কর্তৃত্ব: রবিবার সেঞ্চুরির পরে বিরাট। পিটিআই
ওয়েস্ট ইন্ডিজ যখন স্কোরবোর্ডে ৩২২ রান তুলে দিল, ভেবেছিলাম এই ম্যাচে একটা লড়াই নিশ্চয়ই হবে। খেয়াল ছিল না, ভারতের ওয়ান ডে দলে বিরাট কোহালি আবার ফিরে এসেছেন! এশিয়া কাপের বিশ্রাম পর্ব শেষ করে।
কোহালি এখন যে ভাবে খেলছেন, সাদা বলের ক্রিকেটে ওকে থামানোর মতো কোনও দল বা বোলার দেখছি না। দেখা যাচ্ছে, কোহালির জন্য প্ল্যান এ, বি, সি, ডি— কিছুই খাটছে না।
রবিবার গুয়াহাটিতে তার ওপর আবার ছিলেন রোহিত শর্মা। দু’জনে মিলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলিংকে ময়দানের ক্লাব পর্যায়ে নামিয়ে আনলেন। ৩২২ রান উঠে গেল ৭.৫ ওভার বাকি থাকতে। এতেই বোঝা যাচ্ছে এই দুই ব্যাটসম্যানের আধিপত্য কতটা ছিল এই ম্যাচে। কোহালি ১০৭ বলে ১৪০ রান করে আউট হয়ে গেলেও রোহিত অপরাজিত থাকলেন ১১৭ বলে ১৫২ রানে।
আরও পড়ুন: অস্ট্রেলিয়া থেকে ইংল্যান্ড, দেখে নিন বিরাটের সেরা পাঁচ সেঞ্চুরি
রান তাড়া করতে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই শিখর ধওয়ন আউট। ওই সময় কোহালি নেমে শুধু ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলিংই ধ্বংস করলেন না, রোহিতকেও সুযোগ দিলেন উইকেটে জমে যাওয়ার। কোহালি দ্রুত রান তুলছেন দেখে রোহিত ওই সময় কোনও ঝুঁকি নেননি। খুচরো রান নিয়ে কোহালিকে স্ট্রাইক দিয়ে গিয়েছিলেন।
কোহালির ধারাবাহিকতা, স্ট্রোক প্লে, রান তাড়া করার ক্ষমতা— এ সবের কথা তো আমরা ভাল করেই জানি। পাশাপাশি আরও একটা ব্যাপারের কথা বলতে চাই। সেটা হল, কোহালির বটম হ্যান্ড প্লে। ব্যাট করার সময় ও বটম হ্যান্ড মানে ডান হাতটা যে ভাবে কাজে লাগায়, সেটা বিশ্ব ক্রিকেটের কোনও ব্যাটসম্যানের মধ্যে দেখিনি। যার ফলে একই জায়গায় পড়া বল কোহালি অফ সাইডেও মারতে পারেন আবার অন সাইডেও মারতে পারেন। ওই বটম হ্যান্ডের মোচড়ে। যে জন্য ওঁর বিরুদ্ধে কোনও পরিকল্পনা করা খুব কঠিন হয়ে যায়। কোথায় ফিল্ডিং সাজাবেন? কোন লাইনে বোলার বল করবে? এ দিনও গুয়াহাটিতে দেখলাম দেবেন্দ্র বিশুর একই স্পটে পড়া ডেলিভারি একবার অফে মারলেন, আর একবার অনে।
কোহালি যেমন সব ধরনের ক্রিকেটেই এই মুহূর্তে এক নম্বর ব্যাটসম্যান, তাঁর এ দিনের সঙ্গী রোহিত সম্পর্কে বলতে হয়, ও সাদা বলের ক্রিকেটে রাজা। মিস্টার ট্যালেন্টও বলা যায়। এ দিন দেখলাম, একেবারে পাক্কা পেশাদারের মতো খেলে গেলেন। কোহালি ছয়ের ওপর আস্কিং রেটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্যাট করে গেলেন। কখনওই আস্কিং রেট বাড়তে দেননি। ফলে রোহিত সময় নিয়ে সেট হলেন, তার পর স্ট্রোক খেলতে শুরু করলেন। যে শটে সেঞ্চুরি পেলেন, তা ছবির মতো। স্পিনার অ্যাশলি নার্সের বলটা হাল্কা ঠেলেছিলেন। মনে হচ্ছিল, এক রানের জন্য খেলেছেন। কিন্তু সার্কলের মধ্যে দাঁড়ানো মিডঅফ ফিল্ডারকে হতভম্ব করে দিয়ে বল বাউন্ডারিতে পৌঁছে যায়। এটাই হল রোহিতের বিশেষত্ব। নিখুঁত টাইমিংয়ের ওপর খেলে যায়। পাশাপাশি ওঁর মতো ভাল পুল শট মারতেও কাউকে দেখিনি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সহজে হারানো গেলেও ভারতের সব কিছুই যে ভাল গিয়েছে, তা বলা যাবে না। যশপ্রীত বুমরা, ভুবনেশ্বর কুমারকে ছাড়া ভারতের পেস আক্রমণকে কিন্তু সাদামাঠা দেখিয়েছে। বিশেষ করে শিমরন হেটমায়ারের (৭৮ বলে ১০৬) বিরুদ্ধে। ভারতের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরিটা করে গায়ানার এই ব্যাটসম্যান কিন্তু আইপিএলে নিজের দর বাড়িয়ে রাখলেন বলেই আমার মনে হয়।
ভারতের সেরা বোলার অবশ্যই যুজবেন্দ্র চহাল। আর মহম্মদ শামিকে দেখে আমি হতাশই হলাম। ওঁর মধ্যে ধারাবাহিকতার অভাব স্পষ্ট। এ দিন ১০ ওভারে ৮১ রান দিলেন। উমেশ যাদব বা খলিল আহমেদও সে ভাবে দাগ কাটতে পারেননি। ডেথ ওভারের সময় বুমরার অভাবটা ভাল মতো টের পাওয়া গিয়েছে।
কোহালিদের কথায়, বিশ্বকাপের মহড়া শুরু হয়ে গিয়েছে এই ম্যাচ থেকে। তা যদি হয়, তবে পেসারদের রিজার্ভ বেঞ্চ নিয়ে একটু উদ্বেগ থেকে যাবে। বিশ্বকাপে ভুবনেশ্বর-বুমরার সঙ্গী তৃতীয় পেসার কে হবেন, তা এখনও পরিষ্কার হল না। এ দিন যে তিন জনকে দেখলাম, তাঁদের আরও অনেক ভাল বল করতে হবে বিশ্বকাপের প্রথম এগারোয় আসতে হলে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy