Advertisement
E-Paper

ভয় পাওয়ার প্রশ্ন নেই, প্রোদুনোভা ছাড়ছি না

শনিবার ভোর। রীতিমতো উৎসবের পরিবেশ ইন্দিরা গাঁধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। অধীর অপেক্ষায় প্রচুর মানুষ। তিনি কখন আসবেন? দীপা কর্মকার কখন আসবেন? ভারতীয় জিমন্যাস্টিক্সের নতুন তারা এ দিন সকালেই রিও থেকে দেশে ফিরলেন। সঙ্গে কোচ বিশ্বেশ্বর নন্দী।

কোচের সঙ্গে দীপা। শনিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই

কোচের সঙ্গে দীপা। শনিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৬ ০৩:২৬
Share
Save

শনিবার ভোর। রীতিমতো উৎসবের পরিবেশ ইন্দিরা গাঁধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। অধীর অপেক্ষায় প্রচুর মানুষ। তিনি কখন আসবেন? দীপা কর্মকার কখন আসবেন? ভারতীয় জিমন্যাস্টিক্সের নতুন তারা এ দিন সকালেই রিও থেকে দেশে ফিরলেন। সঙ্গে কোচ বিশ্বেশ্বর নন্দী। ছাত্রীর মতো যিনি এখন দেশের সাত থেকে সত্তরের কাছে প্রবল ভাবে পরিচিত।

বিমানবন্দরে পা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে গেল ত্রিপুরার মেয়েকে নিয়ে। মালা পরাতে চান সবাই। সবার আবদারই হাসিমুখে মেটালেন দীপা। কিছুক্ষণের মধ্যেই শুভেচ্ছার মালায় প্রায় ঢাকা পড়ে গেলেন। তবু এতটুকু বিরক্তি নেই। বরং হাসির আড়ালে উজ্জ্বল চোখ দুটো থেকে একটু পরেই ঠিকরে বেরোল প্রতিজ্ঞা। রিওতে পদক হয়নি। টোকিওতে পারতেই হবে।

‘‘আমার জন্য এত প্রার্থনা করেছেন সবাই। আমি আপ্লুত। সবাইকে ধন্যবাদ। অলিম্পিক্সে যা পারফর্ম করেছি তাতে আমি খুশি। আরও খুশি হতাম পদক নিয়ে ফিরতে পারলে। যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। নিশ্চয়ই চেষ্টা করব পরের বার অলিম্পিক্সে পদক জেতার,’’ দেশে পা রেখে বললেন দীপা।

খেলাধুলোয় দেশের সর্বোচ্চ সম্মান রাজীব গাঁধী খেলরত্ন পুরস্কারের জন্য তাঁর নাম মনোনীত হয়েছে। তবে নিজেরটা পরে। আগে কোচ বিশ্বেশ্বর নন্দীকে পুরস্কার জেতার জন্য এগিয়ে দিচ্ছেন বাঙালি কন্যা। যিনি দ্রোণাচার্য পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন। ‘‘কোচকে সবচেয়ে বেশি ধন্যবাদ দেব। খেলরত্ন পুরস্কারের জন্য আমার নাম মনোনীত হওয়া দারুণ ব্যাপার। তবে পুরস্কারটা অলিম্পিক্সে পদক জিতে যদি নিতে পারতাম আরও ভাল লাগত। আমার কাছে নিজের থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ কোচ বিশ্বেশ্বর নন্দীর দ্রোণাচার্য পুরস্কার জেতাটা। ১৬ বছর উনি আমার সঙ্গে আছেন। আমার থেকেও বেশি করে ওঁর পুরস্কারটা প্রাপ্য।’’

রিও যাওয়ার আগে কি তিনি আশা করেছিলেন পদকের এত কাছে যেতে পারবেন? ত্রিপুরার বাঙালির অকপট জবাব, ‘‘জানতাম সাত বা আটে শেষ করতে পারব। কিন্তু চার নম্বরে আসব ভাবিনি। খুব খুব খুশি।’’ ২২ অগস্ট দীপা আর তাঁর কোচকে সংবর্ধনা দেবে ত্রিপুরা সরকার।

তবে শুধু রিওর পারফরম্যান্সের জন্যই নয়, দীপা কর্মকার গোটা বিশ্বে এখন আরও পরিচিত নাম আরও একটা ব্যাপারের জন্য। বিপজ্জনক প্রোদুনোভা ভল্টের জন্য। জিমন্যাস্টিক্সে যে ভল্ট হাতে গোনা ক’য়েক জন দেন। রিওতে রেকর্ড সোনাজয়ী মার্কিন জিমন্যাস্ট সিমোন বাইলস পর্যন্ত মৃত্যুভয়ে যে ভল্ট দেননি। তবে সাহসী বাঙালি মেয়ে কিন্তু বলছেন, ভয় পাওয়ার প্রশ্ন নেই, প্রোদুনোভা তিনি ছাড়বেন না। ‘‘প্রোদুনোভা ভল্ট আমি চালিয়ে যাব। এই মুহূর্তে অন্য কোনও ভল্ট মাথায় নেই। আমার মনে হয় না এটা মৃত্যুভল্ট। ঠিকঠাক প্র্যাকটিস করতে পারলে সব কিছুই সহজ হয়ে যায়।’’

প্রোদুনোভা যে তাঁকে রিওর ফাইনালে নামার আগেই কতটা বিখ্যাত করে তুলেছিল সেই অভিজ্ঞতাও জানালেন ভারতীয় জিমন্যাস্টিক্সের সোনার মেয়ে। ‘‘জানেন কেউ কেউ ডাকছিল ‘প্রোদুনোভা গার্ল’ বলে। অনেকে আবার বলছিল, ‘দীপা প্রোদুনোভা’। প্রচুর মানুষ ফাইনালে আমার হয়ে গলা ফাটাচ্ছিলেন। তখন মনে হচ্ছিল প্রোদুনোভা ভল্টটা বেছে নিয়ে ভুল করিনি।’’

তবে অলিম্পিক্সের পারফরম্যান্স যতই তাঁকে উঁচুতে তুলে আনুক না কেন, মাটি থেকে পা যে সরছে না, সেটাও স্পষ্ট দীপার কথায়। ‘‘আমার জীবন একই রকম রয়েছে। এখনও আমি এক জন জিমন্যাস্টই। তবে একটা ব্যাপার দারুণ লাগছে যে আমার জন্য এখন দেশে জিমন্যাস্টিক্স নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে।’’

রিওতে দীপার জিমন্যাস্টিক্সে কোনও সতীর্থ ছিল না। আর কেউ দেশ থেকে যোগ্যতাই যে পাননি। এক এক সময় দীপা আর বিশ্বেশ্বর নন্দীকে তাই দেখে মনে হচ্ছিল বিচ্ছিন্ন দ্বীপের বাসিন্দা। তবে ছবিটা ২০২০-তে বদলে যেতে পারে বলে আশাবাদী দীপার কোচ। ‘‘চিন আমাদের থেকে অনেক এগিয়ে শুরু করেছে। ২০০৮ অলিম্পিক্সে ওরা আটটা পদক জিতেছিল। এ বার কিন্তু ভল্টের ফাইনালে মাত্র এক জন চিনা জিমন্যাস্টই উঠতে পেরেছিল।’’ চিনের সঙ্গে তুলনায় ভারতের জন্য আরও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে বলে মনে করছেন তিনি। ‘‘আশা করছি দীপাকে দেখে ২০২০ অলিম্পিক্সে আমাদের আরও ২-৩ জন মেয়ে জিমন্যাস্ট উঠে আসবে। তবে তার জন্য আমাদের অনেক দূর যেতে হবে।’’

পথ হয়তো সত্যিই অনেকটা বাকি। তবে একটা কথা বলাই যায়। সেই পথের পথিকরা এখন খোঁজ পেয়ে গিয়েছে এক ধ্রুবতারার।

Dipa Karmakar Rio Olympics Bishweswar Nandi

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}