Advertisement
E-Paper

তীব্র জ্বালা পেটের, বাঁশের ধনুক নিয়েই ফেরার লড়াই হারিয়ে যাওয়া তিরন্দাজের

তীরন্দাজ হওয়ার স্বপ্নে বাদ সেধেছে বাস্তব। উপকরণের দাম মারাত্মক। প্রবল দারিদ্র্যকে হারিয়ে ফেরার কঠিন লড়াইয়ে পিনাকী উপাধ্যায়ের সঙ্গী নিজের ওপর বিশ্বাস।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৮ ১৩:০০
লক্ষ্যভেদের কঠিন লড়াইয়ে পিনাকী। নিজস্ব চিত্র।

লক্ষ্যভেদের কঠিন লড়াইয়ে পিনাকী। নিজস্ব চিত্র।

হতে চেয়েছিলেন তীরন্দাজ। নামতে চেয়েছিলেন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায়। আনতে চেয়েছিলেন পদক। করতে চেয়েছিলেন দেশের মুখ উজ্জ্বল। ভাবাই যায়নি, জীবনের গতিপথ আচমকাই যাবে পালটে। দমকা হাওয়ায় উড়ে যাবে যাবতীয় স্বপ্ন, আশা আর আকাঙ্খা। তীরন্দাজির লক্ষ্যভেদ নয়, জীবন চালানোই দুষ্কর হয়ে উঠবে বছর ত্রিশের পিনাকী উপাধ্যায়ের!

সেটা ২০০১। উদয়পুরে সাব-জুনিয়র জাতীয় তিরন্দাজিতে দলগত ভাবে তৃতীয় হয়েছিল বাংলা। দলে ছিলেন রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়। ছিলেন বছর তেরোর পিনাকীও। বাবা নারায়ণ উপাধ্যায় নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করতেন উত্তর কলকাতার কাশীপুরের কাছে। ওখানের আর্চারি ক্লাবে ভর্তি করে দিয়েছিলেন সেখানে । সেটা ২০০০ সালের অগস্ট। সেই থেকে শুরু সাধনা। পরের বছর রাজস্থানে প্রতিভার স্বীকৃতিও মিলল। এর পর সল্টলেকের সাই হয়ে উঠল ঠিকানা।

জীবন এগোচ্ছিল নির্দিষ্ট লক্ষ্যে। নানা প্রতিযোগিতায় আসছিল সাফল্য। জন্ম নিচ্ছিল আশা। দু’চোখে স্বপ্নের মায়াকাজল। কে জানত, ছন্দপতন ঘটবে দ্রুত। স্বপ্নগুলো খানখান হয়ে পড়বে বাস্তবের রুক্ষ কঠোর জমিতে!

২০০৭ সালের জুলাইয়ের শেষে রাজ্য তিরন্দাজিতে সিনিয়র বিভাগে নামা, তৃতীয় হওয়া। সেই শেষ। তারপর ফাইবার গ্লাসের ধনুক আর সঙ্গী হয়নি। ২০০৭ সালের ডিসেম্বের নেপালে চলে গেলেন বাবা। ওখানেরই তাঁর পুরনো বাড়ি। প্রবল আর্থিক সমস্যায় সাইয়ে অনিয়মিত হয়ে পড়লেন পিনাকী। শুরু হল কাজের খোঁজ।

ফাইবার গ্লাসের ধনুক আর সঙ্গী নয় পিনাকীর। নিজস্ব চিত্র।

কয়েক মাস পর, ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বের নেপালেই মৃত্যু ঘটল বাবার। সাইয়ের সঙ্গে যোগসূত্র হল ক্ষীণতর। ফাইবারের ধনুকের সঙ্গে বন্ধুত্বে পড়ল মরচে। কিন্তু তিরন্দাজ হওয়ার স্বপ্নের তো বিসর্জন হয়নি। অগত্যা, বাঁশের ধনুকে ফের লড়াই শুরু। ২০০৮ সালে জুনিয়র রাজ্য চ্যাম্পিয়নশিপেবাঁশের ধনুকেই এল পদক। কিন্তু, তা দেওয়া হল না। এর আগে ফাইবারের ধনুকে লড়েছেন, তাই নিয়ম হয়ে উঠল প্রতিবন্ধক। কয়েক বছর পর, ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে আরও একবার বাঁশের ধনুকে লক্ষ্যভেদের চেষ্টা করলেন। রাজ্য ক্রীড়ায় পদক পেলেনও। কিন্তু ফের নিয়মের গেরোয় আটকে গেলেন।

ভাগ্য বিড়ম্বনার কালো মেঘ এখনও জড়িয়ে রয়েছে। স্থায়ী চাকরি নেই। তিরন্দাজিকে আকঁড়ে ধরে বাঁচার চেষ্টা রয়েছে বটে, কিন্তু উপায় নেই। উপকরণের খরচা জোগাবেন কীভাবে? মাঝে বন্ধুদের দরজায় গিয়েছিলেন। কিন্তু তিরন্দাজির সঙ্গে যুক্তরা কেউ পাশে দাঁড়াননি। উলটে নিরুত্সাহ করেছেন। বলেছেন, এসব করে আর কী করবি। অন্য কিছু বরং দেখ।

পিনাকী মানতে চাননি। মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে লড়ছেন। কিন্তু, খুচখাচ কাজ করে কি আর বাড়ি ভাড়া মিটিয়ে, দুটো পেট চালিয়ে বড় স্বপ্ন দেখা সম্ভব? তাঁর কথায়, “যদি পরিকাঠামো পাই, একটু সাহায্য পাই, তবে আবার অনুশীলন শুরু করে দেব। বিশ্বাস রয়েছে নিজের প্রতি যে সাফল্য পাবই। বাকিরা যতই এগিয়ে যাক, ঠিক ধরে ফেলতে পারব। কিন্তু, উপকরণের যা দাম, তাতে নিজের পক্ষে এটা করা অসম্ভব।” ঘরভর্তি শংসাপত্র, অজস্র মেডেল তাই মাঝে মাঝেই উপহার দেয় হতাশা। মন ভরে ওঠে বিতৃষ্ণায়। টক্কর দেওয়া দূর অস্ত, আধুনিক অর্জুনের যে লক্ষ্যভেদের উপকরণই হাতের কাছে নেই!

আরও পড়ুন: কোন দেশের ক্রিকেট অধিনায়করা কত বেতন পান জানেন?

আরও পড়ুন: লর্ডস টেস্টের পুনরাবৃত্তি হতে দিলেন না কোহালিরা​

Archer Archery
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy