Advertisement
E-Paper

ডার্বিতে থাকছেন না ইস্টবেঙ্গল কোচ

ছিলেন লাল-হলুদ জনতার চোখের মণি। এ বার তিনি যে পদক্ষেপ ফেলতে চলেছেন তাতে হয়তো ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের কাছে তাঁর চোখের বালি হয়ে উঠতে বেশি সময় লাগবে না। তিনি ট্রেভর জেমস মর্গ্যান। গত তিন মরসুম ধরে বেগতিক দেখলেই যাঁর জন্য ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা গলা ফাটাতেন, ‘ব্রিং ব্যাক মর্গ্যান’ বলে।

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৪১

ছিলেন লাল-হলুদ জনতার চোখের মণি। এ বার তিনি যে পদক্ষেপ ফেলতে চলেছেন তাতে হয়তো ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের কাছে তাঁর চোখের বালি হয়ে উঠতে বেশি সময় লাগবে না।

তিনি ট্রেভর জেমস মর্গ্যান। গত তিন মরসুম ধরে বেগতিক দেখলেই যাঁর জন্য ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা গলা ফাটাতেন, ‘ব্রিং ব্যাক মর্গ্যান’ বলে।

কিন্তু রবিবার সন্ধেয় ইস্টবেঙ্গল কোচ যা বললেন, তা শুনলে আট থেকে আশির ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভের আগুন জ্বলে উঠতে পারে দাউদাউ করে।

সবুজ-মেরুনের চেয়ে দু’পয়েন্ট এগিয়ে ইস্টবেঙ্গল। হেপ্টার রেকর্ড গড়ে কলকাতা লিগ খেতাব তাঁবুতে আনার স্বপ্ন দেখছেন অর্ণব মণ্ডল, মেহতাব হোসেনরা। ঠিক সেই সময় তাঁদের কোচ কি না জানিয়ে দিলেন, চিকিৎসার জন্য ১ সেপ্টেম্বর কলকাতা ছাড়ছেন তিনি! সুতরাং সাত সেপ্টেম্বরের ডার্বি ম্যাচে লাল-হলুদ জার্সিধারীরা নামবেন কোচ ছাড়াই। যার আবেদন মর্গ্যান ইতিমধ্যেই পাঠিয়ে দিয়েছেন ক্লাব কর্তাদের কাছে। ১ সেপ্টেম্বর জর্জ টেলিগ্রাফ ম্যাচের পরে মর্গ্যান নেই বাকি লিগেও। যার অর্থ, মহমেডান ম্যাচেও রিজার্ভ বেঞ্চে থাকবেন না মর্গ্যান।

রবিবার বিকেলে মর্গ্যান ফোনে আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘৩ সেপ্টেম্বর দেশে চেক আপ রয়েছে। তাই অস্ট্রেলিয়ার বিমান ধরব এক তারিখে। কিছু করার নেই। ডার্বিতে থাকতে পারব না।’’

তা হলে বড় ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল কোচের দায়িত্ব সামলাবেন কে?

মর্গ্যানের চটজলদি জবাব, ‘‘কেন? সহকারী কোচ ড্রাইডেন থাকবে তো! ও ঠিক সামলে নেবে।’’

কিন্তু তাঁর চেক আপের তারিখ ডার্বির পরে করা সম্ভব নয়? যা নাকচ করে দিয়ে মর্গ্যান বলে দেন, ‘‘কোনও মতেই সম্ভব নয়।’’ সঙ্গে এও জানিয়ে দেন, ‘‘ভেবেছিলাম ৩১ অগস্টের মধ্যে লিগ শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু তা হল কোথায়? তাই যেতেই হচ্ছে।’’

আপনি মরসুমের শুরুতে এই ব্যাপারটি কর্তাদের জানিয়েছিলেন? আপনার শারীরিক সমস্যা ঠিক কোথায়? ভারতে সেই চেক আপ হয় না? এতগুলো প্রশ্ন একসঙ্গে শুনে এ বার সুর চড়ালেন ইস্টবেঙ্গল কোচ। বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে মিডিয়ার সঙ্গে কোনও কথাই বলব না।’’

চলতি মরসুমে লাল-হলুদ কর্তারা পুরো দল গঠনের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন মর্গ্যানের হাতে। মরসুমের শুরুতে কলকাতায় আসার আগে সপ্তাহ খানেক ভর্তি ছিলেন পারথের হাসপাতালে। কিন্তু শহরে এসে লাল-হলুদের দায়িত্ব নেওয়ার পর দাপিয়ে কোচিং করিয়েছেন। লিগের ছয় ম্যাচের টেনশনের সঙ্গেও মাঠে দাঁড়িয়ে লড়াই করেছেন। যার মধ্যে ছিল ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে ১-৩ পিছিয়ে গিয়েও জয় ছিনিয়ে আনা বা শনিবার সাদার্ন সমিতির বিরুদ্ধে এক গোলে পিছিয়ে ২-১ জিতে ফেরার ম্যাচও। কোনও রকম শারীরিক সমস্যা হয়নি। তা হলে হঠাৎ কী হল? মনোমালিন্য? কাজ করতে গিয়ে সংঘাত? ইস্টবেঙ্গল কোচ ফের ঝাঁঝিয়ে ওঠেন, ‘‘মোটেই না। অহেতুক বিতর্ক তৈরি করছেন। জাস্ট আ হেলথ চেক আপ।’’

ইস্টবেঙ্গল কোচের সঙ্গে যিনি নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলেন, লাল-হলুদের সেই ফুটবল সচিব সন্তোষ ভট্টাচার্যের ফোন রবিবার সারাদিন বন্ধ ছিল। তাই তাঁর সঙ্গে কথা বলা যায়নি। সূত্রের খবর, তিনি নাকি বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত। গত দশ দিন ধরেই দেশে ফেরার জন্য কর্তাদের কাছে তদ্বির করে যাচ্ছেন লাল-হলুদ কোচ। ক্লাব সচিব কল্যাণ মজুমদার আবার আনন্দবাজারের কাছ থেকে বিষয়টি শুনে বললেন, ‘‘প্রিন্স অব ডেনমার্ক ছাড়া হ্যামলেট! ডার্বিতে কোচ ছাড়া ইস্টবেঙ্গল? ভাবলেই তো শিউরে উঠছি! ফুটবল সচিবকে জিজ্ঞেস করুন।’’ সহ-সচিব শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্তও বলছেন সেই কথা। ইস্টবেঙ্গলের অন্যতম শীর্ষ কর্তা দেবব্রত সরকার ‘নো কমেন্টস’ বলে এড়িয়ে গিয়েছেন।

কোচের এই সিদ্ধান্ত শুনে অবাক ঘরের ছেলে ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়ও বলছেন, ‘‘দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যক্তি। নিম্নমানের বিদেশিদের টিমে ঢুকিয়েছেন। এ বার আবার ডার্বির আগে চিকিৎসার অজুহাত দিয়ে চলে যাচ্ছেন। লোকটার কোনও সাফল্য নেই গত কয়েক বছরে। এখন আবার পালাচ্ছেন! ’’

আর এক ঘরের ছেলে মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যর হাঁটু প্রতিস্থাপন সোমবার। হাসপাতালে শুয়ে খবরটা শুনে তিনিও চমকে উঠছেন। ‘‘বড় ম্যাচের ঐতিহ্য, আবেগ, মর্যাদা ইস্টবেঙ্গল কোচ জানেন না তা তো হতে পারে না। মরসুমের শুরুতে ক্লাবকে উনি জানিয়েছিলেন কি ১ সেপ্টেম্বর চলে যাবেন? রীতিমতো রাগ ও লজ্জা হচ্ছে।’’

গত মরসুমের লাল-হলুদ কোচ বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যও মর্গ্যানের সিদ্ধান্তে অবাক। ‘‘আমি শক্ড। শরীর যতই খারাপ হোক প্রয়োজনে মরে যাব। কিন্তু ডার্বির আগে টিমের মনোবল কমিয়ে চলে যাব না। এই সব বিদেশিদের কাছেই নাকি আমাদের পেশাদারিত্ব শিখতে বলেন ক্লাবকর্তারা।’’

দু’বছর আগে কলকাতা লিগ জেতার পরও সম্মানের ডার্বিতে সহকারি কোচ রঞ্জন চৌধুরীর উপর দায়িত্ব দিয়ে গোয়ার বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন তৎকালীন ইস্টবেঙ্গল কোচ আর্মান্দো কোলাসো। যুবভারতীর সেই ম্যাচে তিনি ছিলেন না। ম্যাচ হেরেছিল ইস্টবেঙ্গল। প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন আর্মান্দো।

এ বার কী হবে? লিগের ভাগ্য তো এখনও নির্ধারিত হয়নি!

মর্গ্যান আশাবাদী কল্যাণীর ডার্বি নিয়ে। বলছেন, ‘‘আমি না থাকলেও ডার্বিতে টিমের সমস্যা হবে না।’’

কল্যাণীতে বড় ম্যাচ শেষে কার মুখে হাসি ফুটবে, তা সময় বলবে। কিন্তু ডার্বির আগে বাড়ি চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে যেন বারাসতের ‘গো ব্যাক’ স্লোগান উস্কে দিলেন তিনি নিজেই। ট্রেভর জেমস মর্গ্যান।

সোমবার

কলকাতা লিগ: মোহনবাগান-টালিগঞ্জ অগ্রগামী (মোহনবাগান, ৫-৩০)

Trevor Morgan CFL East Bengal Mohunbagan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy