Advertisement
E-Paper

মৃত্যুর সঙ্গেও শেষ রাউন্ড পর্যন্ত লড়ে গিয়েছে আলির হৃদয়

লড়াই ছিল তাঁর চিরকালের অভ্যাস। রিংয়ে, রিংয়ের বাইরে। তিন দশক পার্কিনসন্সের সঙ্গে লড়াইয়ের পর মৃত্যুর সঙ্গেও সে ভাবেই লড়াই চালিয়ে গিয়েছিলেন শেষ মিনিট পর্যন্ত। সহজে হার মানেননি। কী ভাবে? তাঁর বাবার মৃত্যুর পর দিন সেই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করলেন কিংবদন্তি বক্সারের কন্যা হানা আলি। শরীরের ভিতরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো স্তব্ধ হয়ে যাওয়ার পরও মহম্মদ আলির হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়নি। চলে প্রায় আধ ঘণ্টা।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৬ ০৩:৫৬
লুইভিলে মহম্মদ আলি সেন্টারের সামনে।

লুইভিলে মহম্মদ আলি সেন্টারের সামনে।

লড়াই ছিল তাঁর চিরকালের অভ্যাস। রিংয়ে, রিংয়ের বাইরে। তিন দশক পার্কিনসন্সের সঙ্গে লড়াইয়ের পর মৃত্যুর সঙ্গেও সে ভাবেই লড়াই চালিয়ে গিয়েছিলেন শেষ মিনিট পর্যন্ত। সহজে হার মানেননি।

কী ভাবে?

তাঁর বাবার মৃত্যুর পর দিন সেই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করলেন কিংবদন্তি বক্সারের কন্যা হানা আলি। শরীরের ভিতরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো স্তব্ধ হয়ে যাওয়ার পরও মহম্মদ আলির হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়নি। চলে প্রায় আধ ঘণ্টা।

অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই সত্যি বলে দাবি করেছেন হানা। টুইটারে তিনি লেখেন, ‘‘বাবার শরীরের সব প্রত্যঙ্গগুলি থেমে যাওয়ার পরও ওঁর হৃদয় ধকধক করেছিল আরও আধ ঘণ্টা। কেউ কখনও এমন ঘটনার কথা শুনেছে বলে মনে হয় না। ইচ্ছাশক্তি ও লড়াকু মানসিকতা ওঁর কী পর্যায়ে ছিল, তা এ থেকেই বোঝা যায়।’’

দীর্ঘ জীবনযুদ্ধের পর মহম্মদ আলি অবশেষে শান্তির ঘুমে যাওয়ার সুযোগ পেলেন। এতে যে তার পরিবার দুঃখর চেয়ে বেশি স্বস্তি পেয়েছে, তা জানিয়ে হানা টুইটারে লেখেন, ‘‘বাবার মৃত্যুশয্যার পাশে আমরা যারা ছিলাম, তারা নিজেদের মনের সঙ্গে লড়াই করে শক্ত থাকার চেষ্টা করি। বাবার কানের পাশে গিয়ে চুপিচুপি বলি, ‘‘তুমি এ বার আসতে পারো বাবা। আমরা সবাই ভাল থাকব। আমরা সবাই তোমাকে খুব ভালবাসি।’’

অ্যারিজোনার যে হাসপাতালে আলি জীবনযুদ্ধ শেষ করেন, সেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ‘সেপটিক শক’-এর কারণে তাঁর মৃত্যু হয়। সংক্রমণের ফলে শরীরের কোনও অংশে ক্ষত তৈরি হওয়ায় রক্তচাপ খুব কমে যাওয়াকে ডাক্তারি পরিভাষায় ‘সেপটিক শক’ বলা হয়ে থাকে।

অ্যারিজোনা থেকে এখন সারা বিশ্বের নজর সেখানে, যেখানে জন্ম হয়েছিল সদ্যপ্রয়াত কিংবদন্তির। ছোটবেলাও কাটিয়েছিলেন, সেখানেই। ছোট্ট সেই গোলাপি বাড়িটা আজও আছে লুইভিলে। কিন্তু সেই বাড়ি থেকে উঠে আসা দুনিয়ার কাছে ‘দ্য গ্রেটেস্ট’ হয়ে ওঠা মানুষটা আজ নেই। শুক্রবার তাঁর সেই নিজের শহর লুইভিলে হবে আলির অন্ত্যেষ্টি। যার পরিকল্পনা তিনি নিজেই করেছিলেন।

তিনি যে কোনও এক বিশেষ দেশের, জাতির বা ধর্মের নন, সারা বিশ্বের নাগরিক, তা মাথায় রেখেই আলি বলে গিয়েছেন, কোনও এক সম্প্রদায়ের নিয়ম মেনে তাঁর অন্ত্যেষ্টি হবে না। থাকবেন সব ধর্মের প্রতিনিধি। তাঁর নামাঙ্কিত রাস্তা দিয়ে যাবে তাঁর শেষ যাত্রা, যেমন তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ১৯৬০-এর অলিম্পিক্সে সোনা জিতে ফেরার পর। তখন তিনি ছিলেন ক্যাসিয়াস ক্লে। পরে ধর্মান্তরিত হয়ে নাম পাল্টে হয়ে যান মহম্মদ আলি। বৃহস্পতিবার হবে পারিবারিক অনুষ্ঠান ও শুক্রবার অন্ত্যেষ্টি। যা দেখবে সারা বিশ্ব।

আলি পরিবারের মুখপাত্র বব গানেল সাংবাদিকদের জানান, শুক্রবার মহম্মদ আলির শেষ যাত্রার পর যে স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান হবে, তাতে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন, আলির অন্যতম প্রিয় পাত্র কমেডিয়ান বিল ক্রিস্টাল, স্পোর্টস টিভি সঞ্চালক ব্রায়ান্ট গাম্বেলরা উপস্থিত থাকবেন। শেষকৃত্যে যেমন থাকবেন একজন ইমাম, তেমনই থাকবেন অন্য ধর্মের প্রতিনিধিরাও।

শনিবার লুইভিলে সারা দিন ধরে বৃষ্টি চলা সত্ত্বেও ‘দ্য গ্রেটেস্ট’-এর আত্মার শান্তি কামনা করে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধার্পনের ঘাটতি ছিল না বিন্দুমাত্র। গ্র্যান্ড অ্যাভিনিউয়ের পাড়ার প্রতিবেশি থেকে শুরু করে সুদূর জর্জিয়া থেকেও তাঁর আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা অর্পন করতে এসেছিলেন মহম্মদ আলির ভক্তরা। কিংবদন্তির ভাই রহমান আলি চোখ মুছতে মুছতে প্রত্যেকের সঙ্গে হাত মেলান। লুইভিলের তাঁর ছোটবেলার যে বাড়িটিকে এখন মিউজিয়ামে পরিণত করা হয়েছে, সেই বাড়িটির সামনে, মহম্মদ আলির ছবির সামনে স্তুপাকৃত ফুলের তোড়া ও হাজারো কার্ড, যাতে লেখা ভক্তদের বিভিন্ন বার্তা।

একসময় আলির বাউটের ওয়াটার গার্ল হিসেবে নিয়মিত থাকা রুবি হাইডকেও দেখা যায় এই ভক্তদের ভীড়ের মধ্যে। বলেন, ‘‘উনি যখন হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন হয়ে পুরনো পাড়ায় ফিরে এসেছিলেন, তখনই বোঝা গিয়েছিল মহম্মদ আলি কখনও শিকড়কে ভুলে যাননি। সে বারই দেখেছিলাম, উনি বাচ্চাদেরও কত ভালবাসতেন। সবার আগে ভাল মানুষ ছিলেন। তারপর কিংবদন্তি বক্সার।’’

সেই কিংবদন্তি বক্সার বা ভাল মানুষটি — আজ সবার সামনে নেই ঠিকই। কিন্তু চিরকাল থাকবেন সবার হৃদয়ে, মননে।

Muhammed Ali Boxing
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy