Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
নীরজের থেকে ধারাবাহিকতা চান মিলখা

বিশ্ব মঞ্চে ভারতীয় অ্যাথলিটের প্রথম সোনা

দু’টোর মধ্যে একটা স্বপ্নপূরণ হয়ে গেল মিলখা সিংহের। তাও আবার রিও অলিম্পিক্স শুরুর মাত্র বারো দিন আগে! কিছু দিন আগেই আনন্দবাজারে সাক্ষাৎকারে ভারতের সর্বকালের সেরা অ্যাথলিট বলেছিলেন, ‘‘মৃত্যুর আগে কোনও ভারতীয় অ্যাথলিটের হাতে সোনার পদক দেখে যেতে চাই। অলিম্পিক্স বা বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে।’’

ভারতীয় অ্যাথলেটিক্সে বিরল দৃশ্য। বিশ্বরেকর্ড করে নীরজ। ছবি: এএফপি

ভারতীয় অ্যাথলেটিক্সে বিরল দৃশ্য। বিশ্বরেকর্ড করে নীরজ। ছবি: এএফপি

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৬ ০৪:০৬
Share: Save:

দু’টোর মধ্যে একটা স্বপ্নপূরণ হয়ে গেল মিলখা সিংহের। তাও আবার রিও অলিম্পিক্স শুরুর মাত্র বারো দিন আগে!

কিছু দিন আগেই আনন্দবাজারে সাক্ষাৎকারে ভারতের সর্বকালের সেরা অ্যাথলিট বলেছিলেন, ‘‘মৃত্যুর আগে কোনও ভারতীয় অ্যাথলিটের হাতে সোনার পদক দেখে যেতে চাই। অলিম্পিক্স বা বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে।’’

রবিবার মিলখার সেই স্বপ্নপূরণ করলেন তাঁর শহর চণ্ডীগড়েরই ছেলে নীরজ চোপড়া।

এ দিন পোলান্ডে অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের হয়ে যে কোনও পর্যায়ের বিশ্ব মিটে নীরজ প্রথম সোনা তো জিতলেনই, নতুন বিশ্বরেকর্ডও গড়লেন জ্যাভলিন থ্রো-তে। ৮৬.৪৮ মিটার ছুড়ে ভারতীয় থ্রোয়ার ভেঙে দিলেন লাতভিয়ার জিগিসমুন্ডস সিরমাইসের ৮৪.৬৯ মিটারের বিশ্বরেকর্ড। ইতিহাস গড়ার পর নীরজ বলেন, ‘‘আমি অনেক দূর ছুড়তে চেয়েছিলাম। তবে আশা করিনি ৮৬ মিটারের বেশি ছুড়ে ফেলব। এই বিশ্বরেকর্ড গড়ার কথাও মাথায় আসেনি।’’ নীরজের অভূতপূর্ব পারফরম্যান্সের পর ভারতীয় ফেডারেশন এ দিনই বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স সংস্থার প্রেসিডেন্ট সেবাস্তিয়ান কো-র কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছে, ইতিহাস গড়া ভারতীয় তরুণকে রিও অলিম্পিক্সে নামার জন্য ওয়াইল্ড কার্ড দেওয়ার।

চণ্ডীগড়ের ডিএভি কলেজের ছাত্র নীরজ। এ দিন পোলান্ডে তাঁর গড়া বিশ্বরেকর্ড জ্যাভলিনে ভারতের জাতীয় সিনিয়র রেকর্ডকে (রাজিন্দর সিংহের ৮২.২৩ মিটার) পিছনে ফেলে দিয়েছে। তবে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ হল, বিশ্ব পর্যায়ের ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে আগে কখনও কোনও ইভেন্টে সোনা জেতেনি ভারত। ২০০০ বিশ্ব জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে মেয়েদের ডিসকাস থ্রো-তে সোনা জিতেছিলেন সীমা পুনিয়া। কিন্তু ডোপ পরীক্ষায় ধরা পড়ায় তাঁর পদক কেড়ে নেওয়া হয়। সিনিয়র বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতীয় অ্যাথলিটদের প্রথম পদক লাভ অঞ্জু ববি জর্জের ২০০৩-এ মেয়েদের লং জাম্পে ব্রোঞ্জ।

নীরজের সাফল্য পঞ্জাবের অ্যাথলিট-ঘরানাকে আরও সমৃদ্ধ করল। তবে এ দেশে আধুনিক ট্রেনিং পদ্ধতি এবং সরকারি পৃষ্টপোষকতার বর্তমান যুগেও কেন পঞ্জাবই ভারতের অ্যাথলিট তৈরির কারখানা হয়ে দাঁড়াচ্ছে, সেটার ব্যাখ্যা দিলেন উচ্ছ্বসিত মিলখা। রবিবার বিকেলে ফোনে বললেন, ‘‘অ্যাথলিটদের জন্য যে আদর্শ পরিবেশ দরকার, সেটা আমাদের এখানে আছে। আধুনিক সরঞ্জাম বা বিভিন্ন রকমের প্রযুক্তি হয়তো অনেক রাজ্যেই পাওয়া যাবে। তবে এখানে অ্যাথলিটদের জন্য সারারণ মানুষের উৎসাহ-আবেগ বাংলায় ফুটবলের মতোই। এখানে ঘরে ঘরে অ্যাথলিট তৈরি হয়। এটা পঞ্জাব স্পোর্টসের সিস্টেমে ঢুকে পড়েছে।’’ একটু থেমে মিলখার আরও দাবি, ‘‘নীরজ এই সিস্টেমেরই ফসল। তবে ওকে এই সাফল্য ধরে রাখতে হবে। অলিম্পিক্স পদক নিশ্চিত করতে হবে ভারতের জন্য।’’

নীরজের পারফরম্যান্স (৮৬.৪৮ মিটার) বিশ্ব সিনিয়র জ্যাভলিন থ্রোয়ারদের র‌্যাঙ্কিংয়ে তাঁকে এ দিন আট নম্বরে তুলে দিল। এমনকী চার বছর আগে লন্ডন অলিম্পিক্সে সোনাজয়ী জ্যাভলিন থ্রোয়ারের পারফরম্যান্সকেও (৮৪.৫৮ মিটার) এ দিন ছাপিয়ে গিয়েছেন নীরজ। কিন্তু জ্যাভলিনে এ বার অলিম্পিক্সে নামার যোগ্যতামান ৮৩ মিটার সত্ত্বেও তাঁর রিও যাওয়া ওয়াইল্ড কার্ড পাওয়ার উপর নির্ভরশীল। কারণ, গত ১১ জুলাই অলিম্পিক্সে নাম নথিভুক্তের শেষ তারিখ চলে গিয়েছে। তাই নজির গড়েও আপাতত হতাশ চণ্ডীগড়ের তরুণ। ‘‘আসলে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা আমার দ্বিতীয় লক্ষ্য ছিল। প্রথম লক্ষ্য ছিল অলিম্পিক্স। সেটা এখনও পারিনি’’ বলেছেন নীরজ।

আহা! কেন দু’সপ্তাহ আগে নীরজের আজকের দিনটা এল না!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE