(বাঁ দিকে) সমাপ্তি অনুষ্ঠানে স্টেডিয়ামের ছাদ থেকে ঝাঁপ দিচ্ছেন টম ক্রুজ়। ‘মিশন ইমপসিবল: ফলআউট’ সিনেমায় (ডান দিকে)। ছবি: রয়টার্স।
অলিম্পিক্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মতো সমাপ্তি অনুষ্ঠানেও প্যারিস ব্যতিক্রম হয়ে থাকল। চমক ছিল টম ক্রুজ়। হলিউড অভিনেতাকে হাজির করিয়ে পরের লস অ্যাঞ্জেলস অলিম্পিক্সকে বাঁহাতে অভিবাদন করে গেল প্যারিস।
প্যারিস অলিম্পিক্সের উদ্বোধন হয়েছিল গোটা প্যারিস জুড়ে। এই প্রথম কোনও একটি স্টেডিয়াম বা ঘেরা জায়গায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান না করে গোটা শহরজুড়ে অনুষ্ঠান হয়েছিল। সেখানে স্টেডিয়ামের বদলে বিভিন্ন দেশের ক্রীড়াবিদেরা মার্চপাস্ট করেছিলেন স্যেন নদীতে নৌকো করে। আইফেল টাওয়ার এবং স্যেন নদী-সহ বিভিন্ন জায়গায় পারফরম্যান্স হয়েছিল। সমাপ্তি অনুষ্ঠান পুরোটাই হয়েছে ইউরোপের অন্যতম বড় স্টেডিয়াম স্তাদ দ্য ফ্রাঁসে। ৭০ হাজার দর্শক তা দেখতে পেয়েছেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মতো সমাপ্তি অনুষ্ঠানেও টেক্কা দিল ফ্রান্স। উঠে এল হলিউড। কারণ সেটিই লস অ্যাঞ্জেলেস তথা ক্যালিফোর্নিয়ার পরিচিতি।
হলিউডে বিভিন্ন অ্যাকশন-ধর্মী সিনেমায় অভিনয় করেছেন ক্রুজ়। তার মধ্যে সবার আগে থাকবে তাঁর ‘টপ গান’ এবং ‘মিশন ইমপসিবল’। সেই সিরিজ়ে বিভিন্ন সিনেমায় ক্রুজ়ের যে সব ‘স্টান্ট’ দেখা গিয়েছে, তা-ই উঠে এল রবিবার রাতের স্তাদ দ্য ফ্রাঁসে। ক্রুজ়কে বেছে নেওয়া হয়েছিল ‘শো-স্টপার’ হিসাবে।
রবিবার সমাপ্তি অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে ক্রুজ়ের আগমন ঘটল পায়ে হেঁটে নয়, তিনি মঞ্চে এলেন স্তাদ দ্য ফ্রাঁসের ছাদ থেকে ঝাঁপ মেরে। ‘মিশন ইমপসিবল’ সিরিজ়ের ‘ফলআউট’ সিনেমায় ক্রুজ়কে দেখা গিয়েছিল ২৫ হাজার ফুট উচ্চতায় উড়তে থাকা একটি বিমান থেকে ঝাঁপ মারতে। রবিবার তাঁর এই ‘স্টান্ট’ যেন সিনেমার সেই মুহূর্তকেই আবার ফিরিয়ে দিল।
মঞ্চে নামার পরেই ক্রুজ়কে স্বাগত জানান লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র কারেন বাস। আগেই তিনি অলিম্পিক্সের পতাকা পেয়েছিলেন প্যারিসের মেয়র আনে হিদালগোর কাছ থেকে। পরম্পরা অনুযায়ী হিদালগো ব্যাটন তথা পতাকা তুলে দিয়েছিলেন উত্তরাধিকারী লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়রের হাতে। মেয়র সেই পতাকা দেন জিমন্যাস্ট সিমোন বাইলসের হাতে। সেই বাইলসের থেকেই পতাকা নিয়ে একটি মোটরবাইকে চেপে আবার ‘স্টান্ট’ দেখিয়ে স্টেডিয়াম ঘুরে দরজা দিয়ে বেরিয়ে যান ক্রুজ়।
এখানেও রয়েছে ‘ফলআউট’ সিনেমার মুহূর্ত। সেই সিনেমায় ক্রুজ়কে দেখা গিয়েছিল প্যারিসের ছোট ছোট গতিতে দ্রুতগতিতে মোটরবাইক চালাতে। যে রাস্তায় চলাফেরা করাই কঠিন, সেখানে ওই গতিতে ক্রুজ়কে মোটরবাইক চালাতে দেখা যায়। সিনেপ্রেমীরা বলে থাকেন, ক্রুজ়ের সিনেমায় ‘অস্বাভাবিক’ বলে কোনও বিষয় নেই। সেটাই দেখা গিয়েছে সমাপ্তি অনুষ্ঠানে। ঘটনাচক্রে, লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিক্সের অন্যতম মুখ ক্রুজ়ই।
এখানেই শেষ নয়, একটি ভিডিয়োও আগে থেকে শ্যুট করিয়ে রাখা হয়েছিল। সেখানেও ক্রুজ়ের বিভিন্ন ‘স্টান্ট’দেখা গিয়েছে। একটি রাস্তায় দ্রুত গতিতে বাইক চালিয়েছেন। তার মধ্যে একটি ‘স্টান্ট’-এ তিনি বিমান থেকে প্যারাশুটে ঝাঁপ মেরে সোজা মাউন্ট লি-তে গিয়ে অবতরণ করছেন, যেখানে ইংরেজি অক্ষরে ‘হলিউড’ কথাটি লেখা হয়েছে। দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে এটি বেশ জনপ্রিয়। হলিউডের সাংস্কৃতিক চিহ্ন বলা হয় একে। সেখানেই শেষ হয় এই ভিডিয়ো।
একা ক্রুজ়ই নন, অলিম্পিক্সের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে পারফর্ম করেছেন আরও অনেকে। তার মধ্যে ছিল ‘গোল্ডেন ভয়েজার’। অলিম্পিক্সের ‘রিং’গুলিকে মাঝ আকাশে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পাঁচটি ‘রিং’ পাঁচটি মহাদেশের প্রতীক। সেই পারফরম্যান্স চলাকালীনই ফ্রান্সের পিয়ানিস্ট তথা অপেরা গায়ক বেঞ্জামিন বার্নহাইম গাইলেন ‘হিম টু অ্যাপোলো’। সুইৎজ়ারল্যান্ডের অ্যালেন রোশে শূন্যে ভেসে থাকা একটি পিয়ানো বাজিয়ে সঙ্গে দিলেন তাঁকে।
ফ্রান্সের রক ব্যান্ড ‘ফিনিক্স’ একের পর এক গান উপহার দিল। ড্রাম এবং ইলেকট্রিক গিটারের মূর্ছনায় মজে গেলেন স্তাদ দ্য ফ্রাঁসের ৭০ হাজার দর্শক। গানের মাধ্যমে ক্রীড়াবিদদের স্বতঃস্ফূর্ততা এবং ইচ্ছাশক্তিকে তুলে ধরা হল। ‘ফিনিক্স’-এর সঙ্গে গাইলেন আর এক ফরাসি শিল্পী কাভিনস্কি। গেয়েছে রক ব্যান্ড ‘রেড হট চিলি পিপার্স’। তাদের গান ‘ক্যালিফোর্নিকেশন’ ক্যালিফোর্নিয়া তথা হলিউডকে ভিত্তি করেই লেখা।
১৭ দিনের অলিম্পিক্স শেষে ফ্রান্স সুক্ষ্ম ছোঁয়ায় লস অ্যাঞ্জেলসকে হাল্কা স্বাগত জানিয়ে গেল।
সব পারফরম্যান্স শেষ হওয়ার পর প্যারিস অলিম্পিক্সের আয়োজক কমিটির প্রেসিডেন্ট টনি এস্ত্রাঙ্গুয়েট মঞ্চে ওঠেন। ডেকে নেন প্রতিটি মহাদেশের সফলতম ক্রীড়াবিদ এবং উদ্বাস্তু অলিম্পিক্স দলের এক প্রতিনিধিকে। ছিলেন আন্তর্জাতিক অলিম্পিক্স সংস্থার প্রধান টমাস বাখও। সমাপ্তি অনুষ্ঠানের শেষ দিকে ফ্রান্সের সাঁতারু লিয়ঁ মাঁখচা অলিম্পিক্সের মশাল নিয়ে স্টেডিয়ামে আসেন। বাখ ঘোষণা করেন, অলিম্পিক্স সমাপ্ত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy