সল্টলেক স্টেডিয়ামে কাল আইএসএলের যে খেলাটা হবে সেটা নিছক একটা সাধারণ ফুটবল ম্যাচ নয়। ঐতিহাসিক ম্যাচ। ফুটবলসম্রাটের সামনে খেলার সুযোগ ক’জন ফুটবলারেরই বা কপালে জোটে!
দেবীপক্ষের গোড়াতেই একে কলকাতায় আইএসএল-টু’র বোধন। আটলেটিকো কলকাতার প্রথম হোম ম্যাচ। আর সেখানে প্রাপ্তি ফুটবলের ‘ব্ল্যাক পার্ল’। দ্বিগুণ উৎসব!
ম্যাচটার চাপও অবশ্য দ্বিগুণ। আমার ধারণা, এ বারের আইএসএলের প্রথম একটা সত্যিকারের আকর্ষণীয় ম্যাচ হতে চলেছে মঙ্গলবার। এক দিকে হাবাসের কাছে চ্যালেঞ্জ— গত বারের ফাইনালের সুখস্মৃতি রক্ষা করা। অন্য দিকে কেরল ব্লাস্টার্সের কাছে এটা বদলার ম্যাচ। অনেকে হয়তো বলতে পারেন, এই ম্যাচের জন্য তো এটিকে টিমে ফুটবলারই নেই। বলজিতের লাল-কার্ড। নাতো, রিনো অ্যান্টো আর অর্ণব মণ্ডল জাতীয় দলে। পস্টিগা চোট সারাতে দেশে ফিরে গিয়েছে। কাগজ-কলমে তাই কেরল এগিয়ে।
কিন্তু আমি সেটা বলব না। অন্তত আগের ম্যাচে মুম্বই সিটির বিরুদ্ধে কেরলকে যে ফুটবল খেলতে দেখলাম, তাতে মঙ্গলবার গতবারের ফাইনালের পুনরাবৃত্তি হলে অবাক হব না!
কেরল কোচ পিটার টেলরের পছন্দের ফর্মেশন ৩-৫-২। কিন্তু মজার ব্যাপার— মাঝমাঠে শক্তিবৃদ্ধি করলেও সেই মাঝমাঠই ওদের টিমের নড়বড়ে জায়গা। খেলা চলাকালীন অনেক ফাঁকফোকর থাকে। ভারসাম্য নেই। পাঁচ জনের মাঝমাঠে মেহতাব-বিনিথদের যেখানে অ্যাটাকিং মিডিও হওয়াটা বেশি জরুরি, সেখানে তারা ডিফেন্সিভ ব্লকার হয়ে থাকছে। নিটফল, কেরলের পুরো টিমটা নীচে নেমে যাচ্ছে। মুম্বই গোলকিপার দেবজিৎ মজুমদারকে সে জন্য একবারের বেশি সত্যিকারের ব্যস্ত হতে দেখিনি সে দিন টিভিতে।
এটিকে দলে হয়তো প্রথম দলের কয়েকজন ফুটবলার নেই। কিন্তু তাগিদটা আছে। যেমনটা গত বার আই লিগে আমার মোহনবাগান টিমের ভেতর ছিল। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে কত ম্যাচে যে আমাকেও এ রকম কঠিন পরিস্থিতির সামনে দাঁড়াতে হয়েছে, তা বলার নয়। এখনও মনে আছে, অ্যাওয়ে ম্যাচে রাংদাজিদের বিরুদ্ধে এই বলজিৎ সাইনি-ই লালকার্ড দেখে বসেছিল। শেহনাজ, ধনচন্দ্র, সুখেন দে-র মতো প্রথম দলের ফুটবলাররা ছিল না। তবু স্রেফ মানসিকতার জোরে পরের পুণে এফসি ম্যাচ জিতেছিলাম আমরা।
আমি এটিকে-র মধ্যেও সেই আগ্রসনটা যেন এই মুহূর্তে দেখতে পাচ্ছি। সৌজন্যে ওদের কোচ হাবাস।
ওঁর অ্যাটিটিউড অনেকটা এ রকম— টিমে মার্কি নেই তো কী! বাকিরা খেলবে। যেমন পস্টিগার বদলে ভালদো নেমে গোল করল চেন্নাইয়ান ম্যাচে। যেমন পুণে সিটি ম্যাচে বলজিতের পরিবর্তে সুযোগ পেয়ে গোল করেছিল জেজে। আমার শুধু একটা জিনিসই মনে হচ্ছে— মঙ্গলবার শুরু থেকেই জোসেমিকে খেলানো উচিত। সেটা সম্ভবত হাবাসও ভেবে রেখেছেন। না হলে ঠিক আগের ম্যাচটায় শেষ পনেরো মিনিট জোসেমিকে খেলাতেন না এটিকের স্প্যানিশ কোচ। জোসেমির অভিজ্ঞতা আর ফুটবলবুদ্ধি মাঝমাঠে তো বটেই, আমার মতে অর্ণব-নাতো বিহীন ডিফেন্সকেও ভরসা জোগাবে।
এটিকে-কে সমস্যায় যদি কিছু ফেলতে পারে, সেটা কেরলের রাহুল বেকের লম্বা থ্রো। মুম্বই ম্যাচেও ওর থ্রো খুব কার্যকরী হয়েছিল। তবে সেটা রোজ রোজ হবে তারও মানে নেই। হাবাসের শুরু থেকেই মাঝমাঠের দখল নিয়ে নেওয়া উচিত। যদিও ওঁর খেলার স্টাইল কাউন্টার অ্যাটাক ভিত্তিক— প্রথম দিকে বিপক্ষকে খেলতে দাও। তার পর সুযোগ পেলেই পাল্টা আক্রমণে ওঠো।
তা সত্ত্বেও হাবাসকে আমার একটাই অনুরোধ— ঐতিহাসিক ম্যাচের কথা ভেবে, মাঠে ফুটবলসম্রাটের উপস্থিতির কথা ভেবে মঙ্গলবার অন্তত বিপক্ষকে খেলার সুযোগ দেবেন না প্লিজ!
জরিমানা হাবাসের
নিজস্ব সংবাদদাতা
ঠিক যেন গত বারের পুরনাবৃত্তি! গোয়া ম্যাচ মানেই যেন খেলার পরে শাস্তির গেরো কাটিয়ে উঠতে পারবেন না আটলেটিকো কলকাতা কোচ হাবাস!
আইএসএল-ওয়ানে জিকোর গোয়ার বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচের পর সাসপেনশনের আওতায় পড়েছিলেন হাবাস। আইএসএল-টু’তেও প্রথম এফসি গোয়া ম্যাচের পর টুর্নামেন্ট কমিটি প্রদত্ত শাস্তির কোপে তিনি। এ বার মারগাওয়ে ম্যাচ-উত্তর সাংবাদিক সম্মেলনে রেফারি আর লাইন্সম্যানের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিষোদগার করার জন্য সতর্কিত হলেন কলকাতা কোচ। সঙ্গে ফেডারেশনের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির তরফে পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছে কলকাতার স্প্যানিশ কোচকে।
তবে তাৎপর্যের, ওই একই ম্যাচের পরে সাংবাদিক সম্মেলনে হাবাসের চেয়েও ম্যাচ পরিচালকদের নিয়ে (বিশেষ করে চতুর্থ রেফারির প্রতি) বেশি কটাক্ষসূচক মন্তব্য করেছিলেন বিপক্ষ গোয়া দলের কোচ জিকো। কিন্তু তাঁকে কোনও আর্থিক জরিমানা না করে স্রেফ সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এ দিকে, রবিবার সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্কে ‘ক্লোজড ডোর’ অনুশীলন করলেন জোসেমি, রহিম নবিরা। মঙ্গলবার যুবভারতীতে কেরল ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে প্রথম হোম ম্যাচ খেলতে নামছে আটলেটিকো দে কলকাতা। যে ম্যাচে নাতো, বলজিৎ, অর্ণব, রিনো, জুয়েল রাজা, পস্টিগা-সহ প্রথম দলের ছয় ফুটবলার নেই। ফলে জরিমানার চিঠি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টিম নিয়েও একরাশ চিন্তা গ্রাস করছে হাবাসকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy