Advertisement
E-Paper

ড্র করে প্রথম চারে থাকা কঠিন মোহনবাগানের

তিন দিন আগে ডার্বিতে যে ভাবে যুবভারতী থেকে বেরিয়েছিলেন, ঠিক সে ভাবেই বুধবার রাতে মাথা নিচু করে বেরিয়ে আসছিলেন সনি নর্দেরা। বদলের মধ্যে একটাই, সদস্য গ্যালারি থেকে দিপান্দা ডিকাদের নামে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান উঠল।

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:৩৯
সান্ত্বনা: প্রতিপক্ষ সনির পাশে তাঁর দেশ হাইতির ফাবিয়েন। নিজস্ব চিত্র

সান্ত্বনা: প্রতিপক্ষ সনির পাশে তাঁর দেশ হাইতির ফাবিয়েন। নিজস্ব চিত্র

তিন দিন আগে ডার্বিতে যে ভাবে যুবভারতী থেকে বেরিয়েছিলেন, ঠিক সে ভাবেই বুধবার রাতে মাথা নিচু করে বেরিয়ে আসছিলেন সনি নর্দেরা। বদলের মধ্যে একটাই, সদস্য গ্যালারি থেকে দিপান্দা ডিকাদের নামে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান উঠল। বোঝাই যাচ্ছিল, হতাশ সবুজ-মেরুন সমর্থকদের বাঁধ ভাঙতে শুরু করেছে।

প্রতিপক্ষ অবনমনে চলে যাওয়া একটা দল। সেই গোকুলমের কাছেও পয়েন্ট নষ্ট! তা-ও আবার হারতে হারতে শেষ পর্যন্ত কোনওক্রমে বেঁচে ওঠা। আই লিগের খেতাব জেতার সম্ভাবনা দূর অস্ত। সেরা চারে থাকা থেকেও ক্রমশ দূরে সরছে মোহনবাগানের। প্রথম চার দলের মধ্যে থাকতে না পারলে ভুবনেশ্বরে গিয়ে সুপার কাপের যোগ্যতা নির্ণায়ক ম্যাচ খেলতে হবে। এবং সেটা হলে, তার চেয়ে লজ্জার ঘটনা সাম্প্রতিক কালে কমই ঘটবে একশো আঠারো বছরের পুরনো ক্লাবে।

রবিবারের ডার্বিতে ব্যানার এবং স্মোক বম্ব নিয়ে মাঠে ঢুকতে পারেননি বলে সবুজ-মেরুনের প্রায় পঞ্চাশটি ফ্যানস ক্লাব এই ম্যাচ বয়কট করেছিল। ফলে ক্লাবের আই লিগের ইতিহাসে সম্ভবত সব চেয়ে কম দর্শক এসেছিলেন মাঠে। মেরে কেটে শ’ পাঁচেক। (ঘোষিত অবশ্য সাড়ে তিন হাজার)। যাঁরা এসেছিলেন তাঁরা কী দেখলেন? দিপান্দা ডিকাদের ক্ষমাহীন গোল নষ্টের প্রদর্শনী! দিশাহীন মাঝমাঠ! নিজের দলকে কিমকিমার বিশ্রী আত্মঘাতী গোল খাওয়ানো! সনি নর্দে নামক তারকার গত তিন বছরের কর্নার ও ফ্রি-কিকের সেই জাদুদণ্ড উধাও হয়ে যাওয়া। স্টপার কিংসলে ওবুমনেমের কচ্ছপ-গতি। যা থেকে স্পষ্ট, যত দিন যাচ্ছে ততই যেন তলিয়ে যাচ্ছে খালিদ জামিলের দল। এ বারের আই লিগে কত দূর এগোতে পারবেন হেনরিরা?

মোহনবাগান কোচ বললেন, ‘‘ছেলেরা লড়াই করেছে। ভালই খেলেছে। শুধু জিততে পারেনি। কাউকে আমি দোষ দেব না। পরের ম্যাচগুলোতে আরও পরিশ্রম করতে হবে।’’ পুরো সাংবাদিক সম্মেলন জুড়ে হাসির রোল। খালিদ তাতেও অবিচল। ‘‘পরের ম্যাচ নিয়েই ভাবছি। সেরা চারে থাকব কি না বলতে পারব না। সুপার কাপ নয়। আই লিগ শেষ হোক, তার পরে সুপার কাপ নিয়ে ভাবব।’’

শেষ কবে শিল্টন ডি’সিলভা মোহনবাগান জার্সিতে মাঠে নেমেছিলেন, নিজেই মনে করতে পারছেন না। তিনিই অবশ্য শুরুতে ১-০ এগিয়ে দিয়েছিলেন পালতোলা নৌকাকে। কিন্তু সেই ব্যবধান স্থায়ী হল মাত্র মিনিট চারেক। আত্মঘাতী গোলে ১-১ করে দিলেন কিমকিমা। মহম্মদ ইরশাদের ডান দিক থেকে তোলা বল নিজের গোলেই পাঠিয়ে দিলেন মোহনবাগান স্টপার। সেই যে নৌকার পাল ছিঁড়ল, স্রোতে তা আর এগোতেই পারল না। উল্টে তিন মিনিটের মধ্যেই পিছিয়ে পড়ল খালিদের দল। ব্রায়ান লারার দেশের মার্কোস জোসেফ ২-১ করে দিলেন দুর্দান্ত একটি গোল করে। চার্চিলের হয়ে একের পর এক ম্যাচ জেতাচ্ছেন উইলিস প্লাজ়া। আপাতত ১৫টি গোল করে তিনিই আই লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা এখন। ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোতে থাকার সময় প্লাজ়ার সঙ্গে খেলতেন অদ্ভুত চুলের মার্কোস। এবং ভারতে এসেই তাঁর পায়ের জাদু দেখাতে শুরু করেছেন। কেরলের ক্লাবের হয়ে তিন ম্যাচে তিন গোল হয়ে গেল তাঁর। একশো শতাংশ সাফল্য। গোকুলম স্ট্রাইকারের বাঁ পা যেন ছুরি! বিরতির পর মোহনবাগানের হার বাঁচানোর গোলটা করলেন ডিকা। হেনরি কিসেক্কার পাস থেকে। তাতে অবশ্য তাঁর পাপস্খলন হল না। সমর্থকদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হল। ম্যাচের সেরা হলেন বঙ্গসন্তান গোকুলম গোলকিপার অর্ণব দাশশর্মা। বালির এই ছেলেটি এক সময় কলকাতার বড় দলে খেলে গিয়েছেন চুটিয়ে।

বিদেশে অবনমনে চলে যাওয়া দলের পাশে দাঁড়ান সদস্য-সমর্থকরা। সব ক্ষোভ অভিমান ভুলে মাঠ ভর্তি করে আসেন নিজের প্রিয় ক্লাবকে উদ্বুদ্ধ করতে। লা লিগা, বুন্দেশলিগা বা ইপিএলের ম্যাচ ঘরে বসে দেখার পরে, সেই প্রভাবে কলকাতার মাঠের গ্যালারি রঙিন হয়েছে বা ফুটবলারদের গোল সেলিব্রেশনের স্টাইলে তার ছোঁয়া লেগেছে। কিন্তু দুঃসময়ে মাঠ ভর্তি করে আসার রেওয়াজটা চালু হয়নি এখনও। শুধু সদস্য-সমর্থকরাই নয়, ক্লাব নির্বাচনে যাঁরা পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে ক্লাবের স্বার্থে তাঁদের জেতানোর আবেদন করেছিলেন, সেই কর্তাদের অর্ধেককেও তো দেখা গেল না মাঠে!

মোহনবাগান: শিল্টন পাল, অরিজিৎ বাগুই, কিংসলে ওবুমনেমে, কিমকিমা, গুরজিন্দর কুমার, আজহারউদ্দিন মল্লিক (শেখ ফৈয়জ), ওমর এলহুসেইনি, শিল্টন ডি সিলভা (মেহতাব হোসেন), সনি নর্দে, দিপান্দা ডিকা, হেনরি কিসেক্কা (লালরেনফেলা)।

Football I League 2018-19 Mohun Bagan Neroca FC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy