১৯৭৮-এর ফেব্রুয়ারি মাস। লিয়ন স্পিঙ্কসের কাছে হেরে সবেমাত্র ব়িশ্বচ্যাম্পিয়নশিপের খেতাব খুইয়েছেন মহম্মদ আলি। ভাঙা মন নিয়ে এসেছেন বাংলাদেশ সফরে। সেখানে মুখোমুখি হলেন বাংলাদেশের জুনিয়র বক্সিং চ্যাম্পিয়ন মহম্মদ গিয়াসুদ্দিনের। আর সবাইকে চমকে দিয়ে মাত্র তিন রাউন্ডে আলিকে ‘নক আউট’ করে দিল ছোট্ট গিয়াসুদ্দিন!
গিয়াসুদ্দিনের সঙ্গে ম্যাচটিকে মহম্মদ আলি একেবারেই দর্শক মনোরঞ্জনের মঞ্চ হিসেবে দেখলেও, বারো বছরের কিশোর বক্সারের কাছে তা ছিল লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট। বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা বক্সারের বিরুদ্ধে লড়াই, তা যতই হালকা মেজাজের হোক, পাকাপাকি প্রভাব ফেলেছিল গিয়াসুদ্দিনের জীবনে। ৩৭ বছর আগের সে দিন আজও যেন টাটকা অধুনা বছর পঞ্চাশের পক্ককেশ ব্যবসায়ীর কাছে। “আমি প্রথম থেকেই চাইছিলাম আলির মুখে মারতে। কিন্তু, ও এতটাই লম্বা ছিল যে, আমি ওর মুখ পর্যন্ত পৌঁছতেই পারছিলাম না। তাই বাধ্য হয়ে গায়ের জোরে পেটে মারছিলাম। প্রথম রাউন্ডের পর ও দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে আমায় ভয় দেখাতেও চেয়েছিল। কিন্তু আমি ওকে মারতেই থাকি।”— বলেন গিয়াসুদ্দিন। তবে উল্টে কিশোর বক্সারকে যে কোনও আঘাতই করেননি বিশ্বসেরা বক্সার, তা-ও মেনে নিলেন গিয়াসুদ্দিন। তৃতীয় রাউন্ডের শেষে ‘টলতে টলতে’ রিংয়ে পড়ে যান আলি। কাউন্টডাউনের শেষে তাঁকে নক আউট ঘোষণা করেন রেফারি। ফলাফল ঘোষণা হতেই হাসিতে ফেটে পড়ে উপস্থিত দর্শক।
তবে গিয়াসুদ্দিনের সঙ্গে ম্যাচ হওয়ার কথাই ছিল না আলির। সেনাবাহিনীর এক শক্তিশালী যুবককে আলির বিরুদ্ধে নামানোর পরিকল্পনা ছিল আয়োজকদের। কিন্তু আলি তাঁদের জানিয়ে দেন, সিরিয়াস লড়াইয়ের কোনও ইচ্ছাই তাঁর নেই। তাই বেছে নেওয়া হয় কিশোর গিয়াসুদ্দিনকে।
মাত্র ছ’বছর বয়সে আলিকে দেখে বক্সিং শেখা শুরু গিয়াসুদ্দিনের। হয়েছিলেন জাতীয় জুনিয়র চ্যাম্পিয়নও। সিনিয়র বিভাগে যখন সবেমাত্র জিততে শুরু করেছেন, তখনই মাত্র ১৮ বছর বয়সে একটি দুর্ঘটনায় কেরিয়ার শেষ হয়ে যায় গিয়াসুদ্দিনের।
আরও পড়ুন:
আলির জীবনের সেরা দশ ফাইট
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy