Advertisement
E-Paper

আট বছর পরে লিগের রং সবুজ-মেরুন

শেষ কবে এ ভাবে ম্যাচ শেষে স্রোতের মতো গ্যালারি থেকে লোহার জাল টপকে, পুলিশের লাঠির তোয়াক্কা না করে কাতারে কাতারে মাঠে নেমে পড়েছেন মোহনবাগান সমর্থকেরা? মনে করা যাচ্ছে না

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:০৯
উৎসব: লিগ জয়ের উল্লাস সবুজ মেরুন সমর্থকদের। নিজস্ব চিত্র

উৎসব: লিগ জয়ের উল্লাস সবুজ মেরুন সমর্থকদের। নিজস্ব চিত্র

মোহনবাগান ২ কাস্টমস ০

কত মুঠো মুঠো আবির উড়ল আকাশে?

দোলের সময়ও কি এত আবির ওড়ান মোহনবাগান সমর্থকরা!

কত রং মশাল আলো ছড়াল গ্যালারিতে? কত বাজি পুড়ল? বুধবারের গোধুলির রং ধরা লালচে আকাশে উড়ল কত ফানুস?

দীপাবলির সময়ও কি এত আনন্দ করেন পালতোলা নৌকো-বাহিনী!

শেষ কবে এ ভাবে ম্যাচ শেষে স্রোতের মতো গ্যালারি থেকে লোহার জাল টপকে, পুলিশের লাঠির তোয়াক্কা না করে কাতারে কাতারে মাঠে নেমে পড়েছেন মোহনবাগান সমর্থকেরা? মনে করা যাচ্ছে না। যাঁরা ঘণ্টা দেড়েক ধরে নেচেছেন, ঘাসে শুয়ে গড়াগড়ি দিয়েছেন, পতাকা নিয়ে পাগলের মতো দৌড়েছেন ম্যাচ শেষে। যাঁদের উচ্ছ্বাসের আতিশয্যে দিপান্দা ডিকা, পিন্টু মাহাতোদের মাঠে ঘেরাও হয়ে থাকতে হল দীর্ঘক্ষণ। পুলিশ এসে ফুটবলারদের লাঠি উঁচিয়ে বার না করলে লিগ জয়ী ফুটবলারদের অনেকেই হয়তো আহত হতেন।

২০১০-এর ২৫ মে এডে চিডির পেনাল্টি গোলে শেষ বার কলকাতা লিগ জেতার পর এ রকম ঘটনা ঘটেছিল। সে বারও যুবভারতীতে নেমে পড়েছিলেন সমর্থকেরা। আট বছর আগে এবং পরে, দুটো দলেই ছিলেন অধিনায়ক শিল্টন পাল। বলছিলেন, ‘‘এ বারের মতো উচ্ছ্বাস সে বার দেখিনি।’’ তেরো বছর টানা খেলে যাওয়া শিল্টন বোধহয় ভুল বলেননি।

ম্যাচের সেরা হওয়ার মঞ্চ তুলে নিয়ে গিয়ে যে তা মাথায় তুলে নাচছেন আবেগে উন্মত্ত সমর্থকেরা, ময়দানই তো কখনও তা দেখেনি। মঞ্চ উধাও হয়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে ক্লাব তাঁবুতে ঢুকে ম্যাচের সেরার পুরস্কার হেনরি কিসেক্কার হাতে তুলে দিতে হল আই এফ একে।

টানা আট বছর কলকাতা লিগ ছিল পড়শি ক্লাব ইস্টবেঙ্গলের দখলে। দীর্ঘ দিনের সেই না পাওয়ার যন্ত্রণা ও অতৃপ্তি কতটা প্রবল ছিল ১২৯ বছরের পুরনো ক্লাবে, সেটা ম্যাচের আগেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তী। ‘‘ফুটবলারদের বলেছিলাম, কর্তা, সদস্য-সমর্থকেরা আট বছর ধরে কাঁদছেন। অনেক আশা নিয়ে আজ মাঠে আসবেন। অপেক্ষা করবে কোটি কোটি সমর্থক। শিল্টন ছাড়া তোমরা কেউ এই ট্রফি পাওনি। আজ সব দুঃখ, সব অতৃপ্তি মোছার দিন,’’ বলছিলেন মোহনবাগান কোচ।কোচের পেপটক যে কতটা প্রবল ভাবে মজ্জায় ঢুকিয়ে নিয়েছিলেন ট্রফি তৃষ্ণার্ত দিপান্দা ডিকা, হেনরিরা সেটা বোঝা গিয়েছিল শুরু থেকেই। প্রতিপক্ষ কাস্টমস ছিল মোহনবাগানের মতোই অপরাজিত। সেই দলকেই চার মিনিটের মধ্যে দুমড়ে দিল মোহনবাগান। অরিজিৎ বাগুইয়ের পাস ধরে হেনরি গোলটা করার সঙ্গে সঙ্গে ডিকা তাঁর কোলে উঠে পড়লেন। আর বিরতির মুখে ডিকার পাস থেকে দ্বিতীয় গোল করার পর হেনরি তো নাচই শুরু করে দিলেন তাঁর সঙ্গে। মোহনবাগান এ বার মোট পঁচিশ গোল করেছে। তার মধ্যে ডিকা আর হেনরি জুটি মিলে করেছেন ১৬টি। ওঁরা তো নাচবেনই। এক ম্যাচ বাকি থাকতেই খেতাব গোষ্ঠ পাল সরণির তাঁবুতে পা রাখার পিছনে পঞ্চাশ শতাংশ অবদান যদি হয় ওই দুই বিদেশির, তা হলে বাকি কাজটা করেছিলেন কোচ শঙ্করলাল। বেতন নিয়ে সমস্যা। কর্তাদের মধ্যে ঝগড়া চরমে। কার্যত অভিভাবকহীন দলকে তিনি ঝিনুকের ভিতরে থাকা মুক্তোর মতোই আগলে রেখেছেন। শান্ত মাথা আর সফল ড্রেসিংরুম রসায়নের সাহায্যে। জঙ্গল মহলের পিন্টু মাহাতো, মশাটের আজহারউদ্দিন মল্লিক, ডানকুনির অরিজিৎ বাগুই, রিষড়ার সৌরভ দাশ, দমদমের শঙ্কর রায়দের মতো বঙ্গ সন্তানদের তিনি তারকা বানিয়ে দিয়েছেন, ডিকাদের মতোই প্রধান্য দিয়ে। হীনমন্যতায় ভুগতে দেননি। এই আবহে মুম্বইয়ের অভিষেক আম্বেকর বা কেরলের ব্রিটোর মতো ভিন রাজ্যের ফুটবলাররা নিজেদের মানিয়ে নিয়েছেন। ফলে দল হিসাবে মাঠে নেমেছে মোহনবাগান। সিকিম গোল্ড কাপ এককভাবে কোচিং করে জিতিয়েছিলেন শঙ্করলাল। কিন্তু তাতেও বরানগরের কোচের অতৃপ্তি ছিল। বলছিলেন, ‘‘আমি যে কোচিং করাতে পারি সেটা প্রমাণের দরকার ছিল। কলকাতা লিগ দিয়ে শুরু করলাম।’’

কিন্তু কোন ম্যাচের পর বুঝেছিলেন লিগ জিতবেন? সতর্কতার মুখোশ দূরে সরিয়ে মোহনবাগান কোচ বললেন, ‘‘এফ সি আই ম্যাচে পাঁচ গোলে জেতাটাই লিগের টার্নিং পয়েন্ট। ইস্টবেঙ্গল এর পরই চাপে পড়ে গিয়েছিল। জানতাম ওরা এই চাপ রাখতে পারবে না।’’ এ দিনই মোহনবাগান বোর্ডের সভা ছিল। সেখানেই যুযুধান কর্তারা মিলে সিদ্ধান্ত নেন, ফুটবলারদের বকেয়া বেতন দ্রুত দিয়ে দেবেন। যা শুনে শঙ্করলালের মুখে স্বস্তির হাসি। জানিয়ে দেন, কলকাতা লিগের পর তাঁর লক্ষ্য এ বার আই লিগ জয়।

মোহনবাগান: শঙ্কর রায়, অরিজিৎ বাগুই, কিংগসলে ওবুমেনেমে, লালচাওন কিমা, অভিষেক আম্বেকর (আমে রানওয়াডে), ব্রিটো পি এম (আজহারউদ্দিন মল্লিক), পিন্টু মাহাতো, সৌরভ দাশ, শিল্টন ডি সিলভা (ক্যালডেইরা), দিপান্দা ডিকা, হেনরি কিসেক্কা।

Football Calcutta Football League CFL Mohun Bagan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy