ঘরের মাঠে ছিটকে গেল ধোনির স্টাম্প।
মহেন্দ্র সিংহ ধোনির শহরের স্টেডিয়াম থেকে যখন বুধবার রাতে ম্যাচের পর বেরোচ্ছি, তখন চার দিক যেন থমথম করছে। জেমস নিশামের রিভার্স সুইং ধোনির লেগ স্টাম্প ছিটকে দেওয়ার পর থেকে পরিবেশটা এমন থমথমে। ঘরের ছেলের এই আউটের পরেই বোধহয় সবাই ধরে নেয় ম্যাচটা ভারত হেরে যাচ্ছে। কিন্তু আসলে ভারতের হাতে ম্যাচটা তখনও ছিল। যখন ক্রিজে মণীশ পাণ্ডে, কেদার যাদব, হার্দিক পাণ্ড্য-ও ছিল, তখনও ম্যাচটা জেতা যেত।
মণীশদের এই ব্যর্থতাতেই প্রশ্নটা উঠছে। কোহালি, ধোনিদের ব্যাট না চললে কি ভারত জিতবে না?
এই ওয়ান ডে সিরিজে অজিঙ্ক রোহিত শর্মা, রাহানেরা এখনও ভারতকে পুরো ভরসা দিতে পারেনি। রোহিতের কাছে তো সিরিজটা ভুলে যাওয়ার মতো! বুধবার রাহানে সেই জায়গাটা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করল হাফসেঞ্চুরি করে। কিন্তু সেই সেট হয়েও আউট হওয়ার রোগটা গেল না ওর। এ দিন চাপের মুখে লোয়ার মিডল অর্ডারও ব্যর্থ।
তা হলে তো সত্যিই দেখা যাচ্ছে, কোহালি ও ব্যাটিং অর্ডারে উঠে আসা ধোনি ছাড়া ভারতকে ম্যাচ জেতানোর মতো এই মুহূর্তে কেউ নেই।
মণীশ, হার্দিক, কেদাররা যদি এই চাপের মুখ থেকেও দলকে টেনে বার করে আনতে না পারে, তা হলে আর কবে করবে? ওদের সামনে এটা বড় সুযোগ ছিল নিজেদের প্রমাণ করার। পারল না নিজেদের ভুলেই।
মণীশ মিড অনের উপর দিয়ে বলটা ওড়াতে গিয়েছিল। কিন্তু শটটা ঠিক ছিল না বলে একটু নীচের দিকে নেমে যায়। স্বীকার করতেই হবে ল্যাথামও ক্যাচটা অসাধারণ নিয়েছে। কেদার সোজা বলটা ব্যাটে খেলতে না পারায় এলবিডব্লিউ হল। পাণ্ড্যর শটটাও হাফ-হার্টেড ছিল বলে লং অফে ক্যাচ উঠে যায়। যে সময় দলকে বিপদ থেকে বার করে আনার কথা ওদের, সেই সময়ই এ রকম শট নিয়ে আউট হওয়ার কোনও মানে হয় না।
কোহালি, ধোনিরা তো আর প্রতি ম্যাচে জেতাবে না। ওরা ব্যর্থ হলে ব্যাক-আপ দেওয়ার জন্য অন্যদের দু’-একজনকে দায়িত্ব নিতেই হবে। কিন্তু এই মুহূর্তে সে রকম কেউ নেই এই দলে। যে লড়াইটা শেষ দিকে লড়ার চেষ্টা করল তিন বোলার অক্ষর, উমেশ আর ধবল কুলকার্নি, সেই চেষ্টাটা যদি মণীশরা করত, তা হলে হয়তো ম্যাচটা ভারতের দিকে যেত। বাঁ-হাতি স্পিনারকে মারতে বাঁ-হাতি অক্ষরকে ব্যাটিং অর্ডারে তুলে আনার প্ল্যানটা দারুণ ছিল ধোনির। কিন্তু ওই সময়ই ধোনি নিজে আউট হয়ে যাওয়ায় প্ল্যানটা ভেস্তে যায়। এই ভুলগুলোই বুধবার হারের মুখ দেখাল ধোনির ভারতকে।
ভুল শুধু ব্যাটিংয়েই নয়। আমাদের বোলাররা রাঁচিতে ১৩টা ওয়াইড বল করেছে। ১৩টা ওয়াইড মানে দু’ওভার বাড়তি বোলিং। শুধু বাড়তি বোলিং নয়, বিপক্ষকে ১৩টা বাড়তি রানও। ভেবে দেখুন, ভারতের হারের শুরুটা কিন্তু ওখান থেকেই।
ধোনির আউট! উল্লাস উইলিয়ামসনদের।
পিচটা যে পরের দিকে ভাঙবে, সেটা একেবারে ঠিকঠাক বুঝে নিয়ে এ দিন কেন উইলিয়ামসন দলে যে তিন স্পিনার রাখার এবং প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্তটা নেয়, দু’টোই একদম ঠিক ছিল। এই নির্ভুল সিদ্ধান্তের পুরস্কার পেল ওরা। কেন ওরা ওয়ান ডে র্যাঙ্কিংয়ে ভারতের চেয়ে এগিয়ে, সেটাও বুঝিয়ে দিল নিউজিল্যান্ড।
তবে সিরিজ ২-২ হওয়ায় গেল-গেল রব তোলার মতো কিছু হয়নি বোধহয়। জানি না শেষ ম্যাচটা বিশাখাপত্তনমে হতে পারবে কি না! ওখানে নাকি আগামী তিন-চার দিন আবহাওয়া খুব খারাপ থাকবে শুনছি। তবে যদি ম্যাচটা হয়ও, তা হলে আমার মনে হয় রাঁচির ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে জয়ে ফেরার চেষ্টা করবে ভারত। এই ভুলগুলো এমনই যে, এগুলো শোধরাতে খুব একটা সময় লাগার কথা নয়।
আসলে পাঁচ থেকে সাত নম্বরে যারা ব্যাট করতে আসে, তাদের যে ‘ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট’ করতে হয়, সেই স্কিলটা শুধু নেট প্র্যাকটিসে হয় না। ম্যাচের অভিজ্ঞতাও লাগে। যত চাপে পড়বে ততই না চাপ সামলানো শেখা যাবে।
বুধবারের ব্যর্থতার পরেও বলছি, এই দলটাই ভবিষ্যতের ওয়ান ডে টিম। এবং ২০১৯ বিশ্বকাপের জন্য অল্পস্বল্প রদবদল করে (সুরেশ রায়না ফিরবে এই দলে) এই দলটাকে নিয়েই এগোতে হবে আমাদের। এখন অনভিজ্ঞ ওরা। কিন্তু অভিজ্ঞ হয়ে ওঠার অনেক সময় আছে। ওদের সময় দিলে এই দলটাই দেখবেন এ রকম দুঃসময় থেকে দলকে বার করে নিয়ে আসতে পারবে। সেই দিনের দিকে তাকিয়েই এই ব্যর্থতা সহ্য করে নিতে হবে আমাদের।
নিউজিল্যান্ড
গাপ্টিল ক ধোনি বো হার্দিক ৭২
লাথাম ক রাহানে বো অক্ষর ৩৯
উইলিয়ামসন ক ধোনি বো অমিত ৪১
টেলর রান আউট ৩৫
নিশাম ক কোহালি বো অমিত ৬
ওয়াটলিং ক রোহিত বো ধবল ১৪
ডেভসিচ ক হার্দিক বো কেদার ১১
স্যান্টনার ন.আ ১৭
সাউদি ন.আ ৯
অতিরিক্ত ১৬।
মোট ৫০ ওভারে ২৬০-৭।
পতন: ৯৬, ১৩৮, ১৮৪, ১৯২, ২১৭, ২২৩, ২৪২।
বোলিং: উমেশ ১০-১-৬০-১, ধবল ৭-০-৫৯-১, হার্দিক ৫-০-৩১-১,
অমিত ১০-০-৪২-২, অক্ষর ১০-০-৩৮-১, কেদার ৮-০-২৭-০।
ভারত
রাহানে এলবিডব্লিউ নিশাম ৫৭
রোহিত ক ওয়াটলিং বো সাউদি ১১
বিরাট ক ওয়াটলিং বো সোঁধি ৪৫
ধোনি বো নিশাম ১১
অক্ষর বো বোল্ট ৩৮
মণীশ ক লাথাম বো সাউদি ১২
কেদার এলবিডব্লিউ সাউদি ০
হার্দিক ক লাথাম বো স্যান্টনার ৯
অমিত রান আউট ১৪
ধবল ন.আ ২৫
উমেশ ক টেলর বো বোল্ট ৭
অতিরিক্ত ১২
মোট ৪৮.৪ ওভারে ২৪১ অলআউট।
পতন: ১৯, ৯৮, ১২৮, ১৩৫, ১৫৪, ১৫৪, ১৬৭, ২০৫, ২০৭, ২৪১।
বোলিং: সাউদি ৯-০-৪০-৩, বোল্ট ৯.৪-১-৪৮-২, নিশাম ৬-০-৩৮-২,
স্যান্টনার ১০-০-৩৮-১, সোঁধি ১০-১-৫২-১, ডেভসিচ ৪-০-২২-০।
ছবি: পিটিআই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy