মোহনবাগান-০
মুম্বই এফসি-০
কুপারেজ ফুটবল স্টেডিয়ামের উল্টো দিকে মুম্বইয়ের প্রশাসনিক ভবন। যার গেটের বাইরে একটা সাইন বোর্ডে লেখা ‘সাইলেন্ট জোন’।
বুধবার রাতে অনায়াসে যেটাকে মোহনবাগান জোন বলা যেত!
অত্যুক্তি নয়। কোচ সঞ্জয় সেনকে দেখুন, বুঝে যাবেন। গলার কাতরানি শুনলে কে বুঝবে তিনি হারেননি, ম্যাচটা আজ ড্র হয়েছে। গেটওয়ে অব ইন্ডিয়া সংলগ্ন মোহনাগান টিম হোটেল দেখুন, তা হলেও বুঝে যাবেন। আরব সাগর পারের ও রকম ঝলমলে একটা এলাকা। সব সময় হই-হুল্লোড়, জমজমাট। অথচ গেটওয়ে অব ইন্ডিয়ার সংলগ্ন ‘সি প্যালেস’ নামের যে হোটেলে এখন বাগানের বসবাস, রাতে গিয়ে মনে হল স্বপ্নপুরীর মধ্যে এক টুকরো যেন শ্মশানপুরী।
স্বাভাবিক। আগের ম্যাচে বেঙ্গালুরু হেরে যে সুযোগ আচমকা পেয়েছিলেন বাগান কোচ, তা তো কাজে লাগানো গেল না। বরং পয়েন্ট নষ্ট করে টিম আবার দাঁড়িয়ে গেল স্টার্টিং পয়েন্টে, আবার সেই শূন্য থেকে শুরু। সঞ্জয়কে ম্যাচ শেষে বিলাপ করতে শোনা গেল, ‘‘খুব হতাশ লাগছে। তিন পয়েন্ট নেওয়া উচিত ছিল। এখন বেঙ্গালুরু ম্যাচটা ডু অর ডাই হয়ে গেল।’’ ঠিকই। আই লিগে বাগানকে বেঁচে থাকতে হলে এখন বেঙ্গালুরুতে গিয়ে বেঙ্গালুরুকে তো মারতেই হবে।
অতি বড় বাগান সমর্থকও জানেন যা খুব সহজ নয়। বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়াল তো আত্মবিশ্বাস। এই ম্যাচের পর যা তলানিতে চলে গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। সঞ্জয় সেনের ঝুঁকি নেই, জয়ও নেই। গোলের দরজা খুলছে না দেখেও তিনি ফর্মেশন বদলালেন না। বরং ৪-৩-২-১ ছকে একা স্ট্রাইকার গ্লেনকেই রেখে দিলেন সারাক্ষণ। হয়তো গোল করার চেয়ে বাগান কোচকে তাড়া করছিল গোল খাওয়ার আতঙ্ক।
বুধবারের পারফরম্যান্স দেখে আশঙ্কায় হার্টবিট বরং আরও বাড়তে পারে। তুল্যমূল্য শক্তিবিচারে বেশ কমা এক প্রতিপক্ষ, যাদের মাত্র তিনটে বিদেশি এবং গোল করার লোক মেরেকেটে একজনও নয় এবং সবচেয়ে বড় যারা কি না ম্যাচটা জিততেই নামেনি এক পয়েন্টেই ডগমগ— তাদের বিরুদ্ধে কি না নব্বই মিনিটে একটা গোল তুলতে পারলেন না সনি নর্ডি, কর্নেল গ্লেনরা! সনি নর্ডি পরে ঠিকই বলছিলেন যে, আমরা খেলতেই পারিনি। এমন নয় যে তীব্র গরমে ভুগতে হয়েছে ফুটবলারদের। দিব্যি ফুরফুরে হাওয়া দিয়েছে সারাক্ষণ। মুম্বই এফসি রক্ষণেও কোনও পাওলো মালদিনি দাঁড়িয়ে ছিল না যে দাঁত ফোটানো সম্ভব নয়। কিন্তু ম্যাচ শুরুর দশ মিনিটের মধ্যে যদি একটা টিম স্রেফ দাঁড়িয়ে যায়, তা হলে আর কী করা যাবে? তখন অজ্ঞাতকুলশীল আশুতোষ মেহতাকেও মালদিনিই মনে হবে! কে কোথায় খেলবে, কার কী ভূমিকা— বাগান ফুটবলারদের দেখে মনে হয়নি নব্বই মিনিটেও তাঁরা কেউ সেটা বুঝেছেন বলে। কুপারেজের ছোট মাঠ নিয়ে মঙ্গলবার প্র্যাকটিসে লুসিয়ানো সাব্রোসা বলছিলেন যে, উইং ধরে না দৌড়ে দরকার ছোট ছোট পাসে ওয়াল খেলে এগিয়ে যাওয়া। এ দিন দেখা গেল, সেটা হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু করছে মুম্বই। মোহনবাগান নয়। বরং তারা করল উল্টোটা। সনি সেই উইং ধরে দৌড়তে গেলেন এবং জায়গা না পেয়ে আটকে গেলেন। দুই মুম্বই স্টপারের মধ্যে গ্লেনের যা হাল হল, তাতে তাঁকে কর্নেল বলে ভাবতে মোটেই ইচ্ছে করবে না। সারক্ষণ চলল গগনে বলের বিরক্তিকর স্ট্র্যাটেজি আর লং পাসের বন্যা। গোটা ম্যাচে বাগান সমর্থকদের মনে রাখার মতো ঘটনা— সত্তর মিনিটে কাতসুমির মাইনাস থেকে সনির শট পোস্টে লেগে বেরিয়ে যাওয়া। সঙ্গে ফাউ হিসেবে থাকল গ্যালারির টিপ্পনী— ‘রসগুল্লা পে ভারী কওন, বড়া পাও, বড়া পাও।’
ম্যাচ শেষে নর্ডিকে দেখা গেল, হাঁটু মুড়ে বসে। পাশ দিয়ে আরাতা ইজুমি হাততালি দিতে দিতে ছুটছেন। বিষণ্ণ দৃষ্টিতে যা অসহায় ভাবে দেখে চলেছেন গ্লেন-কাতসুমিরা। সব দেখলে বেশ খারাপই লাগবে। আসলে ফেব্রুয়ারির মুম্বই-ই বোধহয় বাংলার জন্য নয়। গ্রুপ পর্বে একের পর এক প্রতিপক্ষকে দুরমুশ করে মনোজ তিওয়ারির বাংলা এখানে রঞ্জি ট্রফির কোয়ার্টার ফাইনাল খেলতে এল। এগনো দূরে থাক, কপালে জুটল প্রায় সাড়ে তিনশো রানে হারের চাবুক। সঞ্জয় সেন ভেবে এসেছিলেন, দু’টো অ্যাওয়ে ম্যাচ থেকে চার পয়েন্ট তুললেই চলবে। মুম্বই থেকে তিন, বেঙ্গালুরু থেকে এক। সবচেয়ে বড়, ভেবেছিলেন চিনে ছ’গোল খাওয়ার জ্বালা জুড়োবেন মুম্বইয়ে। ম্যাচটা জিতে। মুম্বইকে মুম্বইয়ের মাঠে চূর্ণ করে।
কে জানত, চিনের দুঃখের নদী হোয়াং হো আরব সাগরের উপর দিয়েও বইতে শুরু করবে!
মোহনবাগান: দেবজিৎ, কিংশুক, ধনচন্দ্র, রাজু, লুসিয়ানো, প্রণয়, বিক্রমজিৎ (শৌভিক), কাতসুমি, সনি, জেজে, গ্লেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy