টু মাহাতো (অবিনাশ রুইদাস), সৌরভ দাস (শিল্টন ডি’সিলভা), ইউতা কিনোয়াকি, সনি নর্দে, দিপান্দা ডিকা, হেনরি কিসেক্কা।
চার্চিল ব্রাদার্স: জেমস কিথান (ভিগনেশ্বরণ ভাস্করণ), নেনাদ নোভাকোভিচ, হুসেইন এলদোর, নালাপ্পন মোহনরাজ (জোভেল মার্টিন্স), রিচার্ড কোস্তা, খালিদ আউচো, ল্যামগউলেন হ্যাংশিং (ফ্রেদসান মার্শাল), ইসরায়েল গুরুং, দওদা সিসে, উইলিস প্লাজা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE