Advertisement
E-Paper

শুরুই হয় একশো সিট আপে

বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক ওয়ান ডে-তে ৩০০ ম্যাচ খেলতে নামছেন ধোনি। তার আগে প্রাক্তন ভারত অধিনায়কের শৈশবের শহর ঘুরে, তাঁর বন্ধু, কোচের সঙ্গে কথা বলে একটা স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাচ্ছে কী রকম ছিল এই যাত্রাপথ।

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৭ ০৩:২০
স্মরণীয়: চলছে ধোনির দৌড়। আজ ৩০০তম ওয়ান ডে। —ফাইল চিত্র।

স্মরণীয়: চলছে ধোনির দৌড়। আজ ৩০০তম ওয়ান ডে। —ফাইল চিত্র।

প্রত্যেক দিন ভোরে অনুশীলনে এসে উইকেটকিপিং করার আগে একশোটা করে সিট আপ দিতে হবে। এমনটাই নির্দেশ দিয়েছিলেন কেশব বন্দ্যোপাধ্যায়— মহেন্দ্র সিংহ ধোনির স্কুলের খেলার শিক্ষক।

ছোট্ট মাহি সেই নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিল।

আজ, বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক ওয়ান ডে-তে ৩০০ ম্যাচ খেলতে নামছেন ধোনি। তার আগে প্রাক্তন ভারত অধিনায়কের শৈশবের শহর ঘুরে, তাঁর বন্ধু, কোচের সঙ্গে কথা বলে একটা স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাচ্ছে কী রকম ছিল এই যাত্রাপথ।

কেশববাবুর এখনও পরিষ্কার মনে পড়ে তাঁর নির্দেশ বছর দশেকের মাহি কী ভাবে মেনে চলেছিল। প্রত্যেক দিন ক্রিকেট খেলার আগে চলত সিট আপ। কখনও ক্লান্ত হতো না। স্যারকে একবার শুধু মাহি বলেছিল, ‘‘স্যার, ফিট থাকার জন্য শুধু সিট আপ কেন? অন্য আর কী করতে হবে বলুন না।’’

তাঁর এক সময়ের ছাত্রের এই সফল যাত্রাপথের কারণ হিসেবে কেশববাবু ফিটনেসকেই আগে রাখছেন। তিনি বলছিলেন, ‘‘ছোট থেকেই ফিটনেসকে অসম্ভব গুরুত্ব দিত মাহি। যে জন্য আজ ও ৩০০ ওয়ান ডে খেলছে। একজন উইকেটকিপারের পক্ষে ৩০০টা ওয়ান ডে খেলা কিন্তু সহজ ব্যাপার নয়। মনে রাখবেন, এখনও একটা পঞ্চাশ ওভারের ম্যাচে ওকে অন্তত তিনশোবার উইকেটের পিছনে উঠবোস করতে হয়।’’ সেই ফিটনেসের বীজ বপন হয়েছিল কিন্তু ওই একশো সিট আপ থেকেই।

কেশববাবু জানান, জওহর বিদ্যা মন্দিরের আর পাঁচটা ছাত্রের সঙ্গে যখন ধোনি ক্রিকেট খেলা শুরু করেছিলেন, তখন তাঁকে খেলার মানের দিক থেকে খুব একটা আলাদা ভাবে চোখে পড়েনি। কেশববাবুর বক্তব্য, ‘‘প্রথম দিকে চোখে পড়ত শুধু মাহির ফিটনেস। ফিটনেস বাড়ানোর জন্য শুধু ক্রিকেট নয়, ফুটবল-ব্যাডমিন্টন সবই খেলত। বর্ষার সময় যখন স্কুলে ক্রিকেট বন্ধ থাকত, তখন ইন্ডোরে চুটিয়ে ব্যাডমিন্টন খেলেছে মাহি। বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলছে। কাদা মাঠে বৃষ্টির মধ্যে মাহির ফুটবল খেলার ছবিটা এখনও স্পষ্ট মনে পড়ে।’’

ধোনির তিনশো একদিনের ম্যাচ নিয়ে উচ্ছ্বসিত তাঁর একসময়ের ক্যাপ্টেন আদিল হুসেন। আদিল এখন সিসিএল-এর স্পোর্টস বিভাগের অফিসার। তখন ১৯৯৭ সাল। আদিল ছিলেন সেন্ট্রাল কোলফিল্ড লিমিটেডের ক্যাপ্টেন। ধোনি যখন সিসিএল-এ খেলার সুযোগ পেলেন, তখন তিনি একাদশ শ্রেণিতে। আদিল বলেন, ‘‘আমার ক্যাপ্টেন্সিতে ধোনি ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০২ পর্যন্ত খেলেছে। সেই সময় ও টিমের সব চেয়ে কম বয়সি খেলোয়াড় ছিল। কিন্তু অফুরন্ত প্রাণশক্তিতে সবাইকে ছাপিয়ে যেত। উইকেটকিপিং করেই ওপেন করতে নামত। কুড়ি ওভার, কখনও তিরিশ ওভার কিপিং করে ফের ওপেন করত। আর নেমেই মারকুটে ব্যাটিং শুরু। শুধু তো কিপিং নয়, মাঝে মধ্যে ওকে বল করতেও দিতাম।’’

আদিলের মনে পড়ে যায়, ২০০০ সালের লখনউয়ের একটি ডে-নাইট ম্যাচে বোলার মাহির কথা। আদিল বলছিলেন, ‘‘লখনউ ‘এ’ টিমের বিরুদ্ধে আমাদের ম্যাচ। ওরা এমন মারতে শুরু করল যে মনে হল জিতেই যাবে। আমি ওকে বললাম, মহেন্দর বোলিং করোগে? রান চেক করনা হ্যায়।’’ আদিলের মনে পড়ে যায় মাহির আঁটসাঁট বোলিংয়ের জন্য সে বার কী ভাবে তাঁরা ম্যাচটা জিতে গিয়েছিলেন। আদিল বলেন, ‘‘ওকে যে কাজটাই করতে দিতাম, একশো শতাংশ মন দিয়ে করত। সেটাই বোধহয় ওর জীবনের সাফল্যের চাবিকাঠি।’’

ধোনির বন্ধু, ধোনির কোচেদের কাছে তিনি যেন এখনও সেই ছোট্ট মাহি। যে বিনা দ্বিধায় একশোটা সিট আপ করবে স্যারের কথায়। যে ক্যাপ্টেনের নির্দেশে বল হাতে নিয়ে বিপক্ষ টিমকে আটকে দেবে।

তিনশো ওয়ান ডে-র আগে ধোনির জন্য যেমন শুভেচ্ছাবার্তা ভেসে আসছে তাঁর নিজের শহর থেকে, তেমন একটা চাহিদাও আছে। চাহিদাটা ধোনির প্রথম ক্রিকেট কোচ, কেশববাবুর।

কী সেই চাহিদা? একটা স্টাম্পিং।

কেশববাবু মনে করিয়ে দিচ্ছেন, আর একটা হলেই স্টাম্পিংয়ের সেঞ্চুরি হয়ে যাবে ধোনির। সঙ্গে ভেঙে দেবেন কুমার সঙ্গকারার রেকর্ডও। ‘‘ওর কাছে আমার একটাই চাহিদা। তিনশোতম ম্যাচে একশো নম্বর স্টাম্পটা করুক মাহি,’’ আবদার ধোনির শৈশবের কোচের।

MS Dhoni Cricket Ranchi International one day match মহেন্দ্র সিংহ ধোনি রাঁচী 300th Match Sri Lanka
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy