Advertisement
E-Paper

সঞ্জীবনের গ্লাভসই কেড়ে নিল বাগানের পয়েন্ট

হাওড়ার এক বঙ্গসন্তান রুখে দিলেন তীব্র বেগে দৌড়তে থাকা মোহনবাগানের অশ্বমেধের ঘোড়া। শনিবাসরীয় রাতে অখ্যাত মুম্বই এফসি গোলকিপার সঞ্জীবন ঘোষ-ই শেষ পর্যন্ত নায়ক হয়ে গেলেন কুপারেজে। সনি নর্ডিদের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়ে। পয়েন্ট কেড়ে নিয়ে, নিশ্চিত জয় থেকে বাগানকে দূরে সরিয়ে। অন্তত তিনটি নিশ্চিত গোল তো তিনি বাঁচালেনই, আহত হয়ে মাঠ ছেড়ে যাওয়ার আগে অক্সিজেন যুগিয়ে গেলেন পুরো টিমকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৫ ০৩:৩১
কুপারেজে সঞ্জীবন। এ যাত্রায় গোল বাঁচিয়ে আটকে দিলেন মোহনবাগানকে। ছবি: পিটিআই

কুপারেজে সঞ্জীবন। এ যাত্রায় গোল বাঁচিয়ে আটকে দিলেন মোহনবাগানকে। ছবি: পিটিআই

হাওড়ার এক বঙ্গসন্তান রুখে দিলেন তীব্র বেগে দৌড়তে থাকা মোহনবাগানের অশ্বমেধের ঘোড়া। শনিবাসরীয় রাতে অখ্যাত মুম্বই এফসি গোলকিপার সঞ্জীবন ঘোষ-ই শেষ পর্যন্ত নায়ক হয়ে গেলেন কুপারেজে। সনি নর্ডিদের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়ে। পয়েন্ট কেড়ে নিয়ে, নিশ্চিত জয় থেকে বাগানকে দূরে সরিয়ে। অন্তত তিনটি নিশ্চিত গোল তো তিনি বাঁচালেনই, আহত হয়ে মাঠ ছেড়ে যাওয়ার আগে অক্সিজেন যুগিয়ে গেলেন পুরো টিমকে। না হলে, বহু বছর পর আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রাস্তায় সবার আগে থাকা বাগানের পালতোলা নৌকো খেতাবের আরও কাছে চলে যেতেই পারত এ দিন।

কাতসুমিরা পয়েন্ট নষ্ট করায় অবশ্য একেবারেই হতাশ নন বাগান কোচ সঞ্জয় সেন। বরং তিনি খুশি দল পিছিয়ে গিয়েও যে ভাবে প্রত্যাঘাত করেছে তা দেখে। ম্যাচ শেষ হওয়ার পর মুম্বইতে ফোনে ধরা হলে বলে দিলেন, ‘‘আমরা তো লিগ শীর্ষেই আছি। দু’নম্বরে থাকা বেঙ্গালুরুর চেয়ে চার পয়েন্ট এগিয়ে আছি। তবে যে ভাবে আমাদের ছেলেরা গোল খাওয়ার পরও ওদের চেপে ধরেছিল তাতে আরও একটা গোল হতেই পারত।’’

সাসপেনশনের জন্য মুম্বই কোচ খালিদ জামিল এ দিনের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে রিজার্ভ বেঞ্চে ছিলেন না। তবে মাঠের বাইরে থেকে টানা চিৎকার করে গিয়েছেন। ফেডারেশনের নিয়মে যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কোচ মাঠে না থাকলেও জোসিমার-ভাসুমরা মানসিকভাবে একটুও পিছিয়ে পড়েননি। বরং অবনমনের আওতায় থেকে নিজেদের টেনে তোলার জন্য প্রতিটি ইঞ্চিতে লড়াইয়ের চেষ্টা করে গিয়েছেন। এমনিতে ধারে-ভারে বাগান ব্রিগেড অনেক শক্তিশালী। কিন্তু সেই ফারাকটা হেনরি পিকার্ডোর দল মুছে ফেলার চেষ্টা করে গিয়েছেন বল তাড়া করে।

করিম বেঞ্চারিফার টিমকে হারানোর পর সঞ্জয়ের দল মুম্বই থেকেও তিন পয়েন্ট নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত ছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও কেন জয়ের রাস্তা থেকে ছিটকে যেতে হল আপনার টিমকে? বাগান কোচ বলে দিলেন, ‘‘ওদের গোলকিপার আমাদের দু’পয়েন্ট নিয়ে গেল, না হলে আমরা যা খেলেছি, যে ভাবে ওদের চাপে ফেলেছি তাতে জিততেই পারতাম। হয়নি। কী করা যাবে। সবদিন তো সব হয় না।’’ মুম্বই এফসি-র সঙ্গে পিছিয়ে পড়েও ম্যাচ ড্র করার পর ডেনসনদের পয়েন্ট হল ৩২। লিগ টেবলে তাদের পরেই আছে বেঙ্গালুরু ২৮। আজ রবিবার ইস্টবেঙ্গল যদি সুনীল ছেত্রীদের থেকে পয়েন্ট কাড়তে পারে তা হলে সুবিধা পাবে বাগান। পুরো বাগান শিবির তাই তাঁকিয়ে থাকবে পড়শি ইস্টবেঙ্গলের ম্যাচের দিকে। বাগান কোচ বলেও ফেললেন, ‘‘কাল (রবিবার) যদি বেঙ্গালুরু পয়েন্ট নষ্ট করে তা হলে আমাদের সঙ্গে ওদের ফারাক বেড়ে যাবে। না হলেও সমস্যা নেই। পুণেতে গিয়ে ভারত এফসি ম্যাচ জিতে শীর্ষেই থাকব আমরা। আমাদের কোনও চাপ নেই।’’

কুপারেজে প্রিয় দলের খেলা দেখতে প্রচুর প্রবাসী সমর্থক এসেছিলেন মাঠে। তাঁদের পরিবার নিয়ে। দুটি বাঙালিদের ক্লাব শুধু নয়। পুণে এবং থানের মতো জায়গা থেকেও সবুজ-মেরুন পতাকা নিয়ে তাঁরা ভিড় জমিয়েছিলেন চার্চ গেটে। সেখান থেকে মিছিল করে এসে স্টেডিয়ামের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় বসেছিলেন। শুরুতেই কাতসুমির ফ্রি-কিক পোস্ট ছুঁয়ে যাওয়ার পর বাগান খেলাটা ধরলেও মাঝমাঠ সে ভাবে কার্যকর না হওয়ায় গোল পায়নি। বিরতির পর সেট পিসে হঠাৎ-ই গোল করে যান ভাসুম। ০-১ পিছিয়ে পড়ার পর বাগান চাপ বাড়াতে থাকে। এমন একটা অবস্থা দাঁড়ায় যে আট-নয় জন মিলে রক্ষণ সামাল দিতে হয় চিকাওয়ালিদের। মুম্বইকে কোণঠাসা করেও জেজে-সনিরা বারবার আটকে যাচ্ছিলেন মুম্বই কিপার দেবজিতের কাছে। শেষ পর্যন্ত সমতা ফেরান ধনচন্দ্র। সনির নেওয়া কর্নারে মুম্বইয়ের কিপার ফ্লাইট মিস করায় তা যায় ধনচন্দ্রর কাছে। জোরাল শটে গোল করেন বাগান লেফট ব্যাক। রেফারি সন্তোষ আট মিনিট ইনজুরি টাইম দিলেও সনিরা গোল করতে পারেননি।

আজ রবিবারই পুণে রওনা হচ্ছে বাগান। মঙ্গলবার রহিম নবি-মেহরাজদের সঙ্গে খেলা সঞ্জয়ের টিমের। বাগান কোচ ওই ম্যাচ জেতার ব্যাপারে একশোভাগ আশাবাদী। বলে দিলেন, ‘‘ওই ম্যাচ থেকে তিন পয়েন্ট নিয়েই ফিরব। দেখে নেবেন।’’

কিন্তু কতটা মোটিভেশন নিয়ে পুণেতে নামতে পারবেন বাগান ফুটবলাররা? এ দিন ম্যাচের পর ড্রেসিংরুমে ঝামেলা হয় ফুটবলারদের একাংশকে বেতন দেওয়া নিয়ে। ক্লাব কর্তারা বিদেশি এবং কিছু ফুটবলারের মাইনে দিলেও অনেকেই তা পাননি। তা নিয়ে ম্যাচের পর সনি-বোয়ারা কোচ ও ম্যানেজারের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাদের বক্তব্য সবাইকে টাকা না দিলে টিম স্পিরিট নষ্ট হবে। যা টিমের উপর প্রভাব ফেলবে। কর্তারা কেউ টিমের সঙ্গে মুম্বই যাননি। ম্যানেজার শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায় সবাইকে কথা দেন, আজ রবিবার এ ব্যাপারে কর্তাদের সঙ্গে কথা বলবেন। সঙ্গে ফুটবলারদের তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, সোমবারের মধ্যেই বেতন-সমস্যা মিটিয়ে দেওয়া হবে।

মোহনবাগান: দেবজিৎ, প্রীতম, বেলো, আনোয়ার, ধনচন্দ্র, সনি, ডেনসন (শৌভিক), শেহনাজ, মণীশ (বিক্রমজিৎ), কাতসুমি, জেজে।

mumbai fc football mohun bagan cooperage stadium Nidhin Lal Sanjiban Ghosh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy