Advertisement
E-Paper

Moumita Mandal: অভাবের হার্ডলস টপকে জাতীয় স্তরে ফের রুপো মৌমিতার

গত ১০-১৪ জুন ওই আন্তঃরাজ্য চ্যাম্পিয়নশিপ হয় চেন্নাইতে। ১০০ মিটার হার্ডলসে মৌমিতা সময় করেন ১৩.৮৬ সেকেন্ড।

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০২২ ০৮:৫৮
অ্যাথলিট মৌমিতা মণ্ডল। চা বিক্রি করছেন মৌমিতার বাবা (ডান দিকে)।

অ্যাথলিট মৌমিতা মণ্ডল। চা বিক্রি করছেন মৌমিতার বাবা (ডান দিকে)।

জাতীয় অ্যাথলেটিক প্রতিযোগিতায় ফের সফল হুগলির জিরাটের মৌমিতা মণ্ডল। ৬১তম আন্তঃরাজ্য চ্যাম্পিয়নশিপে ১০০ মিটার হার্ডলসে রুপো জিতেছেন তিনি।

গত ১০-১৪ জুন ওই আন্তঃরাজ্য চ্যাম্পিয়নশিপ হয় চেন্নাইতে। ১০০ মিটার হার্ডলসে মৌমিতা সময় করেন ১৩.৮৬ সেকেন্ড। বাংলার এই অ্যাথলিট শেষ করেছেন রেলওয়েজ়ের হয়ে নামা তামিলনাড়ুর এক অ্যাথলিটের (১৩.৬২ সেকেন্ড) পিছনে। চলতি বছরে জাতীয় প্রতিযোগিতায় সিনিয়র বিভাগে তাঁর ঝুলিতে এটি দ্বিতীয় পদক। গত এপ্রিল মাসে সিনিয়র ফেডারেশন কাপে একই ইভেন্টে রুপো জেতেন ২০ বছর বয়সি এই অ্যাথলিট। তার আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে দিল্লিতে ব্রোঞ্জ জেতেন মৌমিতা। ওই বছর আরও একটি জাতীয় প্রতিযোগিতাতেও পদক জিতেছিলেন। অনূর্ধ্ব-২৩ জাতীয় মিটেও পদক এসেছে।

আরও ভাল পারফর্ম্যান্সের জন্য খেটে চলেছেন মৌমিতা। গত দেড় বছর ধরে তিনি রয়েছেন ভুবনেশ্বরে রিলায়েন্সের শিবিরে। শুরুতে অবশ্য হার্ডলস মৌমিতার ইভেন্ট ছিল না। বাড়ির কাছে পাটুলি বীণাপাণি ইউনাইটেড স্পোর্টিং ক্লাবে অ্যাথলেটিক্সে মৌমিতার হাতেখড়ি কোচ অর্জুন সরকারের কাছে। মাধ্যমিকের সময় শ্রীরামপুর স্পোর্টিং ক্লাবে শুভময় দাসের কাছে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন। তখন মৌমিতা মূলত লং জাম্প এবং ট্রিপল জাম্প করতেন। হঠাৎ করেই হার্ডলসে চলে আসেন শুভময়ের হাত ধরে। এই ইভেন্টকেই ধ্যানজ্ঞান করে ফেলেন। সাফল্যও আসতে থাকে।

এই পথে আসতে অবশ্য কম ঘাম ঝরাতে হয়নি বঙ্গকন্যাকে। লড়তে হয়েছে পরিবারের অভাবের সঙ্গেও। অনটনের সেই হার্ডলসও হাসতে হাসতে টপকে গিয়েছেন মৌমিতা।

জিরাটের কালিয়াগড়ে মৌমিতাদের বাড়ি। বাবা-মা এবং দিদি রয়েছেন। বাবা সুভাষচন্দ্র মণ্ডল জিরাট স্টেশনের কাছে চা বিক্রি করেন। উপার্জন খুব বেশি নয়। এক সময় দৌড়নোর উপযোগী ভাল জুতো ছিল না মৌমিতার। সস্তার জুতো পরেই তিনি প্রতিদ্বন্দ্বীদের পিছনে ফেলে ছিটকে বেরিয়েছেন বারে বারে। রাজ্যস্তরে অনেক পুরস্কার জিতেছেন। কঠোর পরিশ্রম তাঁকে আরও এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে।

কলকাতার চারুচন্দ্র কলেজের বিএ তৃতীয় বর্ষের ছাত্রীর লক্ষ্য, ধাপে ধাপে নিজেকে আরও মেলে ধরা। তাঁর কথায়, ‘‘১০০ মিটার হার্ডলসে জাতীয় রেকর্ড ১৩.০৪ সেকেন্ড। ওই জায়গায় পৌঁছতে একটু সময় লাগবে। ধীরে ধীরে সময় কমিয়ে আনতে চাই।’’

ছাত্রীর সাফল্যে উচ্ছ্বসিত শুভময়। তাঁর কথায়, ‘‘জানতাম, উপযুক্ত পরিকাঠামো পেলে মৌমিতা অনেক দূর যাবে। ভুবনেশ্বরে সেই পরিকাঠামো পাচ্ছে। ওকে অনুশীলনে ফাঁকি দিতে দেখিনি। গতির সঙ্গে স্পট জাম্প, স্ট্রেচিং খুব ভাল দেখেই ওকে হার্ডলসে নামতে বলেছিলাম। এই ইভেন্টকেই যে ও পাখির চোখ করেছে, এটা আমার কাছে বাড়তি আনন্দের।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘মাঠে আসার জন্য কী পরিশ্রমটাই না করেছে মেয়েটা! সব সময় সুষম খাবার পায়নি। কম দামের জুতো পরে ছুটেছে। কোনও কিছুই ওকে থামাতে পারেনি। আরও সাফল্য ওর জন্য অপেক্ষা করে আছে।’’

শ্রীরামপুরে প্র্যাকটিসে আসার সময় কাকভোরে ঘুম থেকে উঠতেন মৌমিতা। তার পরে খাবার গুছিয়ে প্রথম ডাউন কাটোয়া লোকাল ধরে সকাল ৭টার মধ্যে শ্রীরামপুর স্পোর্টিংয়ের মাঠে পৌঁছে যেতেন। প্র্যাকটিস সেরে বাড়ি ফিরতে দুপুর গড়িয়ে যেত।

সংসারে অভাব থাকলেও বাবা, মা, দিদি সকলেই মৌমিতার খেলার ব্যাপারে উৎসাহ জুগিয়েছেন। মা অ্যাথলিট ছিলেন। বাবা ফুটবল খেলতেন। বাবার কথায়, ‘‘খেলায় আমরা বেশি দূর পৌঁছতে পারিনি। কিন্তু ছোট মেয়ে তা পারবে, এই বিশ্বাস ওর উপরে আমাদের আছে।’’

Sports Jirat
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy