Advertisement
E-Paper

এক অলিম্পিয়ানের পালিয়ে যাওয়া আর বেঁচে থাকার কাহিনি

একটা সময় খুবই সম্ভাবনাময় বক্সার হিসেবে উঠে আসছিল তাঁর নাম। ১৯৯৪-এর হিরোশিমা এশিয়াডে ৮১ কেজি বিভাগে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন লাখা। পাঁচবারের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৭ ২০:২৮
লাখা সিংহ। ছবি: ফেসবুক।

লাখা সিংহ। ছবি: ফেসবুক।

ভারতীয় সেনাদলের হয়ে আমেরিকায় নেমে, বিমানবন্দর থেকেই পালিয়ে গিয়েছিলেন। স্বপ্ন দেখেছিলেন, সে দেশে পেশাদার বক্সিংয়ে ঢুকে নতুন করে কেরিয়ার গড়বেন। আয় করবেন প্রচুর। সেই ভুল বা অপরাধের ‘প্রায়শ্চিত্ত’ চলছে বহু ধাক্কা খেয়ে শেষমেশ দেশে ফেরার পরও। প্রাক্তন অলিম্পিয়ান বক্সার, এশিয়াডে পদক জয়ী লাখা সিংহ এখন লুধিয়ানার রাস্তায় ট্যাক্সিড্রাইভারি করে কোনও রকমে সংসার চালাচ্ছেন।

অথচ একটা সময় খুবই সম্ভাবনাময় বক্সার হিসেবে উঠে আসছিল তাঁর নাম। ১৯৯৪-এর হিরোশিমা এশিয়াডে ৮১ কেজি বিভাগে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন লাখা। পাঁচবারের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন। এশিয়ান বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপে পর পর তিন বছর পদকজয়ী। লাখা সিংহকে নিয়ে সেই সময় প্রত্যাশা ছিল তুঙ্গে। ন’য়ের দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত তিনিই ছিলেন ভারতীয় বক্সিংয়ের সেরা বাজি। ভাবা হয়েছিল ১৯৯৬-এর আটলান্টা অলিম্পিকে দেশকে বড় সাফল্য এনে দেবেন। যদিও শেষ পর্যন্ত তেমনটা হয়নি। থেমেছিলেন ১৭ নম্বরে।

তবু সব মিলিয়ে জীবনটা চলছিল খারাপ নয়। ১৯৮৪তে ১৯ বছর বয়সেই ভারতীয় সেনায় যোগ দিয়েছিলেন লাখা। ১৯৯৬ অলিম্পিকে ব্যর্থতার পর, ১৯৯৮-এ ওয়ার্ল্ড মিলিটারি বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিতে টেক্সাসে গিয়েছিলেন। দলে ছিলেন দেবেন্দ্র থাপা নামের আর এক জন। টেক্সাস বিমানবন্দরে নামার পর, লাখা আর দেবেন্দ্রকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে সেনাবাহিনী তাঁদের ‘পলাতক’ ঘোষণা করে।

আরও পড়ুন

দশে দশ করে জয়পুর জয় করলেন বিজেন্দ্র

পালিয়েই গিয়েছিলেন দু’জন। সে কথা স্বীকারও করছেন ৫২ বছর বয়সী লাখা। বলেন, ‘‘এটা সত্যি আমরা বিমানবন্দর থেকেই চলে গিয়েছিলাম। থাপা আমাকে বলেছিল ও কোনও বন্ধুর সঙ্গে দেখা করাবে। এর পর গাড়িতেই আমরা মদ্যপান করি। কিন্তু তার পর আমার আর থাপার সঙ্গে কোনও দিন দেখা হয়নি। যখন ঘুম ভাঙে তখন দেখি একটি ঘরে আমি বন্দি।’’

দেবেন্দ্র থাপা কিন্তু আমেরিকায় পেশাদার বক্সিংয়ে ঢুকে পড়েন। আর লাখার জীবনে নেমে আসে বিপর্যয়। তাঁর দাবি, প্রায় এক মাস একটি ঘরে বন্দি অবস্থায় ছিলেন। তার পর সেই অ্যাপার্টমেন্ট থেকে তাঁকে বের করে দেওয়া হয়। লাখা সিংহর কথায়, সেটাই ছিল তাঁর জীবনের কঠিনতম দিন। কোনও টাকা ছিল না। ভিসার সময় পেরিয়ে গিয়েছিল। এবং ওই জায়গাটা সম্পর্কেও কোনও ধারণা ছিল না তাঁর।

সেই সময় কিছু এশিয়ান মানুষ তাঁকে সাহায্য করেছিলেন ক্যালিফোর্নিয়া পৌঁছতে। সেখানে গিয়ে গ্যাস স্টেশন, রেস্তরাঁ, কনস্ট্রাকশন সাইটে কাজ করেছেন। আর ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে ভয়ে কাটিয়েছেন আট আটটা বছর। এ সময় ডলার জমাতে শুরু করেন দেশে ফেরার টিকিট কাটার জন্য। শেষ পর্যন্ত ২০০৬ সালে ভারতীয় দূতাবাসের সাহায্যে দেশে ফিরেছিলেন লাখা।

দেবেন্দ্র থাপা। ছবি: ইউটিউব থেকে।

তার পর শুরু হল বেঁচে থাকার আর এক কঠিন লড়াই। লুধিয়ানার হালওয়ারা গ্রামে থাকেন। অন্যের ট্যাক্সি চালান। মাস রোজগার মেরেকেটে আট হাজার টাকা। সংসার চালাতে হয় রীতিমতো কষ্টেসৃষ্টে। বন্ধক দিতে হয়েছে পর পর দু’বারের এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ব্রোঞ্জ ও রুপোর পদক।

টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে লাখা বলেন, ‘‘আমি বক্সিং ফেডারেশনকে অনেক চিঠি লিখেছি। একই ভাবে পঞ্জাব সরকারকেও জানিয়েছি আমার পরিস্থিতির কথা। কিন্তু কখনও কোনও উত্তর পাইনি।’’ আফসোস করে বলেন, ‘‘কেউ আমার কথা শুনতে চায় না।’’

ভুল করেছেন, মানতে দ্বিধা নেই লাখার। কিন্তু চুরি, ডাকাতি, খুন তো করেননি! দেশের জন্যও তো লড়েছেন এক সময়। আন্তর্জাতিক বক্সিং মঞ্চে দেশকে সম্মান এনে দিয়েছেন। পদক এনেছেন। তার কি কোনও মূল্যই নেই? হতাশ চোখে এই প্রশ্নই করে চলেন লাখা সিংহ।

Boxing Lakha Singh Debendra Thapa লাখা সিংহ দেবেন্দ্র থাপা
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy